মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৪

পর্ণ একটি ভয়ানক ব্যাধি,পর্ণ থেকে মুক্তির উপায় পড়ুন

Home Page » এক্সক্লুসিভ » পর্ণ একটি ভয়ানক ব্যাধি,পর্ণ থেকে মুক্তির উপায় পড়ুন
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৪



imafggges.jpg

প্স্টাফ-রিপোটার:বঙ্গ-নিউজ:প্রথম পর্বে সেক্স এডুকেশন এবং পর্ণ এর মধ্যে পার্থক্য কোথায় এবং দ্বিতীয় পর্বে পর্ণ আমাদের ব্রেইন কে ড্যামেজ করে কিভাবে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে সেটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে আলোচনা করব কিভাবে আমরা পর্ণ দেখার মত কু-অভ্যাস থেকে মুক্ত হতে পারব সেটা নিয়ে।

আমি জানি, শুধু লেখার মাধ্যমে কারো পর্ণ আসক্তি দূর করা কঠিন একটা কাজ। এই লেখা যে আপনাকে রাতারাতি বদলে দিবে আমি সে আশা করছিনা বা আপনিও করুন তা চাইনা। লেখা টি পড়ুন, চিন্তা করুন তারপর নিজেকে বদলানোর চেষ্টা শুরু করুন। একদিন বা দুইদিনে পারবেন না, আপনাকে ডে বাই ডে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করে যেতে হবে। এবং ইনশাআল্লাহ আপনি সফলকাম হবেন, যেমন টি আমি হতে পেরেছি।

আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, অনেকেই মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারক দিক এবং এটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে লেখার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আজ শুধু পর্ণ থেকে মুক্ত হবার উপায় নিয়ে আলোচনা করব, কারন এ পোস্টে মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারক দিক এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে যা পড়তে গিয়ে অনেকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে পারে।
তাই পরবর্তী পোস্টে মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারক দিক এবং এটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

অলরাইট। আমার অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করা যাক।

পর্ণের সাথে আমার প্রথম পরিচয় স্কুল লাইফে। ক্লাস নাইন কি টেনে পড়ি। তখন হাতে-হাতে মোবাইল ছিলোনা, ল্যাপটপ-কম্পিউটার ছিলনা। সাইবার ক্যাফে ছাড়া কম্পিউটার বা মুঠোফোনে ইন্টারনেটের সুবিধার কথা কল্পনাতেও আসতোনা। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিবেশী এক বড় ভাই জুনিয়র-সিনিয়র সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে টিভি এবং ভিসিআর ভাড়া করে আনলেন। ভাড়া করতে যাবার আগে বড়রা উনার কানে-কানে নীলছবির ক্যাসেট আনার কথা মনে করিয়ে দিতে ভুললোনা। ওটা নিয়ে আমাদের ছোটদেরও অবশ্য গোপন আগ্রহের কমতি ছিলনা!

সেবারই প্রথম পরিচয় হল নীলরঙা পর্ণের সাথে। তারপর আস্তে আস্তে মোবাইলে ইন্টারনেট এলো, নিজের কম্পিউটার হলো। পর্ণ আরো সহজলভ্য হয়ে গেলো।

shornomrigo_1413136783_1-watchingpornonline

একটা সময় গেছে, যখন সাইবার ক্যাফে তে গেলেই মেইল চেকিং আর ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটের পাশাপাশি পর্ণ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে প্রচুর সময় নষ্ট করেছি। যদিও সেভাবে আসক্তি ছিলনা, কিন্তু মাঝেমাঝে দেখতে ইচ্ছে করতো।

ইন্টারনেটে অহেতুক টাইমপাসিং এর সময় টা পেরিয়ে এক সময় ব্লগের সাথে যুক্ত হলাম। ইংরেজী ব্লগ গুলোও ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম। আস্তে আস্তে ইন্টারনেটের পজিটিভ দিকগুলোর প্রতি ইন্টারেস্ট তৈরি হলো এবং পর্ণের কুফল বা ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম। তারপর থেকে পর্ণ দেখা ছাড়লাম।

