শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৪

সুখকাঁটা-আল রিআন

Home Page » সাহিত্য » সুখকাঁটা-আল রিআন
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৪



untvvvvvigfgtled.jpg

চতুর্দশ পর্ব শুরু………..

পঁচিশ ছাব্বিশ দিন পরের কথা
বৈশাখ মাস এখনও শেষ হয় নাই। এই বিশ বাইশ দিনের মধ্যেই জমির ধান গুলো বেশ পাকিয়া এসেছে। হলুদ ধান গুলোতে সোনালী রং ধারন করিতে আরাম্ভ করিয়াছে। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে এই ধান কাটিতে আরাম্ব করিবে কৃষকেরা। ধান ক্ষেতের মধ্যে হাফ ফুটের মত পানি উঠিয়াছে। ধানের ফলন গতবারের মত না হলেও তেমন খারাপ হয়নি। মানিক এবার তার ভাইদের জমিতে কাজ করবেনা বলে সিধান্ত নিয়েছে। কারণ এই বিশ বাইশ দিনের মধ্যে গ্রামে ভুমি রেকর্ড জরিপ বসে ছিল। ভুমি রেকর্ড অফিসাররা পুরো পিংড়ী গ্রামকে ভাল মত মেপে জেপে দেখল গ্রামের মধ্যে নব্বই শতাংশ লোক সরকারী খাস জমি জবর দখল করে মিথ্য দলিল বানিয়ে ভোগ করিতে ছিল। এবং মানিকের নানার জমি কদম আলীর নামে মিথ্যা দলিলে বিশ বিঘার উপরে পেয়েছে। এবং মানিকের বড় দু ভাইয়ের মধ্যেও আট দশ বিঘার মত জমি রয়েছে। আরো অন্যান্য লোকের মধ্যে মানিক মোট ত্রিশ বিঘা নিয়ে মোট ষাট বিঘার মত জমি বুঝিয়া পাইয়াছে। মানিক এখন পুরো গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক। তার নানার জমিদারি উত্তরাধিকারে সে পেয়ে গেল। মানিকের জীবনে সুখের দিন আবার ফিরে এল। সারাদিন ক্ষেতের মধ্যে নামিয়া আর কাজ করিতে হইবেনা। দুচার জন লোক রাখিয়া নিজের ক্ষেতে কাজ করাইবার মত ক্ষমতা মানিকের এখন আছে। এত জমি পাইবার পরও তার মধ্যে কোন আনন্দ লক্ষ করা যায় না। এই কয়েক দিনে পরীর শোকে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে তাহার মুখ ভড়িয়া গেছে। আজ পঁচিশ দিন পরে পরী কোন কারণে যেন মানিকের সাথে দেখা করিতে এসছে। এত কিছুর পরও মানিক পরীকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে নাই। পরী তার কাছে এসে বলল “তুমি ক্যামন আছ চাষী। তোমার চেহারার এ কি অবস্থা হইছে। তুমি ভালা না থাকলে আমি কি কইরা ভালা থাকমু, কও ?”
“গরিব মাইনষের আর থাহা। ইঞ্জিনিয়ার তো হইতে পারিনাই। হইতে পারলে আইজ অন্তত ভালা থাকতাম।”
“তুমি আমারে আইজ হিংসা করতাছো। আমি একটু ভালা থাহি এইডা তুমি চাও না।”
“তোমার লগে হিংসা করমু আমি। যারে নিজের চাইতেও বেশি ভালাবাসছি তারে করমু হিংসা। আমি অশিক্ষিত হইতে পারি সত্য, তয় কাউরে ঠকাইয়া বড় হওনের স্বপ্ন দেহিনা। তোমার লগে আমার কিসের শত্র”তা ছিল কইতে পার পরী। ক্যান তুমি আমার সাধা সিধা মনডারে ভাংইগা চৌচির কইরা দিলা। সারা বছর ভালবাইসা শ্যষ কালে এক বুক কষ্ট দিয়া গেলা। কি ক্ষ্যাতি করছি তোমার।”
“চাষী, কয়দিন বাদে আমার গায় হলুদ হইব। তার দুই দিন বাদে নিকা। আমি বৈদেশির লগে চইল্লা গ্যালে আমার বাজানরে দ্যাখোনের আর কেউ নাই। তুমি বাজানের বিপদ আপদে একটু পাশে খাড়াইও।”

পরী শত হলেও নারী। তার মধ্যে লোভ থাকলেও মানবীক গুনাবলি কম ছিল না। সে জানে মানিককে সে ঠকাইতেছে। কিন্তু মানিকের দিকে তাকাইলে তার জীবনের রঙ্গিন স্বপ্নের পর্ব গুলো একেবারে শেষ হয়ে যাইবে। মানিকের জন্য তাহার দুঃখ হয়। পরী মনকে পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে রাখলেও চোখকে কিছু দিয়ে চাপা দিতে পারেনি। মানিকের সাথে কথা বলার সময় তার দু চোখ দিয়ে অশ্র” ঝড়েছিল।

