বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০১৪
সূরা ফাতিহার - ফজিলত
Home Page » সাহিত্য » সূরা ফাতিহার - ফজিলত
ফজিলত সূরা ফাতিহাকে বলা হয় ”উম্মুল কোরআন ” (কোরআন শরীফ-এর মূল) ‘উম্মুল কিতাব’ কোরআন এর মা, ‘কোরআন-নুল আজিম’ মহাগ্রন্থ আল কোরআন বলা হয়, সমস্ত আসমানী কিতাবে যা নাযিল হয়েছে তা সবই বরং তার চেয়ে বেশি হুকুম নাযিল হয়েছে কোরআন শরীফ-এর মধ্যে।পুরো কুরআন শরীফ-এ যা নাযিল হয়েছে তা সবই বর্ণিত রয়েছে সূরা ফাতিহা-এর মধ্যে ।সূরাতুল-ফাতিহার আয়াত সংখ্যা ৭। প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ্’র প্রশংসা এবং শেষের তিনটি আয়াতে মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহ্’র নিকট প্রার্থনা ও দরখাস্তের বিষয়বস্তুর মিশ্রণ। মধ্যের একটি আয়াত প্রশংসা ও দোয়া ।
এই সূরার মধ্যে খালিক, মালিক, রব, আল্লাহ জাল্লা শানহু-এর পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে। এমন কোন মুসলমান পাওয়া যাবে না যে নামায পড়ে অথচ সূরা ফাতিহা জানে না। আবার যারা সূরা ফাতিহা জানে তারা কম বেশি প্রত্যেকেই সূরা ফাতিহার অর্থ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।অতঃপর আল্লাহ পাক-এর নিয়ামতপ্রাপ্ত রসূল ও আউলিয়ায়ে কিরামগণের পরিচয় তুলে ধরে উনাদের পথে চলার জন্য আদেশ করা হয়েছে। ===হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম=== ‘‘তোমরা কিরূপ লোক থেকে তোমাদের দ্বীন (ইলম বা নছীহত) গ্রহণ করছো, তা ভালোরূপে লক্ষ করো এবং যে, আল্লাহর হাতে আমার জীবন-মরণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, সূরা আল-ফাতিহার দৃষ্টান্ত তাওরাত, ইনজীল, যাবুর সহ অন্য কোন আসমানী কিতাবে তো নেই-ই, এমনকি পবিত্র আল কোরআনেও এর দ্বিতীয় নেই।” (বোখারী শরীফ, মুসলিম, তিরমিযী, মেশকাত, শরহে নববী, মোজাহেরে হক্ব,শরহুত্ ত্বীবী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, লুমাত, আশয়াতুল লুমাত, তা’লীকুছ ছবীহ) যে কারণে সূরা ফাতিহা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব সব নামাজেই এবং প্রত্যেক রাকায়াতেই পড়াটা অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে। সূরায়ে ফাতিহা প্রত্যেক ”রোগের” ঔষধ বিশেষ( সূরায়ে শেফা)ও বলা হয়েছে। হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত আক্ষরিক( নেকী): সূরা ফাতিহা “আলহামদু”=শব্দটিতে ৫টি অক্ষর :আছে। পাঠকারীকে ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে কোন ভুল ত্র”টি থাকিলে ক্ষমা করিয়া দেওয়া হয়। “লিল্লাহ”=পর্যন্ত ৮টি অক্ষর : পাঠকারীর জন্য বেহেশতের ৮টি দরজা খুলিয়া দেওয়া হয়। “রাব্বিল আল আমিন”=পর্যন্ত ১৮টি অক্ষর: পাঠকারীকে ১৮ হাজার মাখলুকাতের ইবাদাতের সওয়াব দেওয়া হয়। “আর রাহমান”=পর্যন্ত ২৪টি অক্ষর:পাঠকারীকে ২৪ ঘন্টার কৃত পাপ হইতে রেহাই দেওয়া হয়। “আর রাহিম”=পর্যন্ত ৩০টি অক্ষর: পাঠকারী কিয়ামতের মাঠে ৩০ হাজার বছরের পুলসিরাত বিদ্যুৎ গতিতে অতিক্রম করবে। “মালীকি ইয়াওমিদ্দিন”=পর্যন্ত ৪২টি অক্ষর: পাঠকারীকে ১ বৎসরের পাপ ক্ষমা করা হয়। “ইয়া কানাবুদু”=পর্যন্ত ৫০টি অক্ষর: পাঠকারীর সহিত কেয়ামতে ৫০ হাজার বছরের সমতুল্য দিনে কৃপা পূর্ণ ব্যবহার করা হবে। “ওইয়াকানাসতাইন”=পর্যন্ত ৬১টি অক্ষর: পাঠকারীকে আসমান, জমিনে ৬১টি রহমতের দরিয়ার প্রতি বিন্দু পানির সমতুল্য সওয়াব দেওয়া হইবে এবং গুনাহ আমল নামা হইতে ধুইয়া ফেলা হইবে। “ইহ দিনাস সিরাত্বাল মুসতাকিম”=পর্যন্ত ৮০টি অক্ষর:পাঠকারীকে সরাব পান হইতে বাঁচাইয়া উহার ৮০ দোররা শাস্তি হইতে রক্ষা করিবে। “সিরাত্বল্লাজিনা আন-আমতা আলাইহিম”=পর্যন্ত ৯৯টি অক্ষর: পাঠকারী আল্লাহ তালার ৯৯ নাম অবলম্বনে সমস্ত জিকিরের সওয়াব পাইবে। “গাইরিল মাগদুবে আলাইহিম”=পর্যন্ত ১১৪টি অক্ষর” পাঠকারীকে কোরান শরীফের ১১৪টি সূরা পাঠকারীর সমষ্টির সওয়াব দেওয়া হইবে। “ওয়ালাদ দোয়ালিন”=পর্যন্ত ১২৪টি অক্ষর। যিনি পাঠ করবেন তিনি ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গাম্বরের এবাদতের সমষ্টির সওয়াব পাবেন। <<<<<সূরা আল-ফাতিহার বাংলা অনুবাদ>>>>> মক্কায় অবতীর্ণঃ আয়াত সাত ”পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্’র নামে আরম্ভ করছি” (১) যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। (২) যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। (৩) যিনি বিচার দিনের মালিক। (৪) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। (৫) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, (৬) যে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। (৭) তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হযেছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।”