আসলে এই ‘ছাড়লাম’ কথাটা যত সহজে এখন বলছি, ব্যাপার টা তত সহজ ছিলনা। অনেক কৌশল খাটাতে হয়েছে, অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে পর্ণ দেখা ছাড়তে গিয়ে। আমার সে অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত কৌশল এবং উপায় গুলো সংক্ষেপে আলোচনার চেষ্টা করবো। আশা করি সেগুলো আপনাদেরও কাজে আসবে।

মাসখানেক আগে পর্ণ দেখার কুফল নিয়ে পোস্ট টি লেখার পরে অনেকের সাথে কথা হয়েছিলো। অনেকে পর্ণ দেখা নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং সমস্যার কথা খুলে বলেছিলেন এবং এ অবস্থা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। ওদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এবং ওদের সমস্যাগুলো জানার পরে এতটাই শকড হয়েছিলাম যে বেশ কিছুদিন এটা নিয়ে ভার্চুয়াল এবং রিয়েল লাইফ দুই জায়গাতে অনেকের সাথেই খোলামেলা আলোচনা করেছিলাম। কেস স্টাডি করতে গিয়ে অবস্থা যা দেখলাম, পর্ণ আমাদের সমাজে স্কুল পড়ুয়া পিচ্চি পিচ্চি ছোট ভাই-বোন থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে নাম না জানা গোপন ভাইরাসের মত ছড়িয়ে গেছে। কোনো সন্দেহ নেই এভাবে চলতে থাকলে পর্ণগ্রাফি এক সময় আমাদের জাতীয় সমস্যা হিসাবে দাড়াবে।

shornomrigo_1413136922_2-rr

জাতীয় সমস্যার চিন্তা দূরে রেখে আপাতত নিজেদের চিন্তা করি। অনেকেই পর্ণগ্রাফির আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সফল হচ্ছেন না। মনের সাথে জোর করে পর্ণ থেকে দূরে থাকলেও কিছুদিন পর আবারো পর্ণের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে। কারন টা অবসেসিভ কম্পালসিভ সাইকল। এই অবসেসিভ কম্পালসিভ সাইকল এর কারনে পর্ণগ্রাফি থেকে দূরে থাকা বা ত্যাগ করা টা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে। নিচের ইমেজ টি ভালভাবে লক্ষ্য করুন।

প্রথমে আপনার মাথায় আনওয়ান্টেড সেক্সুয়াল চিন্তাভাবনা আসছে, আপনি সেটাকে সচেতনভাবে দূর করার চেষ্টা করছেন এবং ব্যর্থ হচ্ছেন। এক পর্যায়ে আপনি সেক্সুয়াল চিন্তাভাবনার কাছে সারেন্ডার করছেন এবং পর্ণ দেখছেন, তারপর পর্ণ দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীর এবং মন উত্তেজিত হচ্ছে।

শরীর এবং মনের এই টেম্পটেশন এবং টেনশন কে রিলিজ দিতে আপনি মাস্টারবেট করছেন, এবং মজার ব্যাপার হলো এই পর্ণ দেখা বা মাস্টারবেশনের পর আপনার মধ্যে এক ধরণের গিল্ট বা অনুশোচনা চলে আসছে যে এরকম আর কখনো করবনা। কিন্তু কিছুদিন পর কোনো মুভি দেখতে বসে অথবা অন্য কোনো কারনে বাই এনি চান্স আপনার মধ্যে আবারো সেক্সুয়াল চিন্তাভাবনা ঢুকে যায় এবং এই অবসেসিভ সাইকল টা এভাবেই চলতে থাকে।

প্রশ্ন আসতে পারে, এই অবসেসিভ সাইকল টা ব্রেক করা সম্ভব কিনা। ইয়েস, এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। সাউন্ডস ইজি, করাটা একটু কঠিন। কিন্তু মন কে সেট করতে পারলে সম্ভব। এবার আসুন দেখি মন কে আমরা কিভাবে সেট করব।

বেশ আগের ঘটনা। অলিম্পিকের মেইন ইভেন্টের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এক হাই জাম্পার প্র্যাক্টিস চলাকালীন একটা পাচিল টপকাতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক চেষ্টার পরও কোনোভাবেই পাচিলের ওপাশে যেতে পারছেন না। বিফল হয়ে উনি হতাশ হয়ে বসে আছেন। ব্যাপার টি তার ইন্সট্রাক্টরের দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি হাই জাম্পারের কাছে এসে শুধুমাত্র একটি কথাই বললেন-

