রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪
গ্রাম্য মোড়লের নির্দেশে গণধর্ষণ: দোষীদের ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ
Home Page » বিশ্ব » গ্রাম্য মোড়লের নির্দেশে গণধর্ষণ: দোষীদের ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশবঙ্গ-নিউজ-পশ্চিমবঙ্গে বীরভুম জেলার লাভপুরে গ্রাম্য মোড়লের নির্দেশে আদিবাসি তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৩ জনকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড আদেশ দিয়েছে বোলপুর আদালত। একইসঙ্গে ৫,০০০ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বোলপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরি।
আদালতের রায়ের পর সরকারি আইনজীবী তপন দে ও শামসুজ্জোহা জানিয়েছেন, ফরেনসিক রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে না পেলেও নানান তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই বিচারক এ আদেশ দিয়েছেন। নির্যাতিতার মেডিক্যাল টেস্ট এবং ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি মোবাইল অভিযোগ প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে বলে তারা জানান। একদিন আগে (শুক্রবার) আদালত অভিযুক্তদের ৩৪২, ৩২৩ ও গণধর্ষণের জন্য ৩৭৬ডি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।আদালত সূত্রে জানা গেছে, তদম্তের সময় ৪৭টি উপকরণ ফরেনসিক তদম্তের জন্য পাঠানো হয়। তার মধ্যে ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ও ক্যামেরার চিপ সংক্রাম্ত ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে জমা পড়লেও বাকি রিপোর্ট এখনও আসেনি।
সাজা ঘোষণার পর আদিবাসী মোড়ল বলাই মার্ডি (৫৮) কেঁদে ফেলেন। মোড়লের কান্না দেখে অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে আসা পরিবারের লোকজনরাও কেঁদে ফেলেন। এরই মধ্যে গামছায় মুখ ঢেকে বাকি অভিযুক্ত সুনীল সোরেন (৩৫), চানা মার্ডি (২৫), মদন মার্ডি (২৯), সুরেশ মার্ডি (২৫), কার্তিক মার্ডি (২০), জ্যাঠা টুডু (২১), লালু মুর্মু (২৬), বালু টুডু (৫৭), রাম সোরেন (২০), জোথা মার্ডি (৫০), বাবন মার্ডি (১৯), দেবরাজ মণ্ডলকে (২৫) পুলিশি পাহারায় গাড়িতে তোলায় হয়।
ধর্ষকদের শাস্তির কথা শুনে নির্যাতিতা তরুণি বলেন, “ওই শয়তানগুলোর যাবজ্জীবন সাজা হলেই বেশি ভাল হতো। তবে, ২০ বছর পর যখন জেল থেকে বেরোবে তখন আর কারও সঙ্গে নোংরামি করার কথা ভাববে না। আশা করছি, এটুকু শিক্ষা ওদের হবে।”
সিউড়ির হোম থেকে ফোনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এ বার আমি গ্রামে ফিরতে চাই। ভাইদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকব।”
বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী অবশ্য তরুণীকে তাঁর পরিবারের লোকেদের কাছে দ্রুত ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, লাভপুরের সুবলপুর গ্রামের এক আদিবাসী যুবতী ২২ জানুয়ারি লাভপুর থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, মুসলিম সম্প্রদায়ের এক যুবক আব্দুল খালেককে ভালোবাসার জন্য ২০ জানুয়ারি গ্রামের মোড়ল বলাই মার্ডি সালিশি সভা ডেকে তাকে ও তার বন্ধুটিকে তালগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এরপর দু’জনকে ২৫ হাজার করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তরুণের আত্মীয়রা টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিলেও তরুণীর পরিবার তা করতে পারেননি। পরে আবার সালিশ বসে। এ সময় জরিমানার টাকা দিতে না পারায় ওই তরুণীকে ধর্ষণ করার নির্দেশ দেন পঞ্চায়েতের মোড়ল। রাতেই তরুণীকে বাড়ি থেকে তুলে মোড়লসহ ১৩ জন ধর্ষণ করে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। তরুণীকে প্রথমে গ্রামীণ হাসপাতালে এবং পরে বীরভূম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২২ জানুয়ারি এই অভিযোগ দায়ের করার পরেই পুলিশ ১৩ জনকেই গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় দেশ জুড়ে তোলপাড় হয়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হস্তক্ষেপ করেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই ৮ মাসের মাথায় এই রায় নিয়ে খুশি হলেও নির্যাতিতার পরিবারে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১০:৫৪ ৩২৩ বার পঠিত