শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪

বিএনপির সঙ্গেই সংলাপে বসতে হবে: খালেদা

Home Page » জাতীয় » বিএনপির সঙ্গেই সংলাপে বসতে হবে: খালেদা
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪



b-bariww.jpgবঙ্গ-নিউজ ডট কম:জামালপুর: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে এই সরকারকে আলোচনায় বসতেই হবে। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এর বাইরে কোনো নির্বাচন বাংলার মানুষ মানবে না। “শনিবার বিকালে জামালপুর জেলা স্কুল মাঠে ২০ দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বিচারকদের অভিশংসন-সংক্রান্ত সংবিধানের সংশোধনী ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল; খুন-গুম বন্ধ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম।

প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ, সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিশংসন-সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনীর সমালোচনা, র্যা ব বিলুপ্তি, জোট ভাঙার ষড়যন্ত্রসহ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার কথা বলেন।

ভোট চুরির জন্য হাসিনাকে কাফফারা দিতে হবে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, “শেখ হাসিনা আমেরিকায় গিয়ে বলছেন, আমরা নাকি ভোটে না গিয়ে ভুল করেছি, আমাদের কাফফারা দিতে হবে।” শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের নয়, ভোট চুরির জন্য আপনাদের কাফফারা দিতে হবে। কারণ ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। জনগণ ভোট দিতে যায়নি, এমনকি আওয়ামী লীগের লোকও কেন্দ্রে যায়নি।”

অবৈধ সংসদের আইন মানি না, মানব না
সরকারকে অবৈধ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে আওয়ামী লীগ একের পর এক আইন করছে। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে সম্প্র্রচার নীতিমালা করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ে রেখে নিজেদের নির্দেশে রায় দেয়ার জন্য অভিশংসন আইন করেছে। বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও বিচারকরা স্বাধীন নন। শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে পকেটে বন্দী করছেন। এই আইন আমরা মানি না, মানব না।”

দুদক, সরকারি কর্ম কমিশনসহ সব প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পকেটবন্দী করছেন বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না
আওয়ামী লীগ বেশি বাড়াবাড়ি করছে দাবি করে খালেদা বলেন, “সময় থাকতে অন্যায়-অবিচার বন্ধ করুন। বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা হবে, একদিন আল্লাহর তরফ থেকে এমন টান দেবে যেদিন ডান-বাঁয়ে কিছু দেখবেন না। শুধু অন্ধকার দেখবে।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের মান-সন্মান নিয়ে বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় করা হবে।” সে জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির সঙ্গেই সংলাপ হবে
বিএনপির চেয়ারপাসন বলেন, “বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে এই সরকারকে আলোচনায় বসতেই হবে। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এর বাইরে কোনো নির্বাচন বাংলার মানুষ মানবে না। ” তিনি বলেন, “চোর-চোট্টাদের সঙ্গে আঁতাত না করে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভয় পায় বলে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে, এমন অভিযোগ করে খালেদা বলেন, “জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এজেন্সির লোকদের বলছি, আমরা সব জানি। নাম বলতে চাই না। দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করেন। অন্যথায় একদিন জবাবদিহি করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ রাজাকারদের বড় আশ্রয়স্থল
আওয়ামী লীগ রাজাকার ও গুন্ডাদের আশ্রয়স্থল এমন মন্তব্য করে খালেদা বলেন, “আওয়ামী লীগের ঘরে রাজাকার আছে, জোটেও আছে। এটা দালাল ও রাজকারদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল।” আওয়ামী লীগ রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না এমন দাবি করে তার সহধর্মিণী বলেন, “আমার বলার দরকার নাই। আওয়ামী লীগের লোক তাজউদ্দীনের মেয়ে লিখেছেন। এ কে খন্দকার তার বইয়ে লিখেছেন।”

কেউ সত্য বললে তাকে আওয়ামী লীগ রাজাকার আখ্যা দেয়্- এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “এ কে খন্দকার তার বইয়ে সত্য বলায় তিনি রাজাকার ও আইএসআইয়ের দালাল হয়ে গেছেন।”

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া একজন সচিবকে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে নেয়ারও সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।

র‌্যাব বাতিল ও পুলিশকে সেবক হওয়ার পরামর্শ
টাকার বিনিময়ে গুম খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে র‌্যাপিট অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বাতিলের দাবি জানান খালেদা জিয়া। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তিনি।

এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, “র‌্যাব ৩১০ জনকে খুন ও ৫৬ জনকে গুম করছে।”

পুলিশকে জনগণের সেবক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা থাকবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনাদেরও ভাই-বোন আছে। সরকারের অন্যায় আদেশ মানবেন না।”

বিএনপি নয়, আ.লীগের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক
‘বিএনপির সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্কের রয়েছে’ আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের জবাব দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, “বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক। জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের দুলাভাই ছিলেন। বিএনপি জঙ্গি দমন করেছে, আগামী দিনেও দমন করবে।”

বিএনপির চেয়ারপারসন তার বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক, পদ্মা সেতু, হলমার্ক-ডেসটিনি-বিসমিল্লাহ গ্রুপ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আনেন।

আওয়ামী লীগের হাত জনগণের রক্তে রঞ্জিত দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করতে হবে। এ জন্য সবাইকে অতীতের মতো আন্দোলনে অংশ নিতে হবে।”

বেলা পৌনে দুইটার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশে খালেদা জিয়া যোগ দেন বেলা তিনটার কিছু পরে। এর আগে জামালপুর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীরা মিছিলসহ সমাবেশস্থলে সমাগম হন।

সমাবেশে বিএনপির নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, বিএনপির নেতা সিরাজুল হক, নিলুফার চৌধুরী মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতের অধ্যাপক মজিবর রহমান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মো. ইসহাক, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে খালেদা জিয়া ঢাকার দিকে রওনা হন।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৯:১৫   ৩৭৬ বার পঠিত