শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৪

ইলিশের উন্নতি, কিন্তু দুর্গতি জেলেদের

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ইলিশের উন্নতি, কিন্তু দুর্গতি জেলেদের
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৪



e.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ  গত দশ বছরে দেশে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন ইলিশ বেশি ধরা পড়েছে। রফতানি আয়েও অবদান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলেদের জীবনযাত্রার মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে জেলেরা খুবই নাজুক জীবনযাপন করছে।

‘এক্সপ্লোরিং কনসারভেশন লাইভহুড উইন-উইনস পিপিআরসি রিসার্চ ফাইন্ডিং অন হিলসা ফিশারম্যান’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলা ডেইলি স্টার আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ সভার শুরুতে ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।

‘সাসটেইনেবল হিলসা কনসারভেশন ফাইন্ডিংস ফর্ম পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসেপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বরিশাল, পটুয়াখালি, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর এই পাঁচ জেলায় ৩০০ পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণাপত্র উপস্থাপনের শুরুতে পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, জেলে সম্প্রদায় এখনো আর্থিক দিক দিয়ে স্বচ্ছল হতে পারেনি। দাদনের ওপর নির্ভর করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এতে অনেকটা মানববেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল জেলার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জেলের সরকারের আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের তা দেওয়া হয়নি। ৪০ কেজি চাল দেওয়ার পরিবর্তে একটু কম দেওয়া হচ্ছে ও শতকরা ৬৫ ভাগ জেলেকে তা সময়মতো দেওয়া হয়নি।

গবেষণায় জেলেদের জীবনযাপনের সার্বিক চিত্রে দেখা গেছে, যে সময়টুকু ইলিশের জাটকা ধরা বন্ধ থাকে সেই সময়ে ৯৯ দশমিক ৫২ শতাংশ জেলে ভিজিএফ এর চালের অপেক্ষায় থাকেন। ৩৭ শতাংশ জেলে বাকিতে খাবার কিনে খান আর ২৭ শতাংশ কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে জাটকা ধরেন।
এর মধ্যে এ সময়ে সঞ্চয় ভেঙ্গে খান ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ আর ৬ শতাংশ জেলে টাকার অভাবে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেন। তবে বিকল্প হিসাবে মাছের ব্যবসা করেন ৪ শতাংশ ও আর বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকেন আরো ২ শতাংশ জেলে।

গবেষণায় উঠে এসেছে অভাব থাকলেও জেলেদের অধিকাংশই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে চান না।

গবেষণায় ইলিশের গুরুত্ব: মাছের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) এর শতকরা ১২ ভাগ ইলিশ মাছ থেকে আসে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার ইলিশ ধরা হয়েছে। রফতানিতে অবদানের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে ইলিশ মাছ। তিন থেকে চার লাখ মৎস্যজীবী ইলিশ মাছের ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন।

২০০২-০৩ অর্থ বছরে ইলিশ ধরা পরেছিল ১ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টনে। নৌকায় ইলিশ মাছ ধরার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে ছিল শতকরা ৫২ দশমিক দুই ভাগ। ২০১১-১২ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৬৭ ভাগে।

তবে জেলেদের জীবিকার মান উন্নয়নে বেশ কাজ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় সভায়।

এ সময় জানানো হয়, এখন প্রতি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে ভিজিএফের চাল দেওয়া হচ্ছে। জেলেদের ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। যদিও অনেক আইডি কার্ড এখনো ইস্যু করা হয়নি।

পরামর্শ হিসেবে বক্তারা জানান, বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে জেলেদের আয়ের সব পথ বন্ধ থাকে। তখন তাদের শুধু চাল দিয়ে সহযোগিতা করে কোনো লাভ হয় না। এ কারণে তাদের বিকল্প পেশায় নিয়ে যাওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। ইলিশ সংরক্ষণ প্রোগ্রাম নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কতজন জেলে মাছ ধরতে গেলেন আর ফিরে আসলেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। এর ফলে অনেকে হারিয়ে গেলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়া অনেকের মরদেহ না পাওয়া গেলে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না। এরকম নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে জেলেরা জীবনযাপন করছেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান, মৎস্য গবেষক প্রফেসর ড. এম এ ওয়াহাব, হতদরিদ্র উন্নয়ন সোসাইটি চেয়ারম্যান আবু বক্কার সিদ্দিক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫১:৩২   ৩৮৭ বার পঠিত