মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪

ব্যাংকিং খাতে অনেক অনিয়ম

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ব্যাংকিং খাতে অনেক অনিয়ম
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪



bank1.jpgবঙ্গ-নিউজ: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফারাহ সাদিক। তিনি রাজউক পূর্বাচল প্লটের মূল্য পরিশোধ করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সোনালী ব্যাংক ওয়েজ আর্নার্স শাখায় রাজউকের চেয়ারম্যানের হিসেবে দুই কিস্তিতে ৩ হাজার ৭৮০ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন। প্লট হস্তান্তরের সময় রাজউকের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, এ অর্থ রাজউকের হিসেবে জমা হয়নি। পরে তিনি দেশে এসে সোনালী ব্যাংকের ওয়েজ আর্নার্স শাখায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন, দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা হলেও প্রথম কিস্তির অর্থ জমা হয়নি। এ বিষয়ে তিনি টাকা পাঠানোর প্রমাণপত্র ব্যাংকে জমা দিলেও দীর্ঘ দিনের পুরনো বিষয় অজুহাত দেখিয়ে তাকে বারবার ফিরিয়ে দেয় সোনালী ব্যাংক। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দেখতে পায় অসৎ উদ্দেশ্যে সোনালী ব্যাংক তার প্রেরিত অর্থ জমা দেয়নি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সোনালী ব্যাংক এ গ্রাহকের অর্থ রাজউকের চেয়ারম্যানের হিসাবে জমা দেয়। একই সাথে প্রবাসী ফারাহ সাদিকের হয়রানির জন্য ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেয় সোনালী ব্যাংক।
এভাবে গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের প্রায় সাড়ে চার হাজারটি লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রাহকেরা। ভুয়া ঋণ বিতরণ, অর্থ আত্মসাৎ, হিসাব থেকে অর্থ স্থানান্তর, গ্রাহক হয়রানিতে ওই সব ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকেরই রয়েছে এক হাজার ৫১৩টি। গত এক বছরে শুধু সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৯১ জন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ সময় জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৮৬ জন এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৮৫ জন গ্রাহক অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। যেসব অসৎ পরিচালক এখনো রয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরও বাদ দেয়ার জোড়ালো সুপারিশ করছে। তিনি বলেন, জনস্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে তাদের ক্ষমতা আছে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ন্যায়পাল নিয়োগের ইচ্ছেও প্রকাশ করেন গভর্নর।
গ্রাহকদের হয়রানি লাঘব করতে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে চালু হয় হেল্প ডেস্ক যা পরবর্তীতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করে। বিভাগটি গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রকার অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ, ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নে কাজ করছে।
গতকাল প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেন তার মধ্যে রয়েছে স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধ না করা। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর থেকে অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়ে (আইবিপি) অচলাবস্থা দেখা দেয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ব্যবসায়ীরা কয়েক দফা বৈঠক করলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এ ছাড়াও চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রাহক হয়রানি, অর্থ আত্মসাৎ, সঞ্চয় স্কিমের পাওনা না দেয়া, ঋণ বিতরণে অনিয়ম, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধে গড়িমসি এবং মোবাইল ব্যাংকিং, ট্রেড বিল, ডেবিট-ক্রেডিট ও এটিএম কার্ডসংক্রান্ত হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের আছে চারটি এবং বেসরকারি খাতের আছে ছয়টি ব্যাংক। সর্বাধিক অভিযোগ এসেছে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এ ব্যাংকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ২৯১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ৫৯৪টি। এরপর রয়েছে জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক। এ ব্যাংক দু’টির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যথাক্রমে ১৮৬ ও ১৮৫টি। আর রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৪৬টি, ব্র্যাক ব্যাংকের ১৩৫টি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১২৯টি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৮৫টি ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৭৭টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে শীর্ষ দশ ব্যাংকের তালিকায় রূপালী, বেসিক, যমুনা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থাকলেও গত অর্থবছরে তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ব্র্যাক, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ সময়: ৭:৩৩:৩৯   ৩৬২ বার পঠিত