শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৪
নিম্নমানের মোবাইল সেটে বাজার সয়লাব
Home Page » প্রথমপাতা » নিম্নমানের মোবাইল সেটে বাজার সয়লাববঙ্গ-নিউজ ডটকমঃনকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেটে বাজার সয়লাব। রাজধানীসহ সারা দেশে দেদার বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের এই মোবাইল সেট। এসব কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে, আর একশ্রেণীর মুনাফাখোর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সূত্র জানায়, এসব মোবাইল সেটে ব্যবহৃত হচ্ছে ভুয়া আইএমই নম্বর। আর কোনো কোনো সেটে আইএমই নম্বরই নেই। ফলে এগুলো অপরাধীরা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এফএম রেডিও, অডিও, ভিডিও, ক্যামেরা, ইন্টারনেট, ডাবল সিম কার্ড, গেইমস, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ও ব্লুটুথ সংযুক্ত ফ্যাশন, ব্লুটুথ, এমপি ফোর, এলকাটেল, টেকনো, এইচটিটি, ফরমি, সি ফাইভ, জি ফাইভ, উইয়িং, লি ফোন, ডিস্পিল, গিলভ, এমটিভি, ডিডাব্লুএস, কিংসটেল, কুয়িক, শেয়ার ও ভিএস অ্যান্ড মিসহ শতাধিক ভুয়া ব্র্যান্ডের চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মোবাইল সেট বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লার দোকান ও শোরুমে। রাজধানীসহ সারা দেশে এরূপ লক্ষাধিক দোকান ও শোরুমে এই নিম্নমানের মোবাইল সেট বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। নকিয়া, স্যামসাং, আইফোন, সনি এরিকসন ও সনি ছাড়াও গুণগত মানসম্পন্ন শিম্ফনি, ওয়ালটন, মাইক্রোম্যাক্স সেট এসব শোরুমে বিক্রি করা না হলেও এর নকল সেট বিক্রিতে দোকানীরা বেশি আগ্রহী। এসব শোরুমের সামনে তিন হাজার টাকার সেট মাত্র এক হাজার টাকায় পাওয়া যায় এমন চটকদার ব্যানার ঝুলিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হয়। জুয়েলারি দোকানের মতো ডেকোরেশন করা এসব শোরুমে বিশ্ববিখ্যাত ও মানসম্পন্ন মোবাইল সেটের দাম ক্রেতার কাছে চাওয়া হয় কোম্পানির দেয়া রেটের চেয়ে বেশি যাতে করে ক্রেতা নকল এবং নিম্নমানের চায়না ও ভারতীয় মোবাইল সেট কিনতে আগ্রহী হয়। জানা যায়, নকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেট কিনে ক্রেতাকে যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। কিছু দিন ব্যবহার করার পর তা নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য স্কিন টাচ মোবাইল সেটও বিক্রি হয়। এসব মোবাইল যারা ব্যবহার করেছেন তারা বলেন, স্কিন টাচ মোবাইল বেশি নষ্ট হয়। আর অন্যান্য সেট অত্যধিক গরম হয় এবং স্পিকার, কিপ্যাডসহ বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের মতে চীন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানিকৃত এক কোটিরও বেশি মোবাইল সেট প্রতি বছর দেশে বিক্রি হচ্ছে। দুই হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল সেট বিক্রি হয় ৬০ শতাংশ, ২ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ এবং ৫ টাকার ওপরে ১০ শতাংশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেটের পাইকারি মার্কেট হচ্ছে রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ও বসুন্ধরা সিটি। এসব মার্কেট থেকে প্রতিদিন নকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেট পাইকারিভাবে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্টেডিয়াম মার্কেটের নিচে নকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেট বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। নকল ও খোলস পাল্টানো নিম্নমানের মোবাইল দেখে কারো বুঝার উপায় নেই যে, কোনটি আসল আর কোনটি নকল। চোরাইপথে আসা নকল সেট গুলো দেশে আসা মাত্রই স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় খোলস বদলে তা করা হয় নামীদামি ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট। চীন ও ভারত থেকে মানহীন আমদানিকৃত সেটগুলো নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এসব সেটে ইআইআর (ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার) নম্বর থাকে না। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্নমানের সেটগুলোর মধ্যে থাকা রেডিয়েশনের গতি স্বাভাবিক সেটের তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশি যা মানবদেহে ক্যান্সারসহ জটিল রোগ সৃষ্টি করে। জানা যায়, জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল) বা ইউএমটিএস (ইউনিভার্সেল মোবাইল টেলি কমিউনিকেশন সিস্টেম) মোবাইল সেটে ১৫ বা ১৭ ডিজিটের একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকে। এই সেটটি যখন যে নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয় তখন আইএমইআই নম্বরটি সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সেট কোনো কারণে হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে বা ব্যবহারকারীর সম্পর্কে জানতে এই নম্বরটির প্রয়োজন পড়ে। সেট ও সিম কার্ডটি অকার্যকর করে দিতেও এই নম্বরটি ব্যবহৃত হয়। *#০৬# টিপলে সেটের পর্দায় নম্বরটি ভেসে উঠে। এটি বিএবিটি বা ব্রিটিশ অ্যাপ্রুভাল বোর্ড ফর টেলি কমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পাশের দেশগুলোতেও যেমন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় আইএমআই নম্বর বিহীন অথবা ভুয়া আইএমআইযুক্ত মোবাইল সেট বাজারজাত, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ব্রিটিশের বিএবিটির সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এই নিয়ম মানতে বাধ্য বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আমাদের দেশে প্রতি বছর চোরাই পথে কোটি কোটি টাকার ভুয়া আইএমআই নম্বরযুক্ত এবং নম্বর বিহীন মোবাইল সেট আসছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যাতে শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য অপরাধীরা আইএমইআই নম্বরবিহীন এসব সেট ব্যবহার করছে। জানা যায়, ১০ থেকে ৩০ ডলারে চীন থেকে আমদানি করে এখানে বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ ডলারে। উল্লেখ্য, খোদ রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা শত শত মোবাইলের শোরুমে চায়নার নকল ও নিম্নমানের নম্বরবিহীন মোবাইলের ব্যবসায় কয়েক বছর ধরে জমজমাটভাবে চলে আসছে। কিন্তু এসব দেখার জন্য যে সংস্থারগুলো রয়েছে তা অনেকটাই অকার্যকর। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, এ নিয়ে এখনো পুলিশ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। এ রকম অভিযোগ পাওয়া গেলে তখন বিষয়টি দেখা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৬:৫২ ৫৭৫ বার পঠিত