মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৪

প্যারালাইসিস-কীভাবে সুস্থ জীবনযাপন করবেন ডা.সুরাইয়া হেলেন

Home Page » ফিচার » প্যারালাইসিস-কীভাবে সুস্থ জীবনযাপন করবেন ডা.সুরাইয়া হেলেন
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৪



3-1.jpgকোন রোাগ বা দুর্ঘটনার কারণে,শরীরের যে কোন অংশ অবশ হয়ে গেলে সাধারণ ভাষায় আমরা বলি প্যারালাইসিস।এখানে আমি কোন মেডিকেল শব্দ ব্যবহার করবো না,কারণ এ লেখাটি সবধরণের মানুষ যেন সহজে বুঝতে পার সে উদ্দেশ্যে লেখা।যেমন দু’টি পা,শরীরের একপাশের এক হাত,এক পা,একটা হাত,একটা পা,শুধুমাত্র একটি আঙ্গুল বা মুখের একপাশও অবশ হয়ে যেতে পারে!তবে যাদের দু’টি পা অবশ হয়ে যায়,তারা হাঁটাচলা না করতে পারার কারণে বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসে থাকেন!বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পঙ্গু আর অভিশাপের ফলে এমনটি হয়েছে বলা হয়!যে কোন সময়ে,যে কোন বয়সী নারী-পুরুষ এরকম পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে পারেন!এ কোন পাপ বা অভিশাপের ফল নয়!ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য অনেক রোগের মত প্যারালাইসিসও সুনির্দিষ্ট কারণের একটা রোগ!অন্য রোগাক্রান্ত ব্যক্তি চলাফেরা করতে পারে বলে,প্যারালাইসিস রোগীর চেয়ে বেশি অসুস্থ থাকলেও এটা কারো চোখে লাগেনা!ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ,প্যারালাইসিস আক্রান্ত রোগিদের বোঝা মনে করে!আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেও নিজেকে অসহায়,পরনির্ভরশীল,অকর্মন্য এবং কোন পাপে এমন হলো বলে ,ভাগ্যকে ধিক্কার দিতে থাকে!আমরা এখন আর পঙ্গু,লেংড়া,অন্ধ,বোবা,কালা অর্থাৎ অক্ষম বা ডিসএবল শব্দটি ব্যবহার করিনা!বলি,‘অন্যরকমভাবে সক্ষম’!তারা অনেক কাজই বিস্ময়করভাবে করতে পারে এবং সুযোগ সুবিধা পেলে প্রতিভার ¯^vÿiI রাখতে পারে!
ইচ্ছাশক্তি এবং মনের জোরে একজন প্যারালাইসিস রোগি আমৃত্যু সুস্থ ¯^vfvweK জীবনযাপন করতে পারেন!তবে সবচেয়ে জরুরি,নিয়ম-শৃঙ্খলা,কর্মস্পৃহা ও মনের প্রফুল্লতা!আপনার দু’টি পা অবশ,তাই বলে জীবন শেষ হয়ে গেলো,জগৎসংসার আপনার জন্য নিষিদ্ধ,মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা,এসব হা-হুতাশ ঝেড়ে পেলতে হবে।পা নেই তো হয়েছেটা কী?হাত আছে,মুখ আছে,ব্রেইন ঠিকমত কাজ করছে,মুখের ভাষা আছে!আর কী চাই?এরকম যার একটি অঙ্গ নেই তার অন্যগুলো তো আছে?শুধু একটিমাত্র হুইলচেয়ার ,একজন দু’পা প্যারালাইসিস ব্যক্তির জীবনকে আমূল বদলে দিয়ে ,সুস্থ ¯^vfvweK জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে!আপনার থেকেও যারা কষ্টে আছেন,তাদেও কথা ভেবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন!
