বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪
ফাঁসি বহাল থাকলে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখাবে জামায়াত
Home Page » জাতীয় » ফাঁসি বহাল থাকলে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখাবে জামায়াতনিউজ ডেস্ক, বঙ্গ-নিউজ ডট কম: যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর আপিলের রায় বুধবার ঘোষণা করা হবে। আর এই রায়কে কেন্দ্র করে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজপথ।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ যদি আপিল বিভাগে বহাল থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠন দুটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরণসহ ২০টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে ৮টি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণার পরই সারাদেশে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা-কর্মীরা। সাঈদীর অসংখ্য ভক্তও যোগ দিয়েছিল এই আন্দোলনে। সারাদেশে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে সাধারণ জনগণসহ জামায়াত-শিবিরের প্রায় দুইশ’ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিল। হরতাল-অবরোধ আর বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ।
মাওলানা সাঈদীর খালাস চেয়ে ওই বছর ২৮ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে আসামিপক্ষ। সাড়ে ছয় মাসেরও অধিক সময় পর ১৬ এপ্রিল আলোচিত এ মামলায় আপিল শুনানি শেষে রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
বুধবার আলোচিত এই আপিল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কী রায় আসে সে দিকেই এখন কঠোর দৃষ্টি রাখছে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। জামায়াত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের ক্ষোভের কথা।
তাদের দাবি, কসাই কাদেরের অপকর্মকে আব্দুল কাদের মোল্লার ঘাড়ে চাপিয়ে সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে তাকে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এখন আবার দেলাওয়ার শিকদারের অপকর্মকে নিরপরাধ মাওলানা সাঈদীর উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে তাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মাওলানা সাঈদীর ক্ষেত্রেও যদি সরকার আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার মতো দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে জীবন দিয়ে হলেও তা প্রতিরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াত ও শিবিরের একাধিক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগরীর এক শিবির নেতা জানান, আল্লামা সাঈদী শুধুমাত্র জামায়াত-শিবিরের ইস্যু নয়, এটা দেশের ১৬ কোটি মানুষের ইস্যু। সরকার কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে আন্দোলনের দাবানল বাংলার প্রত্যেকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে। আর এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
এছাড়া জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ আরো কঠোর কর্মসূচিও আসতে পারে বলে জানান তিনি।
শিবিরের এই নেতা আরো বলেন, আমরা মনে করি এই একটি ভুলের কারণেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অপমৃত্যু ঘটবে। ঘরে ঘরে আওয়ামী বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়েও বাঁচতে পারবে না। তাই আমাদের দাবি, স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে খালাস দিতে হবে। জনগণের হৃদয়ের ভাষা যদি সরকার বুঝতে ভুল করে তাহলে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাঈদীর সাজা বহাল থাকলে জামায়াত কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে জানতে চাইলে শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মনির আহমেদ বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। রায়ের আলোকেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। আমরা আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আমরা সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মাওলানা সাঈদী নির্দোষ প্রমাণিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি আরো বলেন, এরপরও যদি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অবিচার করা হয়। অন্যায় রায় দেওয়া বা সাজা বহাল রাখা হয় তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুধু আমরাই না এদেশের মানুষেরও আশা সাঈদী সাহেব বেকসুর খালাস পাবেন।’
আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাওলানা সাঈদী শুধু জামায়াতের নেতা নন। তিনি এদেশের কোটি কোটি মানুষেরও নেতা। তিনি এদেশের সর্বসাধারণের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অন্যায় রায় প্রদান করা হলে এদেশের জনগণ তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। গত বছরের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারির মতো ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সব পেশা ও শ্রেণির মানুষ রাস্তায় নেমে এসে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
তিনি আরো বলেন, আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। জনগণ এমন আন্দোলন গড়ে তুলবে যা অতীতে কখনো হয়নি। এক্ষেত্রে সরকার কোনো প্রকার হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ড. রেজাউল করিম।
বাংলাদেশ সময়: ০:২২:০৮ ৩৫৬ বার পঠিত