বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪

৯/১১, দেশ জুড়ে সতর্কতা!

Home Page » বিশ্ব » ৯/১১, দেশ জুড়ে সতর্কতা!
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪



twint_341534715.jpgবঙ্গ-নিউজ: সারা দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। থানায় থানায় পাঠানো হয়েছে বিশেষ অ্যালার্ট। আর তা নাইন-ইলেভেনকে ঘিরে।২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা। এর ঠিক ১৩ বছর পর আল কায়দার বর্তমান প্রধান আয়মান জাওয়ারি বাংলাদেশসহ ভারতে আল কায়দা শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। দিনটিকে সামনে রেখে আবারো হামলার পরিকল্পনা করতে পারে আল-কায়েদা এমন আশঙ্কায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে এই বিশেষ সতর্কতা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় থাকবে। সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এনিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হকের সঙ্গে। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিকই সতর্কবস্থায় থাকে। তদুপরি নাইন ইলেভেনকে সামনে রেখে দেশে যাতে কোন ধরনের নাশকতা বা ধ্বংসাত্মক কাজ না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।

পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বলেন, দেশের কোথাও কোন ধরনের জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্ক রয়েছে।

রাজধানী ঢাকায়ও থাকছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, দিনটিকে সামনে রেখে আল কায়দা বা অন্য কোন জঙ্গি সংগঠন যাতে কোন ধরনের হামলা বা হামলার পরিকল্পনা না করতে পারে সে জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আগ থেকেই সতর্কবস্থা নিয়েছে। সেই সতর্কবস্থা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা পুরো শহরের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছি। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন।

এক্ষেত্রে কাজ করছে এলিট ফোর্স র‌্যাবও। র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রুম্মান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, র‌্যাবের জঙ্গি দমন সংক্রান্ত একটি বিশেষ সেল রয়েছে। তারা সব সময়ই সজাগ থাকে। আর এ দিনটিকে ঘিরে যাতে নাশকতামূলক কিছু না ঘটে সে ব্যাপারেও র‌্যাব সজাগ রয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায়ও নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বিমান বন্দর ইমিগ্রেশন ওসি (এএসপি) আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, বিমান বন্দর ব্যবহার করে কোন দেশের জঙ্গি সদস্যরা যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে।

বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন বলেন, নাইন ইলেভেনকে সামনে রেখে অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় আমরাও সজাগ রয়েছি।

জাওয়াহিরির সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তার পর এই বিশেষ সতর্কতার ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেই জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।

নাইন ইলেভেনকে সামনে রেখে আল কায়দার হামলার পরিকল্পনা করছে। তারা এই হামলার মধ্যে দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় এমন একটি তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। আর এ ধরনের তথ্য পাওয়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রটি জানায়।

পুলিশের সতর্কবস্থা নেওয়ার জন্য বার্তাটি মোবাইল ফোনে পাঠানো হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রাজধানীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এতে লেখা রয়েছে- ‘নাইন ইলেভেন, আবারো হামলার পরিকল্পনা করছে আল কায়দা। হামলার মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়। সো কিপ এলার্ট।’

নাম প্রকাশ না করে ওই ওসি বলেন, আমরা এই ধরনের ম্যাসেজ পাওয়ার পরপরই থানা এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছি।

এই ধরনের বার্তা ডিএমপি’র প্রত্যেকটি থানা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নিকট দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশাকরি সংশ্লিষ্ট সবগুলো থানাই নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যও আল কায়দা আবারো হামলা পরিকল্পনা করছে এমন তথ্য দিয়েছেন।

তারা মনে করেন, যেহেতু কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশসহ ভারতে আল-কায়েদা শাখা খোলার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সেহেতু এই অঞ্চলে হামলা হতে পারে।

২০০১ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনায় আত্মঘাতী হামলা চালায় আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা। নিউইয়র্কের সে সময়ের সবচেয়ে উঁচু ভবন টুইন টাওয়ার (ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার) গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, হামলা চলে দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনেও। এই একটি দিন মার্কিন নীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে, সেইসঙ্গে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও।

কি হয়েছিল নাইন ইলেভেনে?

১৩ বছর আগে এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ এক যোগে চালানো চারটি আত্মঘাতি হামলায় নিহত হয় অন্তত ৩ হাজার মানুষ৷ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় এই ঘটনা ঘটে৷ চারটি মার্কিন যাত্রিবাহী বিমান ছিনতাই করে এই হামলা চালানো হয়৷ দুটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে৷ গুড়িয়ে ধসে পড়ে ভবন দুটি৷ অ্যামেরিকান এয়ারলাইন্সের ছিনতাই করা আর একটি বিমান নিয়ে হামলা চালানো হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে৷ তবে যাত্রীদের চেষ্টায় নির্ধারিত স্থানে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে পেনসিলভেনিয়ার আকাশে বিধ্বস্থ হয় চতুর্থ বিমানটি৷

হামলার সাথে সাথেই যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওসামা বিন লাদেনের উপর৷ শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান৷ লাদেনকে জীবন দিয়ে সেই অভিযানের মূল্য দিতে হয় ১০ বছর পর ২০১১ সালে৷ পাকিস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের এক অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন।

আল-কায়েদা এখনও বড় হুমকি

নাইন ইলেভেনের পর থেকে ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা অ্যামেরিকার শত্রুতে পরিণত হয়েছিল৷ ঐ ঘটনার এক দশক পর লাদেনের মৃত্যুর পর ওবামা বলেছিলেন, আল-কায়েদার শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ এরপরও আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আরব দেশগুলো, উত্তর আফ্রিকা, এমনকি সিরিয়াতেও তাদের দৌরাত্ম্য কিন্তু এখনও কমেনি৷

সম্প্রতি আল কায়দার প্রধান জাওয়ারির বাংলাদেশ ও ভারতে শাখা খোলার হুমকিতে এই অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেশের সরকার আইন শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কবস্থা রেখেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাওয়ারি এমন ঘোষণা শুধু মিডিয়া কাভারেজ পেতে নাকি, সত্যি সত্যি তাদের এই অঞ্চলে চোখ পড়েছে তা সময়ই বলে দেবে।
-

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৬:২৮   ৪৩৩ বার পঠিত