যারা হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে চান,তাদেরকে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে নিজে নিজে হুইলচেয়ার ব্যবহার করার পদ্ধতি শিখে নিতে হবে।যাদের দু’টি হাত ভালো ,তারা নিজেদেরকে ৯৫% সুস্থ ভাবতে পারেন।দু’হাতে ভর দিয়ে কারোর সাহায্য ছাড়াই আপনি াবছানা থেকে হুইলচেয়ারে উঠতে,নামতে,এটা চালিয়ে বাথরুম এবং অন্যান্য প্রতিটি ঘরেই চলাফেরা করতে পারবেন।তবে প্রতিটি দরজা হুইলচেয়ার ঢোকার মত প্রশস্ত ও চৌকাঠবিহীন হতে হবে।এখন বিল্ডিং কোডে সব জায়গায় হুইলচেয়ারের চলাচল নিশ্চিত করা হয়েছে।
আপনার পেশা ও বয়স অনুযায়ী,আপনি নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন।এর নাম,‘অকুপেশনাল থেরাপী’।
প্যারালাইসিস রোগিদের ক্ষেত্রে,
১।ফিজিওথেরাপী-অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন,
২।অকুপেশনাল থেরাপী-সুবিধামত কাজে নিয়োজিত রাখা,
৩।সাইকোথেরাপী-মাঝে মাঝে রোগিকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ,উপদেশ আর্থাৎ কাউনসেলিং করা।
এ সমস্ত থেরাপী একজন রোগিকে my¯’,¯^vfvweK জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।
আপনি হাঁটতে পারতেন,হঠাৎ করে চলার শক্তি হারিয়ে †d‡j‡Qb!¯^fveZB আকাশ ভেঙে পড়েছে অপনার মাথায়!নাহ্,নিজেকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে গুটিয়ে নেবেন না।ভাবুন,হেলেন কেলার,স্টিফেন হকিংস-এর কথা।পৃথিবীতে এমন আরও অনেক দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবেন ।সব পরিস্থিতি,পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন।পৃথিবীর আরাম,আয়েস,সৌন্দর্য আপনার জন্যই সৃষ্টি!যতদিন বাঁচবেন,পৃথিবীকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করুন।কারণ,আপনি সৃষ্টির সেরা জীব ,মানুষ!আপনি মানুষের,এমনকি প্রকৃতির প্রতিটি জিনিষের ভালো করার চেষ্টা করুন।যেমন,পশু-পাখি,মাটি-গাছ,সবকিছুকে ভালোবাসুন ।
অসুস্থ হওয়ার আগে,আপনি যে কাজে নিয়োজিত ছিলেন,সম্ভব হলে সেটাই করুন।তবে হুইল চেয়ারে বসে যেভাবে করা সম্ভব হবে,সেভাবে কাজের প্রকৃতি বদলিয়ে নিন।আপনি যদি গৃহিণী হোন,তবে ঘরের কাজকর্মের তদারকি করুন।কে কখন স্কুল,কলেজ,অফিসে যাবে,ফিরবে,কখন কাকে নাস্তা,খাবার কাকে কী দিতে হবে,কী রান্না হবে,কোন কোন কাপড় ধুতে হবে,ঘর-দোর পরিষ্কার এবং গোছানোর তদারকি হুইল চেয়ারে বসেই করতে পারেন!এমনকী রান্নাটাও নিজের হাতে করতে পারেন।তবে আপনাকে সুবিধা করে নিতে হবে যেন হুইল চেয়ারে বসেই চুলা এবং অন্যান্য সবকিছু আপনার নাগালের মধ্যে থাকে।বাচ্চাদের পড়াশোনাটাও দেখিয়ে দিতে পারেন।আপনি যদি ডাক্তার হোন,তবে বসে বসে যেসব রোগির চিকিৎসা এবং অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ করা যায়,সেটা বেছে নিন!শিক্ষক হলে বসে বসে পড়ানোতে কোন সমস্যা নেই।অন্য চাকুরিজীবী হলেও অফিসের ভেতরের ডেস্কের কাজগুলো,লেখালেখি,কম্পিউটারের কাজ,এসব বেছে নিন।যদি ঘরেই থাকতে চান,তবে যাদের পড়াশোনা,লেখালেখি,সেলাই,ছবি আঁকা,গান,বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে আগ্রহ আছে,সেগুলোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।