রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৪

রাবি শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা

Home Page » প্রথমপাতা » রাবি শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৪



rabi.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম নিলনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার বিকেলে বাসায় ফেরার পথে নগরীর বিহাস এলাকায় সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন ওই শিক। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত শফিউলের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আকতার হোসেন।রামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা: মমতাজ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই শিকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর তিনি মারা যান।

এ দিকে বিভাগীয় শিক্ষক নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এ ছাড়াও এ নির্মম হত্যার প্রতিবাদে রোববার কাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর আহমেদ জানান, বিকেল ৩টার দিকে প্রফেসর শফিউল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে নিজ বাসা চৌদ্দপাই এলাকায় ফিরছিলেন। পথে বিহাসের কাছাকাছি এলে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রামেক হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, গুরুতর জখম অবস্থায় প্রফেসর শফিউল ইসলামকে হাসপাতালে আনা হয়। তখনই তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

প্রতিবেশীরা জানান, শফিউল ইসলাম নিজ দ্বিতল বাসভবনে একাই বাস করতেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী সাথে থাকতেন না। তার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ মনে করছেন, নিহত শিক্ষক ছিনতাইকারীদের শিকার হয়েছেন। তার প্রথম স্ত্রীর ভাই শাকিলের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আরো দু’টি বিয়ে করেন। কিন্তু তারা কেউই তার সাথে থাকতেন না। তবে তিনি বলেন, তার সাথে কারো বিবাদের কথা তার জানা নেই।

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর নীলুফার সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সব সময় একা চলাফেরা করেন। এভাবে শিক্ষকদের হত্যা করা হলে ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? তিনি এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।

নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে আমরা প্রফেসরের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

প্রতিবাদে বিক্ষোভ রাস্তা অবরোধ : এ দিকে বিভাগীয় শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে থাকেন। বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা সমাবেশে বক্তব্য দেন। ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখবেন বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।

এ দিকে রাস্তা অবরোধের ফলে রাস্তার দুই পাশে বাস, ট্রাকসহ কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. তারিকুল হাসান জানান, শুনেছি শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। তিনি বিষয়গুলো দ্রুত দেখছেন বলে জানান।

শিক্ষকদের কাস-পরীক্ষা বর্জন : প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে আজ রোববার কাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকেরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর প্রণব কুমার পাণ্ডে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা একজন শিক্ষককে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা শিক্ষক হিসেবে কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছি না। শিক্ষকেরা প্রফেসর শফিউল ইসলামের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আপাতত রোববার কাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করবেন। ওই দিন পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে বলে তিনি জানান।

জানাজা ও দাফন : এ দিকে গত রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে মরহুমের নামাজে জানাজা হওয়ার কথা। নামাজে জানাজার পর লাশ মরহুমের ছেলেসহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আজ বগুড়ার সোনাতলার হায়াতপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মরহুম শফিউল ইসলামের লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শোক : দুর্বৃত্তদের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি গতকাল এক শোকবার্তায় অধ্যাপক শফিউল ইসলামের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

গত রাতে প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ২:৪০:৪৫   ৪১২ বার পঠিত