“থ্রো ইয়োর মাইন্ড ওভার দ্য পিলার, এ্যান্ড ইয়োর বডি উইল ফলো”

বুদ্ধিমানের জন্য ইশারা-ই যথেষ্ঠ। ব্যস! শীষ্যের জন্য ইন্সট্রাক্টরের এই বাক্য টি জাদুমন্ত্রের মত কাজ করল।

আমাদের জীবন টা অলিম্পিক এর চেয়েও অনেক অনেক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আসর। এই আসরে আমরা অগুনতি ইভেন্টের মুখোমুখি হই। কঠিন কাজ, উদ্যোগ বা পরিকল্পনার মুখোমুখি হয়ে আমরাও দোটানায় ভুগতে থাকি। ফলে আমরা সেই কাজ, উদ্যোগ বা পরিকল্পনাতে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারিনা। কারন আমাদের মনের অর্ধেকের বেশি জুড়েই তখন ব্যর্থতার ভয়, কনফিউশন এবং হতাশা কাজ করে। কিন্তু মন কে একবার তার পথে সেট করে দিতে পারলে যে কোনো কাজই আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে।

প্লান বা উদ্যোগ ফল করলে কি হবে সেটা নিয়ে মাথা খারাপ করলে আপনার এনার্জি ফল করবে এবং উদ্যম কমে যাবে। তাই বরং সফল হলে কি হবে সেটা নিয়ে বেশি ভাবুন এবং সেই ভাবনা টা কে মনের ভেতরে গেঁথে রাখুন। মন কে কখনো সেকন্ড অপশন চুজ করার সুযোগ দিবেন না। এতে মন দোটানায় পড়ে যায়।

আপনার গোল যেটা, ভাবনার খোরাক হিসাবে মন কে সেটাই দিন। যেকোনো একদিকে গোল সেট করে আগানোর ফলে মন স্থির হয়ে তার সমস্ত এনার্জি সেদিকে ছড়িয়ে দেয়। এতে মনের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে যায় এবং শরীর ও তখন মনের কমান্ড অনুযায়ী সাড়া দেয়।

পাচিল টা ডিঙ্গাতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সবার আগে মন টাকে পাচিলের ওপাশে ছুড়ে দিন, তাহলে শরীর ও আপনার মন কে অনুসরণ করবে। সেজন্য পর্ণ থেকে নিজেদের কে মুক্ত করতে হলে প্রথমেই আমাদের মন কে সেট করতে হবে।
তবে মন কে সেট করার আগে পর্ণগ্রাফি থেকে দূরে থাকতে চাইছেন কেন, এই কারন বা কারন গুলো আপনাকে খুজে বের করতে হবে। পর্ণগ্রাফি আপনার মধ্যে কি ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করছে সেটা আগে খুজে বের করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন পর্ণগ্রাফি থেকে দূরে থাকবেন। বেনিফিট টা কি।
যদি নিজে থেকে কারন গুলো খুজে বের করতে না পারেন পূর্বের পোস্টের সহায়তা নিন। পূর্বের পোস্ট থেকে পর্ণগ্রাফি কি ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করছে বা করতে পারে সে সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাবেন। পর্ণগ্রাফি দূরে থাকার কারন খুজে বের করতে পারলে সেটা আপনার জন্য বেস্ট মোটিভেশন হিসাবে কাজ করবে।
পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলেঃ

প্রথমেই মনস্থির করুন যে আপনি পর্ণ দেখা পুরোপুরি ছাড়বেন। এটা অনেক জরুরী। নিজের সাথে প্রমিজ করুন এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করুন যে আর দেখবেন না। কেবল মাত্র মন কে স্থির করতে পারলেই আপনি অর্ধেক এগিয়ে যাবেন নিঃসন্দেহে।