সৃজনশীল কাজে অবদান রাখার চেষ্টা করুন ।কম্পিউটারকে বন্ধু হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।অপরের ওপর নির্ভরতা কমাতে,হাতের কাছে মোবাইল,ল্যান্ড ফোন,কাগজ-কলম,ডায়রি,চশমা,পেপার,ম্যাগাজিন,বইপত্র,টিস্যুপেপার এবং বেডসাইড ড্রয়ারে ওষুধপত্র,ছোট্ট ব্যাগে কিছু টাকাপয়সা,প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,হাতের কাছে কলিং বেলের রিমোট ,ড্রয়ারের ওপর পানির বোতল,গ্লাস,কিছু শুকনো খাবার রাখুন ।অপ্রয়োজনে কাউকে ডাকাডাকি,তাদের ওপর নির্ভর করার কোন প্রয়োজন নেই!বরং নিজেকে সবার কাছে প্রয়োজনীয় করে তুলুন ।
এসব ছাড়াও প্যারালাইসিস রোগির ৩টি বিষয়ের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।যেমন:
১।বেড সোর-বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে কিছু জায়গায় চাপ ও ঘর্ষণের ফলে ঘা হয়ে যায়।
২।অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কন্ট্রাকচার-নাড়াচাড়ার অভাবে মাসল ওয়াসটিং,মাসল এট্রফি(মাংস শুকিয়ে যাওয়া),সংশ্লিষ্ট অঙ্গ বাঁকা হয়ে hvIqv,A¯^vfvweK আকৃতি ধা্রন করা।
৩।ব্লাডার,বাওয়েল(প্রস্রাব,পায়খানা)-অনেকের প্রস্রাব পায়খানা ¯^vfvweK ভাবে হয়না।বিশেষ করে প্রস্রাব,তাই মূত্রথলির বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
এখন আসছি কীভাবে এই ৩টি বিষয়ের যত্ন নিতে হবে সেটা বিস্তারিতভাবে বলছি:
১।বেড সোর-শরীরে যেন ঘা না হয়,সেজন্য একভাবে,এক কাতে বেশিক্ষণ শুয়ে থাকা যাবে না।২ঘন্টা পর পর অন্য দিকে কাত হয়ে,চিৎ বা উপুড় হয়ে শুতে হবে।এটাকে বলে পসচার চেঞ্জ(অবস্থান পরিবর্তন)।নিজে নিজে না পারলে ঘরের অন্য কারোর সাহায্য নিন।্হুইল চেয়ার বা অন্য কোথাও বসা অবস্থায় ১৫মিনিট পর পর ১ সেকেন্ড কোমর উঁচু করে wbZ¤^‡K চেয়ারের সিট বা অন্য বসার জায়গার সংস্পর্শ থেকে উঁচু কেও রাখুন,একে বলে লিফটিং।আজকাল বিশেষ ধরনের বিছানা পাওয়া যায় ,যার ওপর শুলে বেড সোরের সম্ভাবনা কমে যায়।সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং সবসময় দেখতে হবে কোথাও কোন ঘা হচ্ছে কিনা?কোথাও যেন শরীরের পানি জমে না থাকে।শীতের দিনে লোশন ব্যবহার করতে হবে।
২।কন্ট্রাকচার-এ থেকে বাঁচতে হলে,অবশ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে হবে।অভিজ্ঞ কোন ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নেবেন প্রথমদিকে।তারপর ঘরের যে কোন একজন শিখে নিয়ে,দিনে অন্তত ৩বার অঙ্গের প্রতিটি অস্থিসন্ধি নাড়াচাড়া করে দেবেন।ফ্লেকশন,এক্সটেনশন,এডাকশন,এবডাকশন,এসমস্ত নড়াচাড়ার বিভিন্ন দিক,এগুলি বুঝে নিতে হবে।কঠিন কিছু নয়।এভাবে নড়াচাড়া করে অঙ্গকে সচল রাখতে হবে,যাতে কোন অঙ্গ A¯^vfvweK আকার ধারন না করে,মাংসপেশী শুকিয়ে না যায়।
ফিজিও থেরাপি,অকুপেশনাল থেরাপির জন্য সাভার,চাপাইন-এর সি.আর.পি আপনার কাছাকাছি কোন ফিজিওথেরাপি ক্লিনিকসয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।বাসায় এসেও ফিজিওথেরাপিস্টরা ব্যায়াম করিয়ে যায় অনেকে।
