বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

জেএসসির আগেই ঝরে গেল সাড়ে ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » জেএসসির আগেই ঝরে গেল সাড়ে ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৪



p-s.pngবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃএবারের (২০১৪ সালে) জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী হচ্ছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৭ জন। এবার যারা জেএসসিতে অংশ নিচ্ছে তারা ২০১১ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ২০১১ সালের পিএসসিতে পাস করেছিল ২১ লাখ ২৫ হাজার ৮৬৯ জন। অবশিষ্ট চার লাখ ৬০ হাজার ৬২ জন শিক্ষার্থী এবার জেএসসিতে অংশ নিচ্ছে না। অর্থাৎ জুুনিয়র স্তর পার হওয়ার আগেই সাড়ে চার লাখের বেশি (৪ লাখ ৬০ হাজার ৬২ জন) শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তরা। এরা শিক্ষার বাইরে চলে যাচ্ছে বা গেছে।
এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী জেএসসিতে অংশ না নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করতেই রাজি নন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা তাসলিমা বেগম। তারা উভয়ই বলেন, এবার অনিয়মিত এবং অকৃতকার্যরাও অংশ নিচ্ছে পরীক্ষায়। এতেই বোঝা যায় শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে না। তারা শিক্ষার সাথেই সম্পৃক্ত রয়েছেন।
কিন্তু অনিয়মিত ও অকৃতকার্যদের সংখ্যা যোগ করলেও (অনিয়মিত ৯৮ হাজার ৭০৬ জন + অকৃতকার্য ৮৯ হাজার ২৫৪ জন = ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬০ জন) অবশিষ্ট ২ লাখ ৭২ হাজার ১০২ জন শিক্ষার্থীর হদিস নেই। মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, প্রতি বছরই জেএসসিতে শিক্ষার্থী বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালুর পর ঝরে পড়ার হার কমেছে। শিক্ষার মান বেড়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, জেএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকে প্রতি বছরই অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা তাসলিমা বেগম ‘জেএসসিতে ঝরে পড়া’ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে না। এবারো অনিয়মিত এবং তিন বিষয়ে অকৃতকার্যদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হয় তারা শিক্ষার বাইরে নেই।
এ দিকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর দেয়া পরিসংখ্যান অনুসারে বিগত দুই বছরের মতো এবারো জেএসসিতে অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী সংখ্যা বেশি। বেশির সংখ্যাটি হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার ৩২৬ জন। প্রতিটি শিক্ষাবোর্ডেই এরার ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। এ হার মাদরাসায়ও বেশি। মাদরাসায় ছাত্রের চেয়ে ১২ হাজার ৪২৯ জন বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায়।
আগামী ২ নভেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে ৮ সাধারণ বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২ ও ৩ নভেম্বর হরতালে কর্মসূচি থাকায় ওই দিন পরীক্ষা হবে কি না নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গতকাল বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হাই ভোল্টেজ (উচ্চপর্যায়ে) রুদ্বদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে হরতালের সময় পরীক্ষা হবে কি না? সে বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এ ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, হরতালের সময় পরীক্ষা হবে কি না পরে সিদ্ধান্ত হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শিাসচিব, অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা শিা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি, বিটিআরসির পরিচালক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের অতিরিক্ত পরিচালক, র‌্যাব সদর দফতরের উপপচিালক, ডিসি ডিবি, ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, এসবি প্রতিনিধিসহ শিা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে। এ সংক্রান্ত কোনো গুজব বা প্রচারণাকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নেবে। কোচিং সেন্টার বন্ধ না করেই কোচিং সেন্টারকে এবং ফেসবুককে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে। পরীক্ষা ও এ সংক্রান্ত সব বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য শিক্ষাসচিবকে প্রধান করে একটি জাতীয় মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং সংস্থার কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।
এদিকে এবারের পরীক্ষায় অভিন্ন প্রশ্নপত্রে নয়, সব বোর্ডই আলাদা আলাদা প্রশ্ন প্রণয়ন করবে এবং সেভাবেই পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মন্ত্রী ও আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক জানান। এ ছাড়া এবার গণিতেও সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। এবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামে একটি নতুন বিষয়ে পরীক্ষা হবে। এ ছাড়াও আরবি, সংস্কৃত ও পালি এ তিনটি বিষয় ঐচ্ছিক হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন : গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম প্রমুখ ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা এবারো অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তারা শ্রুতি লেখক সাথে নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। বহু নির্বাচনী ও সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে দু’টি বিভাগ থাকলেও দু’টি অংশ মিলে ৩৩ পেলেই পাস বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এসএসসির মতো দু’টি অংশে আলাদা আলাদা পাসের প্রয়োজন নেই। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁস রোধে এবার কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কেউ প্রশ্ন ছাপিয়ে বা প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও তাকে রেহাই দেয়া হবে না। সব জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:২১:৪৩   ৪৯৬ বার পঠিত