রবিবার, ১২ মে ২০১৩

দরিদ্রতাকে জয় করলো জয়পুরহাটের শুভ

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » দরিদ্রতাকে জয় করলো জয়পুরহাটের শুভ
রবিবার, ১২ মে ২০১৩



joypurhat-pic.jpgরাতুল, বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বানাইচ মোমেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র দরিদ্র জাহিদ হাসান শুভ এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। নানা’র আশ্রয়ে থেকে দরিদ্রতার পঙ্কিল পথ পাড়ি দিয়ে পড়ালেখায় তার এই সফলতায় প্রচন্ড খুশি দিনমজুর বাবা বাবলু মিয়া এবং মা সালেহা বেগম (ভানু)। পালিত নানা বানাইচ গ্রামের প্রয়াত বাছিরুল ইসলাম বাচ্চু তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এখনও তাদের আশ্রয় দেওয়া ঘরে বাস করলেও মেধাবী ছেলে শুভ’র পড়ালিখার খরচ চালিয়েছেন আশ্রয় দেওয়া পরিবারের সদস্যরা। পড়ালেখায় মেধাবী হওয়ায় শুভকে সবসময় অনুপ্রেরণা জোগাতেন নানা বাচ্চু মিয়া। এজন্য অভাবের শত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও শুভ’র পড়ালেখায় কখনও ছেদ পড়েনি। জেএসসিতে মেধা তালিকায় বৃত্তিলাভ করা শুভ স্কুল জীবনেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। ক্লাসে প্রথম হওয়ায় স্কুল শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে পড়ালেখায় তাকে সহযোগীতা করেছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই শুভ’র পরিবার ছিল অসহায়। তার মা সালেহা বেগম (ভানু) দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও শিশুকালে এতিম হওয়ায় বানাইচ গ্রামের প্রয়াত বাছিরুল ইসলাম বাচ্চু তাকে মেয়ের মর্যাদায় বাড়িতে আশ্রয় দেন। সেখানেই বড় হয়ে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গুরুরা গ্রামের দিনমজুর বাবলু মিয়ার সাথে। দারিদ্রতার কারণে সালেহা স্বামীকে নিয়ে থাকেন পালিত বাবা’র বাড়িতেই। পরে তাদের কোলজুড়ে জন্ম নেয় একমাত্র সন্তান জাহিদ হাসান শুভ। স্কুল জীবন থেকেই শুভ ছিল মেধাবী। যার কারণে বাবা কখনো দিনমজুরী কখনো ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ নির্বাহ করলেও শুভ’র পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছেন প্রয়াত নানা বাছিরুল ইসলাম বাচ্চু ও নানী নুরজাহান এবং তার ছেলেরা। কয়েক বছর আগে নানা মারা গেলেও অভিভাবকের প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন নানী নুরজাহান ও তিন মামা সোহেল, রাসেল আর রাশেদ। পরীক্ষার ফলাফলে সবায় খুশি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যত খরচের চিন্তায় শুভ এখন সবসময় থাকছে চিন্তামগ্ন। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা’র হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে সংসার খরচ আর নানা ও মামাদের অর্থে পড়ালিখা চললেও এখন উচ্চ শিক্ষায় খরচ জোগাবে কে? এই চিন্তায় এখন তাকে চিন্তামগ্ন করে রেখেছে। তার ইচ্ছে প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু দারিদ্রতার বেড়াজাল ছিন্ন করে সেই ইচ্ছে আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি-না সেই প্রশ্নই তার মনে এখন অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন,‘জাহিদ হাসান শুভ’র পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। মেধাবী হওয়ায় স্কুলে পড়ালিখার ব্যাপারে শিক্ষকরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছেন। তিনি বলেন,উচ্চতর শিক্ষার খরচ জোগানোর মত অবস্থা তার পরিবারের নেই। কাজেই পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে শুধু দরিদ্রতার কারণেই হয়তো মেধাবী শুভ’র জীবনে পড়ালিখার ইতি টানতে হবে।
মা সালেহা বেগম (ভানু) বলেন,‘অভাবের কারণে ছেলেকে ভাল কাপড়ও দিতে পারিনি। কাঁথা সেলাই এর পাশাপাশি হাঁস-মুরগী আর গরু প্রতিপালন করে যে অর্থ পেয়েছি তা দিয়ে পরীক্ষার আগে মাস দু’য়েক প্রাইভেট পড়ানোর টাকা জুগিয়েছি। এ ছাড়া পারিবারিকভাবেও ছেলেকে পড়ার জন্য অনেকই সহযোগীতা করেছেন। এখন কলেজে ভর্তি করাতে গেলে অনেক খরচ। কিভাবে সেই খরচ বহন করবে তা ভেবেই আনমনা হয়ে পড়ছে সালেহা মা সালেহা বেগম (ভানু)।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৪:০৩   ৬৪২ বার পঠিত