রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৪

অর্বাচীন বালকের মতো কথা বন্ধ করুন : ফখরুল

Home Page » জাতীয় » অর্বাচীন বালকের মতো কথা বন্ধ করুন : ফখরুল
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৪



 1416057027.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক:জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অর্বাচীন বালকের মতো’ কথা বলেছেন তিনি।
তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে এভাবে কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য জয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র।
শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “নতুন প্রজন্মের নুতন নেতা জয় সাহেব। তার বয়স অনেক কম, ছোট। তার সম্পর্কে কী বলব। ব্যক্তিগতভাবে তার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষায় বলতে চাই, অর্বাচীন বালকের মতো কথা বলা বন্ধ করুন। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কটূক্তি করলে, তাকে অস্বীকার করলে বাংলাদেশের ইতিহাস ও শেকড়কে অস্বীকার করবেন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো কথা বললে আপনি নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না।”
আগের দিন এক আলোচনা সভায় বিএনপিকে ‘রাজাকারদের দল’ আখ্যায়িত করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন কি না- সে প্রশ্ন তোলেন জয়।
“যারা রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতি করে তারা কি রাজাকার নয়? অবশ্যই। সত্যি কথা হচ্ছে বিএনপি হচ্ছে রাজাকারদের দল। তারা যদি প্রমাণ করতে চায় তারা রাজাকারের দল নয়; তাহলে এই রাজাকারের দলের সাথে জোট ছেড়ে আসুক,” বলেছিলেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তুলে জয় বলেন, ” তারপরও তো তারা কোনো দিন একটি বিষয় থেকে ফিরে আসতে পারে না। রাজাকারদের কে ফিরিয়ে এনেছে দেশে ? স্বাধীন দেশে তাদেরকে ফিরিয়ে এনেছে জিয়াউর রহমান। এটা কোনোমতেই তারা অস্বীকার করতে পারে না। আমি প্রশ্ন করব, যে ব্যক্তি এই যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত এনেছে সে কি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? কোনো মতেই না।” বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ থাকলেও সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দলটিকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেন। জাতীয় প্রেসকাব মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে ‘শহীদ জিয়া ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “যত কথাই বলা হোক না কেন- জিয়া ও মুক্তিযুদ্ধকে আলাদা করা যাবে না। জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, এটাই সত্য। যারা তার (জিয়া) বিরুদ্ধে কটূক্তি করে, তার নাম মুছে ফেলতে চায়, তারা কোনো দিন তা পারবে না। এদেশে যতদিন গণতন্ত্র থাকবে, ততদিন কেউ জিয়ার নাম মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।” জয়ের বক্তব্যে ােভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জয় সাহেব। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় বাংলাদেশে তার জন্ম হয়েছে। ছোটকাল থেকে বেশিরভাগ সময় ভারতে ছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এদেশের প্রতি তার কতটুকু দরদ আছে, তা জনগণই বলবে।
“জয় সাহেব আওয়ামী লীগের যে ব্যানারে কথা বলছেন, তাতে নুতন নেতা হওয়া যাবে না। একদলীয় শাসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে বাকশাল হয়েছিল। দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই দলকে জিয়াউর রহমানই আবার পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। দয়া করে ইতিহাস না জেনে কথা বলবে না।” হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্ব ও দলীয় সদস্য পদ হারানো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে জয়কে সরকারি কোষাগার থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ ডলার দেওয়া হয়। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একথা নিউ ইয়র্কে বলেছেন। সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। আমরা জানতে চাই, হজের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য নাকি জয় সাহেব সম্পর্কে কথা বলার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর চাকরি গেছে?” গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নিউ ইয়র্কে এক সভায় হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছিল বিএনপিও। বিএনপিকে ‘স্বৈরাচারের সৃষ্টি দল’ বলায় জয়ের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “একটা শিশু বলে স্বৈরাচার। বিএনপির জন্ম নাকি স্বৈরাচারে। কী বলব! স্বৈরাচার কী? স্বৈরাচার কাকে বলে আগে জান। নিজের চেহারা আগে আয়নায় দেখ।” গণমাধ্যম নিয়েও জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
“গতকাল তিনি এক অনুষ্ঠানে মিডিয়াকেও এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কিছু পত্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে এডিটোরিয়াল লেখে। তারা অন্ধ। সরকারের ভালো কাজ তাদের চোখে পড়ে না। এভাবেই বর্তমান আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অতীতেও করেছিল।”
জিয়া ‘ণজন্মা’
জিয়াউর রহমানকে ‘ণজন্মা’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “জিয়া ছিলেন একজন ণজন্মা মানুষ। দুভার্গ্য, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছেন। এই মানুষটি ধূমকেতুর মতো এসে দেশের মানুষের কাজ করে গেছেন, জনগণকে জাগিয়ে দিয়ে গেলেন।
“মুক্তিযোদ্ধা সাহাদাৎ চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নাসিরউদ্দিন ইউসুফ সেদিন জিয়াউর রহমানের সঙ্গেই কাজ করেছেন। সিপিবির মণি সিং, ন্যাপের মুজাফফর আহমেদ জিয়াকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন। সংসদে এখনো নেতৃবৃন্দের বক্তব্য কার্যবিবরণীতে সংরতি আছে। বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। জনগণই বিএনপির শক্তি। তাই জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করে কোনো লাভ হবে না।”
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের আ ন ম আখতার হোসেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শামসুল আলম, অ্যাডভোটে মেজবাহ উদ্দিন, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু,শিক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সেলিম ভুঁইয়া, কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৩:১৭   ৩৪৯ বার পঠিত