বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৪

হজ মানে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দেওয়া

Home Page » সারাদেশ » হজ মানে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দেওয়া
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৪



htrajj.jpg

বঙ্গ-নিউজ:নিজস্ব প্রতিবেদক:হজ মানে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বশরীরে তার দরবারে হাজির হয়ে পুরনো কিছু স্মৃতি ও নিদর্শনের জেয়ারত করা। উঁচু-নিচু পাহাড়, ধুধু মরুভূমি, মানবশূন্য এক এলাকায় হজরত ইব্রাহিম ও স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আ.) আল্লাহপাকের নির্দেশে নির্মাণ করলেন কাবাগৃহ। নির্মাণকাজ শেষে মহান আল্লাহর নির্দেশ এলো হজের ঘোষণার। এক অচেনা মরুভূমি, মানবশূন্য এলাকা, আশপাশে নেই কোনো বসতি, কে দেবে ডাকে সাড়া? আবেগভরা কণ্ঠে প্রশ্ন ইব্রাহিমের। তার প্রভু সাফ জানিয়ে দিলেন ঘোষণা দাও, পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। কালবিলম্ব না করে হজরত ইব্রাহিম (আ.) সজোরে ঘোষণা দিলেন হজের। মুহূর্তের মধ্যে আল্লাহ তার কুদরতি শক্তিতে পৌঁছে দিলেন সে ঘোষণা কেয়ামত পর্যন্ত আসা সব হজযাত্রীর রুহের কানে। সমবেত কণ্ঠে সবাই বলে উঠল হৃদয়ে প্রেমের তরঙ্গ সৃষ্টিকারী লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইকার ধ্বনি।

রমজানে এক মাস রোজা, তারাবির নামাজ ও ইতেকাফসহ কঠোর সাধনার মাধ্যমে বান্দার তনু মনে উঁকি দেয় আল্লাহকে দেখার জযবা। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। নাছোড়বান্দার আবেগ কিছুতেই থামে না। তাই রমজানের পরই হজের ডাক। আল্লাহকে দেখা সম্ভব না হলেও যেন তার বাড়িঘর দেখে, আশপাশ দিয়ে কিছু দিন ঘোরাফেরা করে নেভাতে পারে এশকের আগুন। আল্লাহর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে, তার কিছু পুরনো স্মৃতি ও নিদর্শন দেখে মহব্বতের সরাব পান করাই হলো হজ। স্মৃতিগুলোর মধ্যে অন্যতম যেগুলো- কালো গিলাফে ঢাকা, নূরের তাজালি্লতে ভরা, নিথর দাঁড়িয়ে থাকা এক ঘর। যেন সৃষ্টির সব সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু। সাদা লেবাসে এহরাম পরিহিত সোনালি কাফেলার চোখের কালো তারা যখন এ কালো ঘরটির দিকে পড়ে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে দেখতে হারিয়ে যায় মাশুকের ভাবনায়। চোখের দৃষ্টি যেন স্নিগ্ধ থেকে স্নিগ্ধতর হয়ে আসে। আত্দার গভীরে নেমে আসে প্রশান্তি। মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত ভাবনা দু’চোখের কোনা দিয়ে বেরিয়ে আসে অশ্রুধারায়। নামাজ পড়া, রোজা রাখা, তাওয়াফ করা যেমন ইবাদত, তেমনি মহব্বতের সঙ্গে আল্লাহর ঘরের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকাও ইবাদত। নবীজীর চুম্বনধন্য হাজরে আসওয়াদকে চুম্বনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ। তাওয়াফ শেষে আল্লাহর খলিলের পাক কদমের ছাপবিজড়িত মাকামে ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়া হজের এক বিধান। পিপাসায় কাতর শিশু ইসমাঈলের জন্য বিবি হাজেরার ব্যাকুলতা ও অস্থিরতা দেখে আল্লাহপাকের অপার দান আবে জমজম। যার সুধা পান করে সুসিক্ত হন হাজিরা। হাজার হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে আল্লাহর আরেক নিদর্শন, মা হাজেরার পুণ্যস্মৃতি, আল্লাহর ইশকের নিশান, ছাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়। যার সাঈতে মানুষের স্রোত বইছে সারাক্ষণ। মক্কা থেকে মিনা, মিনা থেকে আরাফার অবস্থান। আবার আরাফা থেকে মুজদালিফা হয়ে মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানি করে মক্কা ফিরে আসা হজের কাজ। সব শেষে পিয়ারা হাবিবের রওজা শরিফ জেয়ারত ও সালামের নাজরানা পেশ করে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিরে আসা স্বদেশের মাটিতে। সবার জীবন হোক ধন্য হজের আমলে।

লেখক : খতিব, বাইতুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৭:৩৬   ৪১১ বার পঠিত