মোবাইলের মেমরি কার্ড, পিসি/ল্যাপটপ/ট্যাব থেকে যত পর্ণগ্রাফিক ছবি এবং ভিডিও আছে, ডিলিট করুন। কারন পর্ণ না দেখার ব্যাপারে মন স্থির করলেও হাতের কাছে যখন এগুলো পাবেন, দেখতে ইচ্ছে করবে। পিসি থেকে পর্ণ সাইট গুলো ব্লক করুন। পর্ণ সাইট ব্লক করার জন্য K9 নামে অসাধারণ একটি ফ্রি সফটওয়্যার আছে, ওটা ইন্সটল করে দেখতে পারেন। সফটওয়্যার টি কিভাবে ব্যবহার করবেন বুঝতে না পারলে How to use K9 web protection লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে প্রচুর টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি বুকমার্ক এবং ব্রাউজারের হিস্ট্রি গুলো ডিলিট করুন। কারন আপনি কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন, কি কি সার্চ করছেন তা গুগল মনে রাখে। ফলে পরবর্তীতে সার্চ করার সময় গুগল গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল টাইপ মাতব্বরি করতে থাকে। গুগল সার্চের Safe search অপশন টি এনাবল রাখুন।

ইউটিউবে বেশি সময় কাটাবেন না। যেই ভিডিও টা দেখা প্রয়োজন সম্ভব হলে শুধু সেটা দেখেই বেরিয়ে আসুন। কারন ইউটিউবে পর্ন থাকেনা ঠিকই, তবে সফট পর্ন থাকে। অনেক সময় কোনো ভিডিও দেখার সময় ডান পাশের সাইডবারে অন্যান্য ভিডিও’র থাম্বনেইলের সাথে এসব সফট পর্ণের ভিডিও গুলোও চলে আসে। আর মানব মন যেহেতু প্রকৃতিগতভাবেই কৌতূহলী, তাই স্বাভাবিকভাবেই ওদিকে নজর বেশি যায় এবং মাউসের পয়েন্টার ও মনের চাহিদা বুঝে ওদিকে ঘুরে যায়। আরেকটি কাজ ও করতে পারেন, ইউটিউবের Safe ফিল্টার টি অন করে রাখতে পারেন। এতে এ্যাডাল্ট ভিডিও গুলো দেখাবেনা।

যেহেতু পর্ণ দেখা ছাড়তে চাচ্ছেন, সো ঘরে একা একা কম্পিউটার/ল্যাপটপ/ট্যাব বা মোবাইলে সময় কাটানোর চেয়ে মন কে অন্য দিকে ডাইভার্ট করার জন্য নতুন এক বা একাধিক হবি তৈরি করুন এবং সে হবি নিয়ে মেতে উঠুন। যখন ই পর্ণ দেখতে মন চাইবে, সাথে সাথে উঠে পড়ুন এবং সেই হবি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। আমি জানি এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রথম দিকে অনেক কঠিন লাগলেও ধীরে ধীরে সহজ হয়ে আসবে। হবি হতে পারে বডিবিল্ডিং এর জন্য জীমে জয়েন করা, গিটার, কবিতা আবৃত্তি কিংবা গান শেখা, ফটোগ্রাফি কিংবা পেইন্টিং, বই পড়া, গাড়ি চালানো শেখা, খেলাধুলা কিংবা সাতার শেখা, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা… মোট কথা, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

পিসি বা ল্যাপটপ রুমের এমন একটা পজিশনে রেখে ইউজ করুন, যেন সেটা রুমে ঢুকলে সবার দৃষ্টিগোচর হয়। বাবা-মারা তাদের সন্তানদের কম্পিউটার টেবিল ঘরে ঢুকলে সহজেই চোখে পড়ে এবং মনিটর করা যায় এমন অবস্থানে রাখুন। সম্ভব হলে ল্যাপটপ না কিনে টিনএজ বয়সী সন্তান কে কম্পিউটার কিনে দিন। কারন ল্যাপটপ কিনে দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিছানাতে নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা বেশি। ফলে সে আদৌ কাজ করছে নাকি পর্ণ সাইট ব্রাউজ করছে সেটা মনিটর করাটা আপনার জন্য অসম্ভব হবে।

