রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪
শুভ জন্মদিন প্রধানমন্ত্রী
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » শুভ জন্মদিন প্রধানমন্ত্রীডেস্ক:আজ রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৮তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এইদিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
এরপর ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে।
এরপর সে বছরই তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তাঁর রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসাবে তিনি আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশ-মাতৃকার হাল ধরার।
সেই ডাকে সাঁড়া দিয়ে সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনওকিছুই তাঁকে সেই আন্দোলনের পথ থেকে টলাতে পারেনি।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর সরকারের আমলেই ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা।
প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া সর্বোপরি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বর্ণযুগ হিসেবে।
২০০১ সালের ষড়যন্ত্র ও কারচুপির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। এ সময় দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে জোট সরকার সারাদেশে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। হত্যা করা হয় ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে।
২০০৪ সালের একুশে আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারি মদদে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা; শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল ওই হামলার মূল লক্ষ্য। কিন্তু ওই হামলায় শেখ হাসিনা গুরুতর আহত হলেও অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান।
তবে এই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান অসংখ্য নেতা-কর্মী। বাংলাদেশ পরিণত হয় এক মৃত্যু উপত্যকায়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাদের মদদে সারাদেশে ধর্মীয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপক উত্থান ঘটে। আর তাদের এই অপশাসন রুখে দাঁড়ান অকুতোভয় শেখ হাসিনা। বাংলার আপামর মানুষ তাঁর আহ্বানে রাজপথে নেমে আসে। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অপশাসনের অবসান ঘটে।
সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপি’র রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করেন। হাওয়া ভবনের নির্দেশে চলতে থাকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্বাচনী প্রহসনের প্রস্তুতি।
কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের গর্জে উঠে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। শুরু হয় গণ-আন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ইয়াজউদ্দিন। ঘোষিত হয় জরুরি অবস্থা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
কিন্তু সাহসিকা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করেন; ছুড়ে দেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অবশেষে সরকার পিছু হঠে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০০৭ সালের ৭ই মে শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।
কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা। কারাগারে তাঁর জীবননাশেরও ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে চলতে থাকে গণসংগ্রাম ও আইনি লড়াই। আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচন নয়। প্রমাদ গুণে তৎকালীন শাসকমহল। বদলে যায় দৃশ্যপট। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। গঠিত হয় মহাজোট সরকার।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সফলতার সাথে দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করে বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছেন। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ তার সুফল পাচ্ছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন জননেত্রী শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ১৯ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসের সঙ্গে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকেছেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হবে। জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে শেখ হাসিনা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানেই তাকে জন্মদিনের এই শুভেচ্ছা জানানো হবে ও উপহার প্রদান করা হবে।
এছাড়াও বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সভাপতি শেখ হাসিনার ৬৮তম শুভ জন্মদিন পালন করার জন্য আওয়ামী লীগের সকল শাখা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২২:৩৬ ৪০৬ বার পঠিত