বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

ড. শফিউলের বাসা থেকে ছাত্রী গ্রেফতারের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জে তোলপাড়

Home Page » জাতীয় » ড. শফিউলের বাসা থেকে ছাত্রী গ্রেফতারের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জে তোলপাড়
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৪



rabi1.jpgবঙ্গ-নিউজঃরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক ড. শফিউল আলমের বাসায় থাকা মেয়েকে নিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত ওই মেয়ের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পৌর শহরের প্রধান পাড়ায়। মেয়েটির নাম সোনামণি বলে জানা গেছে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী। তার বাবা রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম ও রেণু বেগমের মেয়ে সোনামণি গ্রেফতারের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই নানা অজানা তথ্য বের হতে শুরু করেছে। জানা গেছে, মেয়েটির বাবা তিনটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী এক পুত্রসন্তানের জননী হওয়ার পর আত্মহত্যা করেন। রফিকুল ইসলাম পরে তার আপন শ্যালিকা রেণু বেগমকে বিয়ে করেন। রেণু ও রফিকুলের পরিবারে তিন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তাদের মধ্যে সবার বড় সোনামণি। অপর দুই মেয়ের নাম মণি ও মুক্তা। দুই বোনেই স্থানীয় শিাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ও একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। কিছু দিন আগে রফিকুল ইসলাম আরো একটি বিয়ে করলে সোনামণির মায়ের সাথে রফিকুলের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রফিকুলের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন সোনামণি অনেক আগে থেকেই উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন শুরু করে। জড়িয়ে পড়ে নানা কেলেঙ্কারিতে। গোবিন্দগঞ্জের বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারীসহ রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। পরিবারের অশান্তির কারণে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার পরিবারের প থেকে জানানো হয়েছে, ভাইভা পরীার সাজেশনের জন্য সে শফিউল স্যারের বাসায় গিয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিার্থী জানিয়েছে সে প্রায়ই শফিউল স্যারের বাসায় গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাত। এ দিকে ড. শফিউলের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নানা তথ্য পাওয়া গেছে। শফিউল ইসলাম তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথমে তিনি প্রেম করে খালাত বোনকে বিয়ে করেছিলেন। ওই স্ত্রীর ঘরে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করে। পরে শফিউল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কেরানির মেয়েকে বিয়ে করেন। কিছু দিন পরই তার ওই স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। কিছু দিন আগে তিনি শেরপুরের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। সে মেয়েও তাকে ছেড়ে চলে যায়। কথিত আছে পরনারী আসক্তির কারণেই তার কোনো বউই টিকে থাকতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বড়মাপের অধ্যাপক হলেও গোবিন্দগঞ্জের কেউ তাকে তেমন একটা চিনত না। বিভিন্ন তথ্য নিতে গিয়ে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় জন্ম হলেও তিনি পড়াশোনা করেছেন পাশের উপজেলা সোনাতলায়। রংপুর সুগার মিলের করণিক মৃত আখতারুজ্জামানের ছেলে ড. শফিউল আলম। আখতারুজ্জামানের এক ছেলে ও চার মেয়ে। শফিউল আলম ভালো পড়াশোনা করলেও তার বোনেরা তেমন শিতি নয়। নিহত হওয়ার পর থেকেই গোবিন্দগঞ্জে শফিউলের নাম উঠে আসে। এ দিকে পরিচয় প্রকাশের পর থেকেই সোনামণির বাড়িতে মিডিয়ার লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। সেই সাথে বিষয়টি গোবিন্দগঞ্জে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। কিন্তু সোনামণির বাড়িতে কেউ না থাকায় মিডিয়া কর্মীরা ফিরে যাচ্ছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সোনামণির মা রাজশাহীতে রয়েছেন। এখনো বাড়িতে ফেরেননি। রাবিতে মানববন্ধন : কাস পরীক্ষা বর্জন রাবি সংবাদদাতা জানান, ড. শফিউল ইসলামের হত্যাকারীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও র‌্যালি করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এ দিকে শিক্ষক সমিতির আহ্বানে তৃতীয় দিনের মতো কাস পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত ছিল। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ওয়ারদাতুল আকমামের সভাপতিত্বে ও প্রফেসর জুলফিকার আলী ইসলামের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান। তিনি বলেন, প্রফেসর শফিউলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও আরো দুই শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আর এই ক্যাম্পাসে হত্যা দেখতে চাই না। ক্যাম্পাসের ঘটিত সব হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ সময় তিনি প্রফেসর শফিউলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর কামরুল হাসান মজুমদার। মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন শেষে একটি র‌্যালি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বিভাগের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান : ড. এ কে এম শফিউল ইসলামের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প থেকে বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ওয়ারদাতুল আকমামসহ শিকেরা উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের কাছে এ স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়, শফিউল ইসলামের নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গোপালগঞ্জে মানববন্ধন : গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ড. শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে গোপালগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক সমিতি এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক-শিার্থীরা অংশ নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিভূতি সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম খায়রুল আলম খান, প্রবীণ শিক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক দিলীপকুমার নাথ, শিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মশিউর রহমান, শিক্ষক সুকান্ত বিশ্বাস প্রমুখ। নোবিপ্রবিতে মানববন্ধন নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে গতকাল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা অবিলম্বে শিক্ষক হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪১:৫২   ৩৬৬ বার পঠিত