(১) এই সূরা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত সূরা। তাওরাত, যবূর, ইনজীল, কুরআন কোন কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই।[7]
(২) এই সূরা এবং সূরায়ে বাক্বারাহ্র শেষ তিনটি আয়াত হ’ল আল্লাহ্র পক্ষ হ’তে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি।[8]
(৩) যে ব্যক্তি ছালাতের মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অপূর্ণাঙ্গ (خِدَاجٌ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই কথাটি তিনবার বলেন। রাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যখন আমরা ইমামের পিছনে থাকি? জওয়াবে তিনি বলেন, ‘তুমি তখন ওটা চুপে চুপে পড়’।[9] ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘এই সূরার নাম ‘ছালাত’ (الصلاة) বলা হয়েছে একারণে যে, ছালাতের জন্য এটি পাঠ করা শর্ত’ (ঐ, তাফসীর)।
(৪) আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন ও তিনি সুস্থ হন…[10] এজন্য এ সূরাকে রাসূল (ছাঃ) ‘রুক্বইয়াহ’ (الرُّقْيَةُ) বলেছেন।[11]
(৫) ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-কুরতুবী (মৃঃ ৬৭১হিঃ) বলেন, সূরায়ে ফাতিহাতে যে সকল ‘ছিফাত’ রয়েছে, তা অন্য কোথাও নেই। এমনকি একেই ‘আল-কুরআনুল আযীম’ বা মহান কুরআন বলা হয়েছে (হিজর ১৫/৮৭)।
এই সূরার ২৫টি কালেমা কুরআনের যাবতীয় ইল্মকে শামিল করে। এই সূরার বিশেষ মর্যাদা এই যে, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই একে ‘উম্মুল কুরআন’ বা ‘কুরআনের সারবস্ত্ত’ বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন মূলতঃ তিনটি বিষয়ে বিভক্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহাতে তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে।
সূরা ফাতিহার ফযীলত :
এ সূরার ফযীলত অপরিসীম। এর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে পেশ করা হ’ল-
(১) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মত তাওরাত ও ইঞ্জীলে কিছু্ নাযিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাব‘উল মাছানী’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’।[13]
(২) সাঈদ ইবনু মু‘আল্লা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি মসজিদে ছালাত আদায় করছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ডাক দিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। অতঃপর ছালাত শেষে এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি ছালাত আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ কি বলেননি, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তোমাদেরকে ডাকা হয়?’ (আনফাল ২৪)। অতঃপর আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে তোমার বের হওয়ার পূর্বেই আমি তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দিব। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হ’তে চাইলেন, তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম, আপনি কি আমাকে বলেননি যে, তোমাকে আমি কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দিব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সূরাটি হচ্ছে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটিই সাবউল মাছানী এবং কুরআনুল আযীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে’।[14]
(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করল, আর সূরা ফাতিহা পড়ল না তার ছালাত অসম্পূর্ণ, কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। ছালাত সম্পূর্ণ নয়। বলা হ’ল, হে আবু হুরায়রা! আমরা কোন কোন সময় ইমামের পিছনে থাকি। তিনি বললেন, আপনি মনে মনে পড়ুন। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন, আমি ছালাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে ভাগ করে দিয়েছি। অর্ধেক আমার আর অর্ধেক আমার বান্দার। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ، صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّيْنَ আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়’।[15]
