শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৪

প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে মন্ত্রীর নতুন তত্ত্বে বিতর্ক

Home Page » জাতীয় » প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে মন্ত্রীর নতুন তত্ত্বে বিতর্ক
শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৪



nahid-final.jpgবঙ্গ-নিউজঃপ্রশ্নপত্র ফাঁস থামছেই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং কোমলমতি শিশুদের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষাব্যবস্থার নাজুক চিত্র ফুটে উঠেছে। সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য গণমাধ্যমের ওপর দায় চাপালেও এর মূল কারণ উদঘাটনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় স্বীকার না করে শিক্ষামন্ত্রী বরং নতুন তত্ত্ব প্রকাশ করে দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পাবলিক পরীার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রয়োজনে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুক বন্ধ করা হবে। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকবে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, কোনো বিরতি না দিয়ে টানা পরীা নেয়ার কথা।
মন্ত্রী এই ধরনের বক্তব্য দেয়ায় তার ওপর চটেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বন্ধ করার কথা বলায় ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও মন্ত্রীর ওপর ক্ষেপেছেন। মন্ত্রীকে নিয়ে হাস্যরসাত্মক ও ব্যঙ্গাত্মক নানা মন্তব্য লিখছেন তারা। এ দিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার না করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা ঠিকই স্বীকার করে নিয়েছেন।
গতকাল এক আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সরকার শিায় যুগান্তকারী সফলতা অর্জন করলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসে সেসব অর্জন অনেকটা ম্লান হতে চলেছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর বের হলে আমাদের শিা মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দিয়ে বলেÑ এটা গুজব, কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। জাফর ইকবালের মতো লোক প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ দেখাচ্ছেন। আর আমাদের শিামন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন হলে ফেসবুক বন্ধ করে দেবো। তার পরে হয়তো তিনি বলবেন টুইটার, মোবাইল, বিদ্যুৎ বন্ধ করার কথা। একদিন হয়তো তিনি বলবেন, শিা মন্ত্রণালয়ই বন্ধ করে দেবো। এটা কোনো সমাধন নয়। সুরঞ্জিত বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে প্রথমে সরকারকেই দোষ স্বীকার করে নিতে হবে। তারপর প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেছেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসÑ এটা তো ভয়ঙ্কর ঘটনা। একের পর এক ফাঁস হচ্ছে আর সেই প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে এটা তো দৃশ্যমান হয়েছে। সরকার যদি এটা স্বীকার না করে তাহলে এটা এক ধরনের মিথ্যাচার। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে এর দায় স্বীকার করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে মঙ্গল বয়ে আনবে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ প্রশ্নপত্র ফাঁসে সহায়ক হচ্ছে। যেখান থেকে প্রশ্নপত্র ছাপা হচ্ছে হয়তো সেখানে তারা গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারছেন না। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মান অনেক নিচে নেমে আসবে। তিনি বলেন, শিক্ষার মান ঠিক রাখতে হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারকে অবশ্যই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রী আসলে এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী সম্প্রতি নয়া দিগন্তকে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস এখন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। অসাধু চক্র এটি করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারকারীরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে। যা একেবারে অনৈতিক। এভাবে কোনো প্রজন্ম বেড়ে উঠলে তা ভালো কিছু অর্জন করবে না।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা এমনিতেই কাহিল। এমনিতেই শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার ওপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আরো বেশি বিব্রতকর। এভাবে একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে, আর সেই প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস যাতে না হয় তার জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ না করতে পারলে মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকবে। তারা লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থা আরো সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাবে। মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. এমাজউদ্দীন বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে সবারই বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৭:১৯   ৩১৫ বার পঠিত