বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৪
লন্ডনে ভাল নেই তারেক রহমান
Home Page » জাতীয় » লন্ডনে ভাল নেই তারেক রহমানবঙ্গ-নিউজ ডটকম:: রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এখনো আশাজাগানিয়া সাফল্যের দেখা পাননি লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উল্টো এখন তাঁর নানা সিদ্বান্তে নিজের দলের নেতাকর্মীরাই ভুগছেনঁ হতাশায়।
১/১১র পরিবর্তিত প্রেড়্গাপটে দেশ ছাড়ার পর বছর দুয়েক আগে লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির তৃনমুল সমাবেশে বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে ফের প্রকাশ্য রাজনীতির পথে নিজের যাত্রা শুরু করেন তারেক। পরিবর্তিত বাস্তবতা আর প্রেড়্গাপটের ভিন্নতার কারনে দলের নেতাকর্মীরা তো বটেই, ইতিবাচক অন্য এক তারেক রহমানের প্রত্যাশায় পথ চেয়ে ছিলেন তখন অনেকেই। তাদের বক্তব্য ছিল, সব “কথিত” অপপ্রচারের অপতৎপরতার বাইরে এসে স্বকীয় ইমেজে আর অতীতের ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াবেন তারেক। বেগম খালেদা জিয়ার পথ ধরেই হাল ধরবেন নিজের দল আর জাতীয় রাজনীতির জাতীয়তাবাদী ধারার।
কিন্তু এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। জাতীয় নেতৃত্বের বিষয় দুরে থাক,খোদ যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে তারেক রহমানের অনেক বিতর্কিত সিদ্বান্তô আর বক্তব্যও। দলীয় হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হবার ভয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যদিও গনমাধ্যমের কাছে সরাসরি মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। কিন্তু নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে ড়্গোভ আর হতাশা বিনিময় করছেন। নীরব অভিমানে অনেকে রাজনীতিতেও নিস্ড়্গৃয় হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন,জিয়াউর রহমান আর খালেদা জিয়ার জৈষ্ঠ্য পুত্রই যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্বান্ত না নিতে পারেন, সিদ্বান্ত আটকে থাকে দালালদের বলয়বৃত্তে- তবে কর্মীরা কার কাছে যাবে। এই যদি হয় বাস্তবতা,তবে কেমন করে আন্দোলন পাবে সফলতা-টেবিল টকের আলোচনায় নেতাকর্মীদের আলোচ্য বিষয় এখন এটিই।
রাজনৈতিক বিশেস্নষক,বিএনপির নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের একাধিক নেতা সম্প্রতি লন্ডন সফরে এসে কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সাথে। কথা হয় যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিওর নেতাদের সাথেও। তারা নাম না প্রকাশের শর্তে কথা বলেছেন,যুক্তরাজ্য বিএনপির কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সর্বশেষ তারেক রহমানের উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয় নিয়েও।
বিতর্কে বিতর্কিত উপদেষ্টা নিয়োগঃ
চলতি সপ্তাহে ঘোষিত যুক্তরাজ্য যুবদলের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এ আহবায়ক কমিটিতে একজন আহবায়ক থাকলেও বিরল ব্যাতিক্রমের নজীর সৃষ্টি করে এ কমিটিতে ঠাইঁ পাননি কোন যুগ্ম আহবায়ক। তারেক রহমানের সভার হল ভাড়া পরিশোধ নিয়ে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনার মতো অনেক স্পর্শকাতর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কি‘ আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত রির্পোট।
এ সপ্তাহে তারেক রহমানের আরো তিন নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশিত হয় গনমাধ্যমে। জানা গেছে,তারেক রহমানের এই উপদেষ্টা বহরের বিষয় নিয়ে দলের ভেতরে চলছে অন্তরাল তোলপাড়। যদিও এসব উপদেষ্টাদের নিয়োগের ব্যাপারে দলীয় দায়িত্বশীল কোন নেতার বক্তব্য বা প্রেস রিলিজ যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত হয়নি। বিএনপির সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বা সিনিওর ভাইস চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি উলেস্নখ নেই। কিন্তু নিয়োগের গঠনতান্ত্রিক বিষয়টি ছাপিয়ে বিতর্ক চলছে তারেক রহমানের এসব উপদেষ্টাদের যোগ্যতা নিয়ে। অনেকে বলছেন, এ নিয়োগ সাংঘর্ষিক সিদ্বান্ত। এখন পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া তারেক রহমানের উপদেষ্টাদের মধ্যে মাহদী আমিন বা ব্যারিষ্টার এম এ সালামের মত দুএকজন ছাড়া অন্যদের দলের নেতাকর্মীরাই চেনেন না।
উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকে দলে যোগ দিয়েছেন বছর দুয়েক আগে,কারো কারো ড়্গেত্রে গুরম্নত্বপুর্ন দলীয় পদে থাকার পরও করা হয়েছে উপদেষ্টা। লবিং আর পদবির তদবিরে চলছে অতিমুল্যায়নের উৎসব। যদিও পাশ্চাত্যের রাজনীতিতে শীর্ষ নেতাদের উপদেষ্টা নিয়োগ রীতি হিসেবে প্রতিষ্টিত। কি‘, গত সপ্তাহে তারেক রহমানের নতুন তিন উপদেষ্ঠা নিয়োগের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তারেক রহমান এ উপদেষ্ঠা নিয়োগের মাধ্যমে দলকে সমৃদ্ধ করছেন নাকি উপদেষ্ঠাদের সামাজিকভাবে পরিচিত করছেন। কারন তারা বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ভাবে দূরের কথা, সামাজিকভাবেও পরিচিত নন। নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন , সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টাদের একজন ছিলেন গণফোরামের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ধারার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। লন্ডনে এসেও গণফোরামের কমিটি গঠনের জন্য সক্রিয় ছিলেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে ভিড়েন তারেক রহমানের কাছে। আরেক উপদেষ্টা, জাসদের রাজনীতির একসময়ের একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলেন। কখনো ছাত্রদল বা বিএনপি করেছেন এমন নজির নেই।
তারেককে ঘিরে নেপথ্যের খেলাঃ
লন্ডনে পর্দার অন্তরালের রাজনীতির কুটকৌশলের নানামুখী খেলা চলছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপির সিনিওর ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে। তারেক রহমান লন্ডনে কার সাথে কোথায় সাড়্গাত করছেন,গোপন বৈঠকের আলোচনার বিষয়ব‘ আর সিদ্বান্তের সব তথ্যই মুহুর্তে হাত বদল হচ্ছে। সেসব খবরাখবর পৌছে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে।
সম্প্রতি সপ্তাহ তিনেক আগে একদিনের সফরে তারেক রহমানের সাথে সাড়্গাত করতে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহাসচিকে এয়ারপোর্ট থেকে তারেক রহমানের কাছে পৌছে দেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারন সম্পাদক।
হোটেল কিংসষ্টন লজে তারেক রহমানের সাথে বৈঠকের একটি অডিও এরপরই হাতবদল হয় বলে নিশ্চিত করেছে একটি সুত্র।
এর আগে লন্ডন সফরে আসা সদ্য প্রয়াত ড· পিয়াস করিমের সাথে ইষ্ট লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের একটি হোটেল কড়্গে তারেক রহমানের সাড়্গাত ও আলোচনার বিষয়ব‘ও প্রকাশ্যে চলে আসে।
লন্ডনে তারেক রহমানের ব্যায় নির্বাহের অর্থের উৎস নিয়েও ছড়ানো হচ্ছে গুঞ্জনের ডালপালা। তারেক রহমানের দৈনন্দিন ব্যায় নির্বাহের জন্য ব্রাড়্গনবাড়িয়ার একজন বিএনপি নেতা যিনি পেশায় প্রকৌশলী,মানিক নামে রফতানীকারক এক ব্যাবসায়ী এবং অপর এক ব্যাবসায়ী কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় লেনদেনে সম্পৃক্ত এ নিয়ে খোদ দলের অভ্যন্তরেই রয়েছে নানা মুখরোচক গল্প। আর এসব গল্প তারেককে ঘিরে গড়ে উঠা এখানকার তিনটি বলয়ের পরস্পরবিরোধীরা প্রতিপড়্গকে ফাঁসাতে কৌশলে প্রচার করছেন বলে জানা গেছে।
পদবির তদবিরে অস্থির তারেকঃ