মানিক পরীর চোখে জল ঝড়তে দেখে নিজেকে আর সামাল দিতে পারেনাই। নিজের হাত দিয়ে পরীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল “পরী তুমি আমার সামনে কাইন্দ না। তোমার চোক্ষে জল দ্যাখলে আমার দম যেন বন্ধ হইয়া আয়।”
“তোমার নামে তো এহন ম্যালা জমি আছে। ভালা দেইক্ষা একটা মাইয়ারে নিকা কইরা সংসার পাতো। দ্যখবা আমার চাইতেও তুমি ম্যালা সুখী হইবা।”
“এই কতা তুমি কইতে পারলা পরী। নিকার পর যদি কোন দিন বাপের ভিটায় আও, তয় হেদিন হুনবা আমি বাঁইচা নাই। আমার মরার খবর হুইনা তুমি কিন্তু কান্দবানা, জোড়ে জোড়ে চিৎকার কইরা হাসবা। সে হাসার শব্দো আমি কয়বোরে (কবরে) বইয়া হুনতে পারি। আমারে যেমনে ঠকাইলা তেমনি যেন শুভরে ঠকাইও না। প্রেমিকরে ঠকাইলে কিছু হয়না, সোয়ামীরে ঠকাইলে পাপ হইবো তোমার। নিকার পর আমার চাইতেও শুভরে বেশি ভালবাইস।”
“চাষী শ্যষ বারের মত আমারে তুমি হাসি মুখে বিদায় দেও।”
“না। আমি তা পারমু না।”
“তাইলে তুমি কি আমার পর হইয়া গেলা।”
“পর হইলে তো বিদায় দিতে কোন কষ্ট হইতনা। খুব বেশি ভালবাসি দেইখা তোমারে বিদায় দিতে মন চায়না। তুমি আমার জীবন হইতে চিরদিনের লাইগা চইল্লা যাইবা, আমি তা ভাবতে পারিনা।”
“আমি যাই। তোমার লগে আমার হয়তো আর কোন দিন দ্যাখা হইবনা। আইজ হয়তো তোমার লগে এই আমার শ্যষ দ্যাখা। নিজের দিকে খেয়াল রাইখ। দ্যাখো চাষী, চারিদিকে দ্যহো কি রকম বৃষ্টি হইতাছে। আর আমরা দুই জন বুড়া একটা বট গাছের তলায় খাড়াইয়া আছি। এই বট গাছ আর এই বৃষ্টি আমাগো প্রেমের সাক্ষী হইয়া থাকব। এই রকমের বৃষ্টি আবার হইলে আমি তোমার কতা মনে কইরা কানমু। আমি যে খানে থাকি যেমনে থাকি।”

পরী মানিককে দু লাইন কাব্য শুনিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে হাটা আরাম্ভ করল। মানিকও নাছর বান্দা কম নয় সে পরীকে কিছুতেই চোখের আড়াল করতে চায়না। তাই সে পরীকে বলল “আমি তোমার দারে আমার ভালবাসা ভিক্ষা চাইতাছি, তুমি নিস্বাঃর্থ হইয়া আমারে তোমার প্রেম খানি ভিক্ষা দাও। তুমি আমারে ছাইড়া চইল্লা গেলে কেডা আমার লগে রাগ কইরা গাল ফুলাইয়া থাকব। কেডা আমার লগে নাও নিয়া শাপলা ফুল তুলতে যাইব। কেডা আমার ধারে লাল চুড়ি ফিতার বায়না ধরবো। পরী তুমি ফিইরা আও। আমারে ছাইড়া তুমি যাইওনা। আমি তোমার পায়ে ধরি।”

আজ ক,দিন থেকেই কেন জানি
শুধু তোমার কথা মনে পরে
স্বপ্নের মাঝে ঘুমের ঘোড়ে-
দাও দেখা, তুমি এসে
বসো গিয়ে কোলটি ঘেসে-আমায় ভালবেসে।
কতটা সময় আমরা দু জন দুজনার কথা ভাবতাম-
আর স্বপ্নের রঙে ছবি আকতাম
আজ সেই দিন কোথায় ?
আমরা দু জন দুই দুনিয়ায় কঠিন বাস্তবতায়।
তুমি কি এখনও আগের মত
কথায় কথায় রাগ করে গাল ফুলিয়ে থাকো।
মনে কি পরে-রাগ ভাঙাতে
তোমার কাছে কত হতাম নত
বাঁশ বাগানে আধার রাতে, লাল গোলাপ হাতে
কারো আশায় কি পথ চেয়ে থাকো?
কত দিন ধরে দেখিনা তোমার
ঐ হাসি ভরা মুখ খানি।
কত শত দিন ধরে
শুনিনা তোমার ধ্বনি
তুমিই প্রথম নারী আমার জন্ম জনমের চেনা।
আর কোন দিন হবে কিনা
তোমার সাথে দেখা, এই পৃথিবীতে।
পর জন্মে , লক্ষ যুগ ধরে থাকব তোমারই অপেক্ষাতে।
তুমি স্বর্গের রাণী হয়ে আসবে
তখন শুধু আমায় ভালবাসবে।

পরী মানিকের কোন কথায় আর কান দিল না। তার হাটা সে চলমান রাখিল। পরী স্বার্থপর হলেও বোকা নয়। সে মানিকের কথায় সারা দিলে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাছাড়াও সে মানিকের প্রতি দুর্বল হতে পারে।
চারিদিকে র্নিঝুম বৃষ্টি। মাঠ ঘাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। মাটির রাস্তায় কাদা পানির জন্য হাটা যায় না। মানিক এখনও একা একা বট গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে। এই বট গাছটি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে। এখানে মানিক প্রায়ই আসে তবে মন খারাপ হলে বেশি আসে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৩:৪৯   ৪৪০ বার পঠিত