বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪

দুদকের সাক্ষী হাজির, সময় চাইবেন খালেদা

Home Page » জাতীয় » দুদকের সাক্ষী হাজির, সময় চাইবেন খালেদা
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪



khaleda_zia_sm_987944107.jpgবঙ্গ-নিউজ: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। তবে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে ফের সময়ের আবেদন জানাবেন খালেদা জিয়া।খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার কার্যক্রম ও মামলার বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে করা চারটি আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় গত ৩ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছিলেন।

বর্তমানে আপিল বিভাগে দু’টি আপিলের শুনানি চলছে এবং বাকি দু’টির শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। তাই একই কারনে বুধবারও সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন করা হবে।

মামলা দু’টির অন্যতম আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় তার জন্যও সময় চাওয়া হবে।

একই কারণে এর আগে ৫ বার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদের রায়ের আদালতে মামলাটির বিচার চলছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, হারিছ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি হচ্ছেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল।

মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে হাজিরা দেবেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।

২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পান। পরের বছরের ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন।

মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় গত ১৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

গত ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ-আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকসিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই দুই মামলা পরিচালনার জন্য ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অস্থায়ী আদালতে পর পর পাঁচটি ধার্য তারিখে উচ্চ আদালতে আবেদন বিচারাধীন উল্লেখ করে মামলার বিচারিক কার্যক্রমের প্রথম ধাপ সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন জানান আসামিপক্ষ। সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে বুধবার পুনর্নির্ধারণ করেছেন আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

অন্যদিকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিচার শুরুর আগেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১১ বার চার্জ শুনানির জন্য আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নেন খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৫:৩২   ৩৭৩ বার পঠিত