লন্ডনে আসার পর শুরুতে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অনেকটা নড়্গত্রের দুরত্বেই থাকতেন তারেক রহমান। তখন তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম ছিলেন তৎকালীন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি প্রয়াত কমর উদ্দীন। কি‘ পরিি’তির পরিবর্তনের প্রেড়্গাপটে তারেক রহমান এখন দলের নেতাকর্মীদের নিয়মিতই সাড়্গাত দি”েছন। লন্ডনের কিংসষ্টনে তার বাড়ীর অদুরে হোটেল কিংসষ্টন লজের লবিতে প্রায় বিকেলেই তিনি বসছেন নেতাকর্মীদের সাথে। আর এখানেই পদ আর পদবির জন্য নেতারা ধরনা দেন নিয়মিত। দেখা পেতে দেশ থেকেও তারঁ আসেন নানা মাধ্যমে। নেতার দেখা পাবার এ পথটুকু পাড়ি দিতেও বিভিন্ন পয়েন্টে ভাইয়ার কাছের মানুষদের খুশি করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
কিংসষ্টন লজ-
কিংসষ্টন লজ হোটেল ও এ হোটেলের লবিকে ঘিরে লন্ডনে গড়ে উঠেছে তারেক রহমানের কাছে মানুষ দাবীদারদের তিনটি বলয়। এখানে নিয়মিত যেমন অক্সফোর্ড,ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুন কিছু ব্যাক্তি,দলের আর্ন্তজাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান,জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মলিস্নক,সাংবাদিক সালেহ শিবলী,সলিসিটর বিপস্নব পোদ্দারদের যেমন যাতায়াত আছে তেমনি তারেক রহমানকে ঘিরে গড়ে উঠা এসব বলয়ের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন দেশের কিছু রাজনৈতিক দালাল ও গনমাধ্যমের মালিক দাবীদাররাও। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কমিটি বানিজ্যের মাধ্যমে দলের পদবি বিক্রি,মনোনয়ন পাইয়ে দেবার আশায় চাদাঁবাজিরও।
প্রয়াত কমর উদ্দীনের হাত ধরে তারেক রহমানের কাছেঁ ঠাই পান বাংলাদেশ থেকে ষ্টুডেন্ট ভিসায় আসা একজন শিড়্গার্থী। তারেক রহমান ফরমাশ খাটা এই পার্সোনাল এসিষ্টেন্ট এখন আভিভুর্ত হয়েছেন তারেকের পার্সোনাল সেক্রেটারী রুপে। আর এর বদান্যতায় দেশে বসবাসরত তারঁ বড় ভাই দু বছরের ব্যাবধানে এক ব্যাবসায়ীর ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছেন বিশাল বিত্ত-বৈভব। একসময় লন্ডনের রাস্তায় লিফলেট বিলির কাজ করা ব্যাক্তিরাও তারেক রহমানের ছায়ায় বছর না ঘুরতেই পেয়েছেন অর্থনৈতিক প্রতিষ্টা।
আর এরাই মুলত তারেক রহমানকে প্রভাবিত করছেন নিজেদের ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের লড়্গে। দিচ্ছেন প্ররোচনা। ফলতঃ তাদের পরিকল্পিত আর সমন্বিত চক্রান্তের জালে ভুল সিদ্বান্ত নিচ্ছেন তারেক। তারেকের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে দলের ত্যাগী,নিবেদিতপ্রান আর পরিড়্গীত নেতাদের। ভীড় কেবল হাইব্রিডদের। আর নিজের স্বভাবসুলভ জেদি মনোভাবের কারনে পরে ভুল বুঝতে পারলেও ভুল সিদ্বান্ত নেয়া আগের অবস্থানেই অটল থাকছেন তারেক। তারেক মনে করছেন,নিজের আগে নেয়া সিদ্বান্তের ড়্গেত্রে পরে সরে আসা স্ব-বিরোধীতারই নামান্তর। এসব ছদ্মবেশী দালালদের হাত ধরেই বিভিন্ন পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত হ”েছ অপেড়্গাকৃত যোগ্যতর নন এমন নেতৃত্ব। এমনকি এসব সুবিধাভোগীরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাজ্য বিএনপি সহ ইউরোপজুড়ে বিএনপিতে সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে সিলেটী-নন সিলেটী এমন আঞ্চলিক বলয়। তারেক রহমানের কাছে মানুষ দাবীদার এমন অনেকের দেশে বা লন্ডনে কোন পেশা না থাকলেও বনে গেছেন বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক। তারেক রহমানের কাছে এসব পড়্গ গুলোর এক পড়্গ অন্য পড়্গকে ঘায়েল করতে ছুটঁছেন সাংবাদিকদের কাছে,তুলে ধরছেন নিজেদের নানা সংববেদনশীল তথ্য। উদ্দেশ্য ‘নিউজ‘ করিয়ে প্রতিপড়্গকে শায়েস্তা করা।
আর তারেক রহমান এখনো বৈঠকী আড্ডায় চা আর স্যান্ডউইচের বিল দিতেই হিসেব করেন এমন ভাষ্যও অনেকের। তবে সবকিছুর পর তারেক রহমানের স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা, মানুষকে কাছে টানার সড়্গমতার সমালোচনা তার কট্টর সমালোচকরাও করেন না। আর এখন নিজের সতর্কতার সড়্গমতা দিয়ে সব অর্থেই কঠিন এ সময়কে আদৌ কতখানি জয় করতে পারেন তারেক, এটিই এখন দেখবার বিষয়-এমনটিই বলছেন বিশেস্নষকরা।সূত্র: আমাদের সময়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২২:৫৪ ৪৫১ বার পঠিত