রুমের দরজা খোলা রেখে কম্পিউটার ব্যবহার করুন। এটা বেশ জরুরী। রুমের দরজা বন্ধ করে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করার সময় হঠাত করেই মনের মধ্যে পর্ণ ওয়েবসাইট ব্রাউজের চিন্তা আসতে পারে, অথবা কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজের সময় পর্ণ এ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখেও ইচ্ছে করতে পারে। রুমে প্রাইভেসি থাকলে সেটা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। সেজন্য সম্ভব হলে রুমের দরজা খোলা রেখেই কম্পিউটার ব্যবহার করুন। পর্ণের সংস্পর্শে যাওয়া টা নিজের জন্য কঠিন করে তুলুন। কারন ইচ্ছে হওয়া মাত্রই পর্ণ দেখার সুবিধা আপনার থাকলে আপনি তা নিয়মিতই দেখবেন বলা চলে। তাই পর্ণ দেখা টা যদি আপনার জন্য কঠিন হয়, সেটা আপনার জন্য ভাল।

যদি মেডিটেশন পারেন, দিনের যেকোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে মেডিটেশন করুন। না পারলে শিখতে পারেন। মেডিটেশন শেখার জন্য ইন্টারনেটে প্রচুর কনটেন্ট পাবেন, এবং বাংলাতেই পাবেন। কোয়ান্টাম মেথডের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। না পেলে মন্তব্যে বললে লিঙ্ক দিবো। নিয়মিত মেডিটেশন করলে আপনার মন শান্ত থাকবে এবং মনের উপরে নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। মন আপনাকে চালাবেনা, আপনিই মন কে চালাবেন।

নামাজ পড়ার অভ্যাস থাকলে ভাল, নয়তো নামাজে মন দিতে পারেন, এতেও মন শান্ত এবং পরিশুদ্ধ থাকবে। আপনি যে ধর্মের অনুসারীই হোন না কেন, নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন এবং ধর্মীয় উপাসনাতে মনোযোগ দিলে মনের পরিশুদ্ধি এবং পবিত্রতা ফিরে আসবে। যারা সত্যিকার অর্থে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে, তাদের জন্য পর্ণ আসক্তি থেকে দূরে থাকা টা কোনো ব্যাপার ই না।

পর্ণ দেখার প্রতি কোন কোন জিনিস গুলো আপনার মনকে ট্রিগার করে, সেগুলো মার্ক করুন। সেটা হতে পারে কোনো ভিডিও গান, পিসিতে থাকা নাইলা নাইম সানি লিওন কিংবা অন্য কোনো মডেলের ছবি যা দেখার সাথে সাথে আপনার ভেতরে লাস্টি মুড তৈরি করছে। মার্ক করার পর সেগুলো পিসি থেকে ডিলিট করুন এবং এই টাইপ যতগুলো জিনিস আছে যা আপনাকে পর্ণ দেখার প্রতি ট্রিগার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। আমি জানি পর্ণ থেকে দূরে থাকার জন্য অনেকেই এই পোস্ট টি পড়বেন, তারপর আবারো আগের জায়গাতে ফেরত যাবেন। কারন এই ছোট ছোট ট্রিগার গুলো থেকে দূরে না থাকতে পারা। হয়তো ভাবছেন, আরে দূর! এসব ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে ভাবলে চলে। কিন্তু আসল কথা হল, এসব ছোট খাটো ব্যাপার থেকেই বড় বড় ব্যাপারগুলোর সূত্রপাত হয়। তাই এই ট্রিগারগুলো ফাইন্ডআউট করে সেগুলো থেকে যদি দূরে থাকতে পারেন, সেটা আপনার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

খেয়াল করুন, পর্ণ দেখার প্রতি আগ্রহ টা কখন তৈরি হচ্ছে- যখন আপনি লোনলি ফিল করছেন, যখন ক্ষিধে পাচ্ছে, যখন কারো কাছ থেকে বা কোনো কারনে কষ্ট পাচ্ছেন, যখন ক্লান্ত থাকছেন, যখন আপনি কোনো কিছুর উপর রেগে থাকছেন, নাকি যখন সবকিছু বোরিং লাগছে। পর্ণ দেখার প্রতি আগ্রহ বা ইচ্ছে তৈরি হবার পেছনে এরকম কিছু কারন থাকে। আপনার মূলত কোন কারনে পর্ণ দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে সেটা ফাইন্ডআউট করুন এবং সেই কারন বা সমস্যা টাকে সলভ করতে চেষ্টা করুন। কারন আপনি যখন বোর হচ্ছেন, লোনলি ফিল করছেন, কোনো কারনে কষ্ট পাচ্ছেন…এগুলো আপনার মনে এক ধরণের শূন্যতা তৈরি করছে, ফলে মন সেই শূন্যতাকে পূরন করার জন্য বিকল্প হিসাবে পর্ণ কে বেছে নিতে বলছে।

