মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

আর্থিক অনিয়মের শীর্ষে বিটিআরসি

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » আর্থিক অনিয়মের শীর্ষে বিটিআরসি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৪



image_87118_0.jpgডেস্ক:
২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের সন্ধান মিলেছে সরকারি নিরীক্ষায়। আলোচ্য সময়ে অনিয়মের শীর্ষে ছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
কেবল বিটিআরসিতেই অনিয়ম পাওয়া গেছে ২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার। সরকারি ব্যয় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ে গতকাল সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ইতোমধ্যে এ অনিয়মের বিস্তারিত পরিসংখ্যান রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জানানো হয়েছে সংসদকেও। আর এই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছে সিএজি কার্যালয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে সিএজি মাসুদ আহমেদ বলেন, মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ নমুনা নিরীক্ষা করে এ অনিয়ম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ অনিয়মের প্রাপ্ত এ ফলাফল পুরো অনিয়মের একটি অংশ মাত্র।
সিএজি’র নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশ কিছু খাতে অনিয়ম করেছে বিটিআরসি। এর মধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানি ওয়ারিদকে (বর্তমানে এয়ারটেল) লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা হলেও ওয়ারিদের ব্যাংক গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। এছাড়া শেয়ার হস্তান্তরের সময় কম ফি গ্রহণ, বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানির কাছ থেকে স্পেকট্রাম চার্জ গ্রহণ না করা, তরঙ্গ বা বেতার যন্ত্রে চার্জ বা জরিমানা আদায় না করা, এয়ারটাইম চার্জের বকেয়া ফি ও রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের বকেয়া অর্থও আদায় করেনি বিটিআরসি। এছাড়া ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান না করা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে পিএসটিসি লাইসেন্স প্রদান ও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করা সত্ত্বেও জরিমানা আদায় না করার বিষয়ে অডিটে বিটিআরসির অনিয়মের কথা বলা হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতা ও রূপালী ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফ কার্যক্রমের উপর ২৮টি আপত্তি আনা হয়। এতে জড়িত রয়েছে ৮৮১ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা, সোনালী, অগ্রণী, রপালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইসিবি, বিডিবিএল এর বিভিন্ন কার্যক্রমে অনিয়ম ধরা পড়েছে ৭৯৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফ কার্যক্রমে ৭১৩ কোটি টাকার অনিয়ম, সোনালী ব্যাংকের ৬৬৩ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৪৩ কোটি টাকা, রেলওয়ের জমি ব্যবস্থাপনা ও লাইসেন্স ফি আদায়ে ১৫৬ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ডিপিডিসি’র ৮৮ কোটি টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৪৮ কোটি টাকা, শুল্ক বিভাগের ৪২ কোটি টাকা, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের আরো ১২ কোটি টাকা, রপ্তানিকারকদের ব্যাংকগুলোর নগদ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকা, স্থল শুল্ক স্টেশনে ৮ কোটি, বিদেশি দূতাবাসগুলোতে সাড়ে ৭ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১১ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
সিএজি মাসুদ আহমেদ বলেন, সিএজি কার্যালয় কেবল অনিয়ম ধরে দেয়। অভিযুক্তের কাছ থেকে অনিয়মের এসব অর্থ আদায় করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। ইতোমধ্যে ৭ম ও নবম সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি অডিট আপত্তির ১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা আদায় বা সমন্বয় করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এর অধীনস্ত বিভিন্ন অফিস, সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ ২২ হাজার ৪৩১টি ইউনিট অডিটের আওতাভুক্ত। এই বাইরে বিদেশে অবস্থিত ৬৯টি বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন বা কনস্যুলেটও অডিটের আওতাভুক্ত। তবে জনবল ও সময়ের অভাবে সব প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের হিসাব অডিট করা সম্ভব হয় না। অনিয়মের ঝুঁকি রয়েছে এমন হিসাব থেকে ১০ শতাংশ নমুনা নিয়ে তার উপর নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতি বছরের সরকারি ব্যয়ের উপর সিএজি নিয়ন্ত্রণাধীন ১০টি অধিদপ্তর অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে অডিট আপত্তি ও অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে চূড়ান্ত অনিয়ম চিহ্নিত করতে বেশি সময় লাগে। এ জন্য ২০১৪ সাল শেষ হয়ে আসলেও অডিট রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে ২০১১ সাল পর্যন্ত। অবশ্য ইতোমধ্যে ২০১৩ সালের অডিট রিপোর্টের কাজও চলমান রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডেপুটি কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল ড. শ্যামল কান্তি চৌধুরী। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিসাব মহা নিয়ন্ত্রক আবুল কাশেম, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স আমির খসরু, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির (ফিমা) মহাপরিচালক মোসলেম উদ্দীন, ডেপুটি কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল আবুল ফয়েজ মো. আবিদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ওয়াজির আহমেদ ফাতেহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০০:৫৩   ৪০০ বার পঠিত