শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০১৪
৪ জেএমবি বোমার চালান পাঠাতো বাংলাদেশে
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ৪ জেএমবি বোমার চালান পাঠাতো বাংলাদেশেডেস্ক রিপোর্ট : পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় কাউসার ছাড়াও আরো তিন বাংলাদেশি জেএমবি নেতাকে দায়ী করছে ভারতীয় পুলিশ। তারা হলো হাতকাটা নাসিরুল্লা, সাকিব এবং সাজি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি কর্মকর্তাদের দাবি, এই চার জেএমবি ক্যাডার পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ের মতো বিভিন্ন আস্তানা থেকে বিস্ফোরক ও বোমার চালান পাঠাতো বাংলাদেশে। ঢাকায় শেখ হাসিনা সরকারের হাত এড়িয়ে বিস্ফোরক তৈরির কাজ হাসিল করতেই এ রাজ্যে বছরের পর বছর বসে থেকে জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল তারা। ওই বিস্ফোরকের একটা অংশ ভারতে নাশকতার কাজে ব্যবহার করাও জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল বলে তাদের সন্দেহ।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে বছর সাতেক আগে এ দেশে ঢোকা শাকিল আহমেদ অষ্টমীর দিন খাগড়াগড়ের ডেরায় বিস্ফোরণে মারা যায়। সিআইডির হাতে ধরা পড়ে আহত আব্দুল হাকিম, তার স্ত্রী আলিমা বিবি এবং শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া ওরফে গুলশানা বিবি। তাদের জেরা করেই সিআইডি জেনেছে, খাগড়াগড়ে শাকিল যে বোমা তৈরি করত, কওসর তার কয়েক জন সহযোগীর মাধ্যমে তা পৌঁছে দিত বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ের এক ডেরায় সাকিবের জিম্মায়। কওসরকে এই কাজে সাহায্য করত হাতকাটা নাসিরুল্লা। সাকিব সেই বোমা পৌঁছে দিত লালগোলায় বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা অন্য একটি ডেরায়। যেখান থেকে জামায়াত নেতা সাজিদ তা চালান করতো সীমান্তপারের রাজশাহী কিংবা সাতক্ষীরায়। এভাবেই এ-পারে তৈরি হওয়া অস্ত্রে মজবুত হচ্ছিল ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ বা জেএমবির ভাণ্ডার।
এই চার জনের পাশাপাশি মহম্মদ ইউসুফ নামে আর এক বাংলাদেশি জামায়াত নেতার নামও সিআইডি তদন্তে উঠে এসেছে। সিআইডি সূত্র জানাচ্ছে, এ রাজ্যে জামায়াতের শাখা সংগঠন বিস্তার, জঙ্গিদের নিয়োগ করে অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং ধর্মশিক্ষা দেওয়ার কাজ ছিল ইউসুফের। এখানেও তার সহকারী ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা। রাজিয়া এবং আলিমা এরা দুজনেই ইউসুফ ও নাসিরুল্লার কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
সিআইডির দাবি, জেরার মুখে শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া জানিয়েছে, জেএমবির লক্ষ্য, জেহাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে জামাতের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই জেহাদের জন্য চাই বিস্ফোরক, বোমা। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের তৎপরতায় নিষিদ্ধ জেএমবির বোমা তৈরির কারবার গত দু’তিন বছর ধরে কার্যত বন্ধ। তাই ওই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কিছু ক্যাডার এ রাজ্যে ঢুকে পড়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের কাজ চালাচ্ছিল। খাগড়াগড় ছিল সে রকমই একটি বোমা তৈরির কেন্দ্র।
রাজিয়া বলেছে, “আমার স্বামী বলত, সুদিন আসবে। আবার দেশে ফিরব। জেহাদ করতে হবে। সে জন্যই এখন এই কাজ করছি।”
গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশ থেকে টাকাপয়সা এলেও বোমার রসদ জোগাড় করতে হতো ভারত থেকেই। বর্ধমানে ঘাঁটি তৈরির অন্যতম কারণ সেটাই। কারণ, বর্ধমানের কাছেই ঝাড়খণ্ডের খনি এলাকা ও কলকাতা। শাকিল, কাউসারের নিয়মিত রানিগঞ্জ-আসানসোলে যাতায়াত ছিল। হাকিমের বাড়ি বীরভূমের দেউচা পাথরখাদান এলাকায়। খাদানে বিস্ফোরণের জন্য সর্বত্রই জিলেটিন স্টিকের বহুল ব্যবহার রয়েছে। ফলে বিস্ফোরক জোগাড় করা তেমন কঠিন ছিল না। শাকিল-হাকিমরা যে ধরনের সকেট বোমা বানাত, তার রসদ তারা খনি-খাদান এলাকা থেকেই সংগ্রহ করে থাকতে পারে বলে সন্দেহ সিআইডির।
সিআইডি জেনেছে, গত জুন মাসে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসান চৌধুরীর বাড়িতে ওঠে শাকিল ও হাকিমের পরিবার। সেই ঘাঁটিতেই ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করে তা দফায় দফায় মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী, বেলডাঙা, লালগোলা হয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হতে থাকে। সিআইডির দাবি, জেরায় জানা গেছে, কিছু বোমা পাঠানো হয়েছিল ৩০ সেপ্টেম্বর, ষষ্ঠীর দিন। এর পর সপ্তমীতেও খাগড়াগড়ের ডেরায় যায় কওসর। ওই দিন সে বেশ কিছু বোমা তৈরির বরাত দিয়ে আসে শাকিলদের। ঠিক পরের দিন, অষ্টমীতেই কাউসারের ওই বোমাগুলো নিতে আসার কথা ছিল। ঠিক ছিল, কওসর তার শ্বশুরবাড়ি কীর্ণাহার হয়ে রঘুনাথগঞ্জ, বেলডাঙা হয়ে লালগোলা পৌঁছে দেবে ওই বিস্ফোরক। সেইমতো দু’টি পথেই বোমা নিয়ে যাওয়ার মহড়া দিয়ে রেখেছিল তারা। খাগড়াগড়ে সকেট বোমার পাশাপাশি চিনা খেলনায় বিস্ফোরক ঠেসেও বানানো হচ্ছিল আইইডি। কিন্তু এক রাতের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে বিপুল সংখ্যক বোমা বানাতে গিয়েই ঘটে বিস্ফোরণ। মারা পড়ে শাকিল এবং স্বপন মণ্ডল ওরফে সুবহান। তারপর থেকেই খোঁজ নেই হাতকাটা নাসিরুল্লা, ইউসুফ, সাকিব, সাজিদ ও কওসরের।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৭:৩১ ৪২০ বার পঠিত