(৪) ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের এক দল এক পানির কূপওয়ালাদের নিকট পৌঁছলেন, যাদের একজনকে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল। কূপওয়ালাদের এক ব্যক্তি এসে বলল, আপনাদের মধ্যে কোন মন্ত্র জানা লোক আছে কি? এ পানির ধারে বিচ্ছু বা সাপে দংশন করা একজন লোক আছে। ছাহাবীগণের মধ্যে একজন (আবু সাঈদ খুদরী) গেলেন এবং কতক ভেড়ার বিনিময়ে তার উপর সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিলেন। এতে সে ভাল হয়ে গেল এবং তিনি ভেড়াগুলি নিয়ে সাথীদের নিকট আসলেন। তারা এটা অপসন্দ করল এবং বলতে লাগল, আপনি কি আল্লাহ্র কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করলেন? অবশেষে তারা মদীনায় পৌঁছে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! তিনি আল্লাহ্র কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তার মধ্যে আল্লাহ্র কিতাব অধিকতর উপযোগী’।[16] অন্য বর্ণনায় আছে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা ঠিক করেছ। ছাগলের একটি ভাগ আমার জন্য রাখ’।[17]
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর নিকট গেলেন, এ সময় তিনি ছালাত আদায় করছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে ওবাই! তখন ওবাই (রাঃ) মুখ ফিরালেন, কিন্তু কোন সাড়া দিলেন না। অতঃপর ওবাই (রাঃ) হালকা করে ছালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আস-সালামু আলাইকা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওয়ালাইকাস সালাম। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে ওবাই! আমি যখন তোমাকে ডাকলাম, আমার ডাকে সাড়া দিতে তোমাকে বাধা দিল কে? ওবাই (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছাঃ)! আমি ছালাতের মধ্যে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কেন আল্লাহ অহী করে তোমাদের যা বলেছেন, তা কি তুমি পড়নি? আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমাদের ডাকেন, তোমরা তাঁদের ডাকে সাড়া দাও’ (আনফাল ২৪)। ওবাই (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ হে আল্লাহ্র রাসূল (রাঃ)! আল্লাহ তো এভাবেই বলেছেন, আমি আর কখনও এ কাজ করব না। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি সূরা শিক্ষা দিব, যা (পূর্বে) কখনও নাযিল হয়নি। তাওরাতে হয়নি, যাবূরে হয়নি, ইঞ্জীলে হয়নি। অনুরূপ ফুরকান তথা কুরআন মাজীদেও নাযিল হয়নি। আমি বললাম, জি হ্যাঁ শিখিয়ে দিন হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি আশা রাখছি তুমি মসজিদ হ’তে বের হওয়ার পূর্বেই জানতে পারবে। ওবাই (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার হাত ধরে হাদীছ বলতে লাগলেন, আর আমি বিলম্ব করছিলাম এই ভয়ে যে, তিনি কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই দরজায় পৌঁছে যাবেন। অতঃপর আমরা যখন দরজার নিকট গেলাম, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! সেই সূরাটি কি যা শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছা করেছিলেন? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তুমি ছালাতে কি পড়? ওবাই (রাঃ) বললেন, আমি তার সামনে উম্মুল কুরআন পড়লাম। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তাঁর কসম! আল্লাহ তা‘আলা সূরা ফাতিহার মত কোন সূরা তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীল ও ফুরকান নামক কোন গ্রন্থে অবতীর্ণ করেননি। নিশ্চয়ই সূরা ফাতিহা হচ্ছে সাবউল মাছানী’।[18]
(৬) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন, হঠাৎ জিবরাঈল (আঃ) উপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হ’লেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাক্বারার শেষ দু’আয়াত। তুমি সে দু’টি হ’তে কোন অক্ষর পড়লেই তার প্রতিদান তোমাকে প্রদান করা হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০:১০:৩৯ ১৩৯৩ বার পঠিত