রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪
সাক্ষরতার হারে কোন উন্নতি নেই
Home Page » প্রথমপাতা » সাক্ষরতার হারে কোন উন্নতি নেইবঙ্গনিউজ-আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস সামনে রেখে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রী। তবে তার দেয়া তথ্যেও বড় ধরনের গড়মিল স্পষ্ট।সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, ২০১১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন। সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ ধরলে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ৪১ হাজার; যা মন্ত্রীর দাবির থেকে প্রায় তিন কোটি বেশি।
অবশ্য কোন হিসাবে সাক্ষরতার হার ও নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলেননি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
গত সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীও কোনো জরিপ ছাড়াই সাক্ষরতার হার নিয়ে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেছেন।
২০১৩ সালে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী আফছারুল আমীন দাবি করেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
তার এক বছরের মাথায় বর্তমান মন্ত্রী সাক্ষরতার যে হার দিলেন তা গত বছরের তুলনায় ছয় শতাংশ পয়েন্ট কম।
আর ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার ৫৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
২০১০ সালের পর প্রতিবছরই সাক্ষরতার হার নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর সব তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে গত বছর সেপ্টেম্বরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে সাক্ষরতার হার শতভাগে নিয়ে যাওয়া হবে।
তবে ২০১৪ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না স্বীকার করে মন্ত্রী ফিজার বলেন, “লক্ষ্য স্থির ছিল, তবে তা হচ্ছে না। এখনো অনেক কিছুই করার বাকি।”
‘সাক্ষরজ্ঞান বঞ্চিত’ দেশের আড়াই কোটি মানুষকে ‘সাক্ষর’ করতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশে শিক্ষার্থী ভর্তির সঠিক পরিসংখ্যান না দিয়ে মন্ত্রী দাবি করেন, এই হার ‘শতভাগের কাছাকাছি’।
“একটু কম-বেশি মিলিয়ে নেবেন। আমরা প্রত্যাশার জায়গাটা ঠিক রাখি।”
তিনি প্রশ্ন করেন, “সাক্ষরতার হার পঁয়ষট্টির জায়গায় ছেষট্টি হলে অসুবিধা কি? এটা তো হতাশার কথা নয়।”
আগের মন্ত্রীর মতো ফিজারও দাবি করেন, ২০১০ সালে বিবিএসের জরিপের পর শিক্ষার হার বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় সাক্ষরতার হার বেড়েছে।
তবে আড়াই কোটি মানুষ কোন হিসাবে নিরক্ষর- সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর পাশে বসে মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন বলেন, “সাক্ষরতার হার ৬৫/৬৬ শতাংশেরও বেশি হতে পারে। বস্তিতে গেলে তো নিরক্ষর লোক পাওয়াই যায় না।”
সচিবের বিশ্বাস, ৬৫ শতাংশ বলা হলেও দেশের সাক্ষরতার হার বর্তমানে ‘৭০ শতাংশের কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছে।
ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন
‘টেকসই উন্নয়নের মূলকথা সাক্ষরতা আর দক্ষতা’- এ স্লোগান নিয়ে সোমবার সাক্ষরতা দিবসে রাজধানীতে আয়োজন করা হয়েছে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের, যাতে অংশ নিচ্ছেন ৩৬টি দেশের প্রতিনিধি।
মন্ত্রী জানান, শিক্ষা ও সাক্ষরতার মাধ্যমে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের সাফল্য এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্জিত কৃতিত্বের বিষয়গুলো এই সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গার্লস অ্যান্ড উইমেন্স লিটারেসি অ্যান্ড এডুকেশন: ফাউনেডশনস ফর সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে ১৪টি দেশের প্রতিনিধিদের হাতে ইউনেস্কো লিটারেসি অ্যাওয়ার্ড তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, “নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। এই সাফল্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করে।”
অন্যদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল হক খান ও জ্ঞানেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই দিবস পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৯:৫৩ ৩৬৬ বার পঠিত