বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪
বাংলাদেশে দুনীতির মাত্রা বেড়েছে : টিআই
Home Page » জাতীয় » বাংলাদেশে দুনীতির মাত্রা বেড়েছে : টিআইবঙ্গ-নিউজ:ত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা আরো বেড়েছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে এ বছর বিশ্বের ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে।আজ বুধবার সিপিআই ২০১৪-এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একযোগে বৈশ্বিক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।১৭৫টি দেশে জরিপ চালিয়ে বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে টিআই। বাংলাদেশ এক বছরের ব্যবধানে ৯ ধাপ পিছিয়েছে। টিআই-এর দুর্নীতি সূচকে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৫। গতবছর বাংলাদেশ পেয়েছিল ২৭। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ১৪তম হয়েছে বাংলাদেশ। যৌথভাবে এবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। আর কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ডেনমার্ক শীর্ষে।বাংলাদেশের সাথে একই স্কোর প্রাপ্ত আরো অন্য চারটি দেশ হলো গিনি, লাওস, কেনিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি।টিআই-এর মতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে আফগানিস্থান। দেশটি তালিকায় আছে ১৭২ নম্বরে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১০০ নম্বরের মধ্যে তারা পেয়েছে ১২। ভারত ১৭৫টি দেশের মধ্যে ৮৫ নম্বরে। পাকিস্তান ১২৬ নম্বরে। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র ১৭ ও যুক্তরাজ্য ১৪ নম্বরে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান ও ড. এটিএম শামসুল হুদা এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিআই প্রকাশিত সিপিআই ২০১৪ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান ২০১৩ সালের তুলনায় উভয় ক্ষেত্রেই হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া, বৈশ্বিক গড় স্কোরের তুলনায় বাংলাদেশের ২০১৪ সালের স্কোর অনেক কম হওয়ায় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হওয়ায় দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক।এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরো কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, এ বছর বাংলাদেশ ০-১০০ স্কেলে ২৫ স্কোর পেয়ে ১৭৫টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে ১৪৫তম এবং নিম্নক্রম অনুসারে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৩ সালের তুলনায় অবস্থানের নিম্নক্রম অনুযায়ী দুই ধাপ নিচে নেমেছে এবং গত বছরের ২৭ স্কোরের চেয়ে দুই স্কোর কম পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ এবছর নয় ধাপ নিচে নেমে গেছে।ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বনিম্নে অবস্থান করছে এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দুই পয়েন্ট কম পাওয়ায় এবং তা বৈশ্বিক গড় ৪৩-এর চেয়ে অনেক কম হওয়ায় সার্বিকভাবে দুর্নীতির বৈশ্বিক ধারণা সূচকে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৯২টি দেশের স্কোর বৃদ্ধি পেয়েছে, ৪৭টি দেশ পূর্বের স্কোর ধরে রেখেছে। অন্যদিকে যে ৩৬টি দেশের স্কোরের অবনতি হয়েছে, দুঃখজনকভাবে সেই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন কারণে সিপিআই সূচকে এবছর ক্রমাবনতি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘাটতি, কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টান্তের অভাব, দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস, পদ্মাসেতু প্রকল্প, রেলওয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, হলমার্ক ও ডেসটিনি এবং সোনালী ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম, রানা প্লাজার ঘটনার ব্যাপারে শৈথিল্য, ক্ষমতাবানদের বৈধ আয়ের সাথে সামঞ্জস্যহীন সম্পদের বৃদ্ধি, খেলাপী ঋণের দৌরাত্ম্য, সংসদসহ সংশ্লিষ্ট জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা, নিয়োগ বাণিজ্যের রাজনীতিকীকরণ এবং ভূমি ও নদী-জলাশয় দখলের মহোৎসব।
তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুদককে অনেক সময়ই দেখা গেছে সরকারের এক প্রকার বি-টিমের ভূমিকা পালন করতে। এ প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে মনে করা হয়, বাংলাদেশ বা তার অধিবাসীরা দুর্নীতিগ্রস্ত। বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার এবং জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র জনগণ। আমরা সরকারের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। সেকারণে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। যেকোনো সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের দাবি উত্থাপনে সোচ্চার হওয়া। দুর্নীতি দূর করতে হলে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিপিআই নির্ণয়ে টিআইবি কোনো ভূমিকা পালন করে না। এমনকি টিআইবির গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআই-এ পাঠানো হয় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের মতই টিআইবি দুর্নীতির ধারণা সূচক স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র।
দুর্নীতির ধারনা সূচক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৪ সালে ৯২ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক। ৯১ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় স্থানে থাকা ফিনল্যান্ডের স্কোর ৮৯। ৮ স্কোর নিয়ে এ বছর তালিকার সর্বনি¤েœ অবস্থান করছে যৌথভাবে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। ১১ ও ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দেশ হিসেবে রয়েছে যথাক্রমে সুদান ও আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৭:০৬ ২৯২ বার পঠিত