৩।ব্লাডার,বাওয়েল-যে সকল রোগির প্রস্রাব ¯^vfvweKfv‡e হয়না,যেমন অনেক রোগির প্রস্রাব পুরো পরিস্কার হয়ে হয়না,মূত্রথলিতে কিছু পরিমান রয়ে যায়!আবার অনেকে প্রস্রাবের বেগ বুঝতে পারেনা!সে কারণে যখন তখন,কাপড় চোপড়,বিছানা-পত্র ভিজতে পারে।সাধারনঃত ৫০০মি.লি. প্রস্রাব মূত্রথলিতে জমা হলে ,একজন ¯^vfvweK মানুষ প্রস্রাবের বেগ অনুভব করে এবং তখন প্রস্রাব করে,প্রস্রাব আটকিয়েও রাখতে পারে ¯^vfvweK মানুষ বেশ কিছুক্ষণ।কিন্তু প্যরালাইসিস রোগির অনেকে অল্প পরিমাণ প্রস্রাব মূত্রথলিেেত জমা হলেই সেটা ধেও রাখতে পারেনা এবং একটু পর পর প্রস্রাব হয়!সে ক্ষেত্রে প্রতি ২ঘন্টা পরপর ২গ্লাস(৫০০মি.লি) পানি খেতে হবে,এর বেশি নয়,এবং ২ঘন্টা পরপর প্লেন রাবার ক্যাথেটার(রাবারের নল)-এর সাহায্যে,নিজেই প্রস্রাাব করতে হবে!এর নাম,‘ইন্টারমিটেন্ট সেলফ ক্যাথেটারাইজেশন’।তার জন্য একটা ঢাকনাওয়ালা বাটি পরিষ্কার করে,তার মধ্যে কয়েকটি রাবার ক্যাথেটার সাবান দিয়ে ধুয়ে,স্যাভলনমিশ্রিত পানিতে ঐ বাটিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।প্রস্রাব করার পূর্ব নিজ হাত দুটি সাবান পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।তারপর একটি পরিষ্কার কিডনি ট্রে বা ইউরিনাল(প্রস্রাব করার পাত্র),সামনে রেখে,রাবার ক্যাথেটার প্রস্রাবের রাস্তা(যে পথ দিয়ে প্রস্রাব বের হয়ে আসে,সেই ছিদ্র)দিয়ে ঢুকিয়ে প্রস্রাব সম্পূর্ণভাবে পুরোটা বের করতে হবে।যদি কোন রেসিডিউ মানে কিছু প্রস্রাব থলিতে জমে থাকে তবে ইনফেকশন হয়ে পরবর্তীতে কিডনী পর্য়ন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে!সেজন্য প্রচুর পানি খেতে হবে এবং ক্যাথেটার দিয়ে পুরো মূত্রথলি খালি করতে হবে।প্রস্রাবে যদি সাদা সাদা কোন ময়লা দেখা যায়,তবে প্রস্রাব পরীক্ষাকরিয়ে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।
প্যারালাইসিস রোগির যতদূর সম্ভব নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করে ভালোভাবে শুকনো করে শরীর মুছতে হবে।বগলের নিচে,উরুর কুঁচকি এবং অন্যান্য ভাঁজে যেন পানি জমে না থাকে,তাহলে ছত্রাকজনিত ইনফেকশন হবে।নরম কাপড় দিয়ে মুছে প্রয়োজনে পাউডার ব্যবহার করতে হবে।প্রস্রাব পায়খানার পরও পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।প্রয়োজনে পানি ব্যবহারের পূর্বে,টয়লেট পেপার দিয়ে মুছে নিলে ভালো হয়।গোসল ও টয়লেট করার জন্য কমোড বসানো হুইল চেয়ার বা চাকা লাগানো চেয়ার পাওয়া যায়।আপনি নিজেই গোসল,টয়লেট সারতে পারবেন।
রেগুলারিটিজ অর্থাৎ সময়,নিয়মানুবর্তিতা,শৃঙ্খলা মেনে চললে জীবন সুন্দরভাবে কেটে যাবে।সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই টয়লেটে বসবেন।অনেকে পায়খানার বেগও টের পায়না!তবে প্রতিদিন একই সময়ে টয়লেটে বসলে,এই একই সময়ে নিয়মিত পায়খানা হবে।দাঁত ব্রাস,হাতমুখ ধুয়ে,পরিচ্ছন্ন হয়ে নাস্তা খেয়ে নেবেন।অন্য সুস্থ মানুষের মত দৈনন্দিন কাজে জড়িয়ে পরবেন।যদি সকালে গোসলের অভ্যাস থাকে,সেটাও সেরে নেবেন।