রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৪
যুবলীগের সমাবেশে শেখ হাসিনা-২০ দলীয় জোট বিষফোঁড়া
Home Page » জাতীয় » যুবলীগের সমাবেশে শেখ হাসিনা-২০ দলীয় জোট বিষফোঁড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক:গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘যুব জাগরণ’ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ছবি : বাসস
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশের জন্য বিষ ফোঁড়া। এতে কোনা সন্দেহ নেই । তিনি বলেন, তারা দেশের মানুষের শান্তি চায় না। তবে, যতই হুমকি-ধমকি আসুক না কেন এ দেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।
গতকাল শনিবার বিকেলে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ওয়াদা করেছিলাম। যখন এ বিচার চলছে তখন বিএনপি নেত্রীর জনসভায় তাদের মুক্তির দাবিতে প্লাকার্ড দেখানো হয়। খালেদা জিয়ার জনসভার চেহারা দেখলেই বোঝা যায়, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে না স্বাধীনতার পক্ষে। কারণ তার জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। এ দেশের মাটি লাখো শহীদের রক্তে ভেজা, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা গণহত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছে তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় একে একে কার্যকর করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি। বিএনপির নীতি-আদর্শই ছিল ভিন্ন। ১৫ আগস্টের পরে তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের নিয়ে ক্ষমতায় আসে তারা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বাংলাদেশ হলো খুনীদের দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনি মোশতাক ছিল মোনাফেক, আর জিয়া ছিল তার দোসর। তারা ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শুধু হত্যাই করেনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে তারা নস্যাৎ করতে চেয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি মোশতাকের সাথে জিয়াউর রহমান না-ই থাকবে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ঘটাতে, তাহলে কেন জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করবে। বাংলাদেশে ৭৫-এর পর থেকে হত্যা ও ক্যুর রাজনীতি শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। তখনই দেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার মানেই জনগণের সেবক। আমরা দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করি।
তিনি বলেন, কোনো হুমকি-ধামকিতে কাজ হবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতার সুফল জাতি পেতে শুরু করেছে। আগামীতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে আলোর জ্বালানো হবে। কেউ অন্ধকারে থাকবে না।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে যুবলীগ নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শেখ ফজলুল হক মনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। তিনি অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধও করেছেন। তিনি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই যুবলীগকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে হবে। আগামীতে যুবলীগ সদস্যরা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন।
‘২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে আমরা দেশের ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি খাতের অনুমতি দিয়েছি যাতে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। যুবকেরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হইনি, বরং খাদ্য রফতানিও করছি। আন্তর্জাতিক খাদ্য রফতানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীতে তীব্র যানজট
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় গতকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিনে দুপুর থেকে দেখা দেয় প্রচন্ড যানজট। ট্রাক-বাসের বহর নিয়ে প্রধান প্রধান সড়কে ছিল সংগঠনটির কর্ম-সমর্থকদের মিছিল। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে রাজপথে থাকা সাধারণ মানুষ তাঁদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভিআইপি সড়কের যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। বিজয় সরণি, ফার্মগেট, হাইকোর্ট, গুলিস্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ এলাকায় যান ও জনজট দুটোই ছিল। এসব এলাকায় যানবাহন ছাড়াও পায়ে হেঁটে যুবলীগের একের পর এক মিছিলের কারণে সবকিছু একেবারে থমকে গিয়েছিল। বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভিড় দেখা যায় এই এলাকাগুলোয়। একটি বাস পেলে হুড়মুড় করে ভোগান্তিতে পড়া অগণিত মানুষ সেটি ঘিরে ধরেন।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেলা ২টার দিকে সোনারগাঁও মোড়ে টানা একঘণ্টা সিগন্যাল দিয়ে রাখা হয়েছিল। একপর্যায়ে ওই এলাকায় ডাইভারশন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কারওয়ান বাজারের পর থেকে বাংলা মোটরের দিকে কোন গাড়ি যেতে পারছিল না।
তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল আওয়াল জানান, মহাখালী উড়ালসেতু থেকে যানজট শুরু হয়। দুপুরের পর পরই গণপরিবহনের চাপ বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৯:৫৫ ৩৩৪ বার পঠিত