মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৪

মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে শিশুকে রাখুন সুস্থ-সবল

Home Page » স্বাস্থ্য ও সেবা » মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে শিশুকে রাখুন সুস্থ-সবল
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৪



inhgfdex.jpg

স্টাফ-রিপোটার:বঙ্গ-নিউজ:অতীতে যে ধরনের শারীরিক সমস্যা একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর দেখা দিত, বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের শরীরে সেগুলি খুব তাড়াতাড়িই দেখা যাচ্ছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্থুলতা, অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাওয়া৷ অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, এর প্রধান কারণ হল শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের অভাব। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় খুব ছোট বয়স থেকেই মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিচ্ছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প নেই।

শিশুর চাই এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং:

শিশুর জন্মের দু থেকে আড়াই ঘণ্টা পর থেকে অন্তত ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তাকে কেবল মায়ের দুধই খাওয়ানো উচিত। এই সময়কালে জল খাওয়ানোর দরকার নেই। একে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং বলা হয়ে থাকে। যদি বাচ্চার কোনও সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জল বা ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এর অবশ্য বেশ কয়েকটি কারণ আছে। শিশু মায়ের গর্ভে প্রায় ন’মাস পর্যন্ত থাকে। এর ফলে মা ও শিশুর শরীরের ফিজিওলজি একই থাকে। একটি শিশুর শরীরে যে পরিমান পুষ্টির প্রয়োজন, তা মায়ের দুধে সঠিক পরিমানে থাকে। এই পুষ্টিগুলি হল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেল প্রভৃতি৷ এছাড়াও, একজন মা ব্রেস্ট ফিডিংয়ের মাধ্যমে শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রদান করে থাকেন। একে চিকিৎসকেরা ‘প্যাসিভ ট্রান্সফার’ বলে থাকেন। এর ফল বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মাতৃদুগ্ধ পান না করালে মায়েরও হতে পারে ওভারিয়ান ক্যানসার:
ব্রেস্ট ফিডিং যে শুধু শিশুর জন্যই প্রয়োজনীয় তা নয়, এটি একজন মায়ের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। একজন মা তার শিশুকে যত বেশি পরিমাণে ব্রেস্ট ফিডিং করাবেন তাতে তার শরীরে তত বেশি পরিমানে প্রোল্যাকটিন নামক একপ্রকারের হরমোন নির্গত হয় ও মায়ের শরীর আরও বেশি করে দুধের উৎপাদন বেড়ে যায়। এতে মায়ের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। এছাড়াও, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হল ন্যাচারাল স্পেসিং। একটি শিশুর জন্মের জন্য ডিম্বাণুকে ডিম্বাশয় থেকে বেরিয়ে জরায়ুতে পৌঁছাতে হয়। একে ওভালুয়েশন বলে। একজন মা তার শিশুকে যত বেশি বুকের দুধ খাওয়াবেন, তার ওভালুয়েশন তত দেরিতে হবে। ফলে মায়ের দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ দেরিতে হয় ও দু’টি সন্তানের মাঝে বয়সের পার্থক্য বেশি হবে। এছাড়াও কোনও মা যদি তার সন্তানকে তার বুকের দুধ না খাওয়ান, তবে তার শরীরে হরমোনের অনিয়ন্ত্রিত নিঃসরণও হতে পারে। ওভালুয়েশন, মেনসুলেশনের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অস্টিওপরেসিস দেখা যায়। এমনকি ওভারিয়ান ক্যানসারের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

মায়ের শরীরের প্রথম দুধ আবশ্যক:
মায়ের শরীর থেকে প্রথম গাঢ় দুধ বের হয় তা শিশুকে খাওয়াতেই হবে। আগে মায়ের দুধের এই অংশ শিশুকে খাওয়ানো হত না। কিন্তু, বর্তমানে একথা প্রমানিত যে এই দুধ অনেক বেশি উপযোগী। মায়ের শরীর থেকে প্রথম যে দুধ বের হয় তাকে পোলোস্ট্রাম বলা হয়। দুধের এই অংশটি হলুদ রঙের পাতলা এক ধরনের পদার্থ। এতে প্রচুর পরিমানে এনার্জি, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এতে সবচেয়ে বেশি পরিমানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপাদান থাকে।

মিল্ক ব্যাঙ্ক পদ্ধতি:
অনেক সময় দেখা যায় সন্তানের জন্মের পর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার অনেক সময় বাচ্চার কোনও সমস্যার ফলে তাকে ব্রেস্ট ফিডিং করানো যায় না। বর্তমানে সেই সমস্যার সমাধানও রয়েছে। মিল্ক ব্যাঙ্ক বর্তমানে বেশ প্রচলিত। এখানে আগে থেকেই মায়ের দুধ সংরক্ষণ করে রাখা হয় অথবা অন্য মায়ের দুধ সংরক্ষণ করে রাখা হয়। আবার অনেক সময় শিশুরও মায়ের দুধ খাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না, তখনও শিশুকে অন্য উপায়ে দুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী বন্ধ রাখতে হবে ব্রেস্ট ফিডিং:
তবে কিছু কিছু সময় চিকিৎসকেরা শিশুকে দুধ খাওয়াতে বারণ করে থাকেন। এর মধ্যে প্রধান কারণ হল, মায়ের রক্তে এইচ আই ভি পজিটিভ থাকা। এছাড়াও যদি কেউ আন্টি সাইক্রিয়াটিক ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তবেও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যায় না। যদি শিশুর শরীরেও গ্যালাক্টোসোমিয়া জাতীয় সমস্যা থাকে তবেও ব্রেস্ট ফিডিং বন্ধ রাখা হয়। তবে এগুলি সবই ডাক্তারের পরামর্শের উপর নির্ভর করে। ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসকেরা নিষেধ করলেও ব্রেস্ট ফিডিং বন্ধ রাখতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৪:৩২   ৪৭৭ বার পঠিত