গোসল,খাওয়া-দাওয়া,বিশ্রাম,টি.ভি দেখা,বইপড়া,পত্রিকা পড়া,লেখালেখি,সেলাই,ইটারনেট সার্চ করা,প্রয়োজনীয় টেলিফোন যোগাযোগ সবই সময় মত করবেন।ঈদ,জন্মদিন,বিবাহ বার্ষিকী,নববর্ষ বাঅন্যন্য অনুষ্ঠানে গ্রিটিংস জানাবেন বা একবার হ্যালো বলবেন।খুব একাকীত্ব অনুভব করলে কাছের কোন eb&&ay,AvZ¥xq-¯^Rb‡`i সাথে টেলিফোনে কিছুক্ষন গল্প করবেন।সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেষ্টা করবেন।নিজের ঘর,বিছানা যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখবেন ।রোজ সম্ভব না হলেও ৩-৪দিন পরপর বিছানার চাদর,বালিশের কভার ধুতে দেবেন।মাঝে মাঝে ম্যাট্রেস,বালিশ রোদ লাগিয়ে ঝেড়ে নেবেন ।ঘরে ফুলদানীতে কিছু তাজা ফুল রাখুন।দু’একটি সবুজ গাছ ও মৌসুমী ফুলগাছ,টবে ঘরের কোণে বা ব্যালকনীতে রাখতে পারেন।পরিষ্কার পোশাক পরবেন ।অ্যালার্জি না থাকলে পাফিউম ব্যবহার করতে পারেন।
যারা ঘরে থাকেন তারা রোজ ভোরে এবং বিকেলে হুইল চেয়ারে বাইরের আলো-বাতাস,রোদ,শিশির গায়ে মেখে ঘুরে আসবেন ।যথাসম্ভব নিচতলায় অথবা লিফটওয়ালা বাড়িতে থাকতে চেষ্টা করবেন ।লজ্জা বা দুঃখে নিজেকে ঘরে বন্দী করে রাখবেন না।লজ্জা আপনার নয়,লজ্জা তাদের যারা আপনাকে দেখে বিদ্রুপ,সমালোচনা,রুঢ় আচরন,আঘাত আর মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলবে,সেইসব অমানুষদের।আপনি তো কারো ঘাড়ে বোঝা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন না,কাউকে বিরক্ত বা কষ্ট দিচ্ছেন না?কাঁদবেন না,মন শক্ত করুন ।মনে রাখবেন,পৃথিবীটা আপনারও।ফুলের গন্ধ নেবেন, পাতা ছুঁয়ে দেখবেন,গাছের কাছে যাবেন।পাখির ডাক শুনবেন,পাখির ওড়াওড়ি দেখবেন।নিজেকে যথাসম্ভব পরিবেশ অনুযায়ী সাজিয়ে গুছিয়ে,সবার সঙ্গে মানিয়ে নেবেন।প্রাণ খুলে সবার সঙ্গে কথা বলবেন,হাসবেন,প্রফুল্ল থাকবেন ।যদি সামর্থ্য থাকে পরিবার পরিজন নিয়ে বাইরে ঘুরে আসবেন ।সমুদ্র,নদী,বন,পাহাড় দেখে আসবেন ।খোলামেলা ঘরে থাকবেন ।মন খারাপ হলে জানালা দিয়ে আকাশ দেখবেন।সেখানে মেঘ-রোদের খেলা,চাঁদের হাসি,তারার মেলা,আর নীল-সাদা রঙে মন ভালো হয়ে যাবে!বৃষ্টি দেখবেন,দূরে সবুজ গাছের দিকে তাকাবেন,পাখিদের নীড়ে ফেরা চোখে পড়তেও পারে!কোকিলের ডাক শুনে বুঝবেন,বসন্ত এসে গেছে!রংধনুর সাত রঙ,ঈদের চাঁদ,পূর্ণিমা,সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত সবই দেখার চেষ্টা করবেন।জোছনা গায়ে মাখবেন,শিশিরে চুল ভেজাবেন।জীবন আপনার!পৃথিবী থেকে সুন্দরটুকু নিয়ে অসুন্দরকে দূেও রাখুন ।
সর্বোপরি প্রার্থনায় নিজেকে সমর্পন করবেন ।পরম করুণাময় আপনাকে অপার শান্তিতে আগলিয়ে রাখবেন ।নিজেকে কখনো করুণার পাত্রী ভাববেন না!আপনি নিজের জন্য,পৃথিবীর কল্যাণের জন্য কাজ করে যাবেন।যাদেও হাত-পা থেকেও কর্ম থেকে বিরত,চোখ থাকতেও অন্ধ,দেখার মত চোখ নেই,কাজ করার মত মন বা আগ্রহ নেই,তারাই অন্ধ,তারাই পঙ্গু।আপনি পঙ্গু নন!আপনি অন্যরকমভাবে সক্ষম,অক্ষম কখনো নন।ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন,আনন্দে থাকুন।আপনার অক্ষমতাকে জয় করুন ।

বাংলাদেশ সময়: ৩:৪৫:০২   ৭৪৩ বার পঠিত