কম্পিউটার টেবিলের উপরে মনিটরের আশেপাশে মা, বোন সহ ফ্যামিলি এ্যালবামের ছবি রাখুন। ল্যাপটপে কাজ করলে নিজ অবস্থান থেকে চোখে পড়ে এমন জায়গা ওয়ালের এক সাইডে অথবা দুই সাইডের ওয়ালে ফ্যামিলি বা ধর্মীয় ছবি রাখুন। এটা মনের প্রতি এক ধরণের প্রেশার ক্রিয়েট করবে। মনিটর বা চোখের সামনে যখন এই ছবিগুলো থাকবেন, পর্ন দেখার সময় এক ধরনের গিল্ট বা অনুশোচনা তৈরি হবে মনের মধ্যে।

ঘরের থেকে বাইরে বেশি সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। কম্পিউটার এবং মোবাইলের স্ক্রিনের সামনে সময় কমিয়ে আউটডোর লাইফে সময় বেশি দিন। খেলাধুলা করুন এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিন। ব্যস্ত সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। আর যদি ঘরে সময় কাটাতেই হয়, তবে একা একা সময় না কাটিয়ে পরিবারের মানুষদের সাথে আড্ডা দিন, গল্প করুন অথবা কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। বেশিরভাগ মানুষ ই মূলত বোরিংনেস কাটাতে পর্ণ দেখা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে সেটা আসক্তিতে রূপান্তর লাভ করে।

এর পরের প্যারা টি কাপলদের জন্য। রিকশার হুডি কিংবা পার্কের চিপা-চাপায় বসা কাপল না, ম্যারিড কাপল দের কথা বলছি! সো সিঙ্গল রা কিছুক্ষণের জন্য আপাতত সাইড চাপেন! ;)

অনেক বিবাহিত ভাই এবং আপুদের কাছ থেকে তাদের ম্যারিড লাইফের নানা সমস্যার কথা শুনি। পর্ণের কারনে তাদের সেক্সুয়াল লাইফেও নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয় যেটা পূর্বের পোস্টে আলোচনা করেছি। অনেক কাপলের কথা শুনেছি, যারা ইন্টারকোর্সের সময় বা ইন্টারকোর্সের আগে পর্ণ দেখতে পছন্দ করে।

কারন হিসাবে অনেকেই বলেছে, বিয়ের বয়স অনেকদিন হয়েছে তো-ওগুলো না দেখলে মুড আসেনা! এগুলো মূলত পুরুষদের মধ্যেই আগে সীমাবদ্ধ ছিলো। এখন অনেক বিবাহিত মেয়েরাও ইন্টারকোর্সের আগে বা ইন্টারকোর্স চলাকালীন সময় পর্ণ দেখতে ভালবাসে। কারো কারো পর্ণ এর প্রতি ভালোলাগা টা এ্যাডিকশনের পর্যায়ে চলে গেছে।

তাদের অনেকেই একই লজিক দেখায়-না দেখলে মুড আসেনা! শুধু তাই নয়, অনেকে ইন্টারকোর্সের প্রথম ইনিংস শেষ হবার পর সেকন্ড ইনিংসের মুড তৈরির ট্রিগার হিসাবে পর্ণ দেখেন।

কিন্তু একটা জিনিস কি ভেবেছেন, চোখের সামনে স্বামী বা স্ত্রীর নিরাবরণ দেহ থাকা স্বত্তেও পর্ণের উপর ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়ে গেলে কয়েক বছর পর কি অবস্থা দাড়াবে?

একটা সময় পর্ণ ছাড়া ইন্টারকোর্সের মত মর্যাদাপূর্ণ টেস্ট ম্যাচ তখন ওয়ানডে তেও গড়াবেনা, টি-টুয়েন্টির মত কয়েক মূহুর্ত আনন্দ দিয়েই শেষ হয়ে যাবে। এবং বলা বাহুল্য, আনন্দ টা তখন একপাক্ষিক হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে! আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী আপনাকে উত্তেজিত করতে পারছেনা, যেটা পর্ণের মোহময়ী নারী বা পুরুষ পারছে। সে আপনার জন্য যথেষ্ঠ না, কারন দুজনের একান্ত মূহুর্তগুলোতেও তৃতীয় পক্ষ তথা পর্ণের হেল্প নিতে হচ্ছে।

সঙ্গী বা সঙ্গিনী চোখের সামনে থাকা স্বত্তেও যখন পর্ণ এর মাধ্যমে এ্যারাউজড হতে হয়, সেটা সঙ্গী বা সঙ্গিনীর জন্য কতটা লজ্জ্বাদায়ক এবং অপমানজনক সেটা ভেবে দেখেছেন?

তাই ইন্টারকোর্সের সময় বা পরে পর্ণ এর দারস্থ না হয়ে, আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনীর দিকে নজর দিন। তার সৌন্দর্য্য গুলো এ্যাপ্রিসিয়েট করুন। তার সাথে খোশগল্প করুন, জোকস বলুন, ফান করুন। এভাবে দুজনের একান্ত মূহুর্ত গুলো আরো আনন্দময়, আরো উপভোগ্য করে তুলুন।

মনে রাখুন, পর্ণ আসক্তি থেকে দূরে থাকা টা কোনো জাদুর চেরাগের মত নয় যে ইচ্ছে করলাম ব্যস হয়ে গেলো। এই পোস্ট পড়ার পর আজ কম্পিউটার বা মোবাইলের মেমরি কার্ড থেকে সব পর্ণ ডিলিট করলেন, গুগলের সেফ সার্চ অন করলেন, পর্ণ ওয়েবসাইট ব্লকের জন্য সফটওয়্যার ইন্সটল করলেন… ব্যস কাজ কিন্তু এখানেই শেষ নয়! ডে বাই ডে আপনাকে এটার জন্য স্ট্রাগল করতে হবে। নিজের সাথে ফাইট করতে হবে। মাঝেমাঝে হয়তো ব্যর্থ হবেন, কিন্তু প্লীজ দমে যাবেন না বা হাল ছাড়বেন না। চলার পথে হোচট খাওয়া কে স্বাভাবিক ভাবে দেখুন এবং আবার উঠে দাড়িয়ে নতুন উদ্যমে নিজের লক্ষ্যের দিকে আগান।

আপনি নিজেকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট পারফেক্ট করার জন্য এটা করছেন না। করছেন নিজের বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য।

পরিশেষে আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ নিজেকে চেঞ্জ করতে চাচ্ছেন সেজন্য। ধন্যবাদ আপনার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুজছেন সেজন্য। নিজেকে চেঞ্জ করার মাধ্যমে আপনি এই সমাজ এবং পৃথিবী টাকে বেটার প্লেস হিসাবে তৈরি করছেন।

আমরা লুকিয়ে পর্ণ দেখার সময় লজ্জা পাইনা, বন্ধুদের সাথে পর্ণস্টারদের নিয়ে রগরগে আলোচনা করতে লজ্জা পাইনা, কিন্তু এই পোস্ট টি শেয়ার করতে আমাদের অনেকেই লজ্জা পাবো। এই পোস্ট টি চটি নয়, এই পোস্ট টি থেকে আপনি কিছু জানতে পারছেন বা শিখতে পারছেন। আপনার পাশাপাশি অন্য কেউ এটা পড়ে সচেতন হতে পারছে। এখানে কি আপনার লজ্জা করা টা আদৌ সাজে? এই পোস্টে লাইকের থেকে শেয়ার করে অন্যদের জানানো টা বেশি জরুরী।

তাই পোস্ট টি যতবেশি সম্ভব শেয়ার করুন এবং অন্যকেও জানার সুযোগ দিন। অহেতুক লজ্জা না করে নিজে সচেতন হোন, এবং অন্যকেও সচেতন করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৪:০৫   ১০৪৬ বার পঠিত