শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪
সফল বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ সফিউল্লাহ
Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » সফল বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ সফিউল্লাহবঙ্গ-নিউজ-গ্লোবাল কার্বন ট্রান্সপোর্ট নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সফিউল্লাহ। ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই গবেষণা করে আসছেন তিনি। ১৯৮০ থেকে ‘৯০ সাল পর্যন্ত ইউএনইপি এবং হামবুর্গ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে গ্লোবাল কার্বন ট্রান্সপোর্ট নিয়ে গবেষণা করেন সফিউল্লাহ্। প্রাকৃতিক উপায়ে সমুদ্র তলদেশে বছরে দুই কোটি টন নদীবাহিত জৈব ও অজৈব কার্বন জমা হয়। যা থেকে ‘ওশেন ওয়াটার কেমিস্ট্রি’ ও ‘গ্রিনহাউজ ইফেক্ট’-এর প্রভাব বিশ্বদরবারে তুলে ধরেন তিনি। আর এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৫ সালে লন্ডন রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির ফেলো নির্বাচিত হন ড. সৈয়দ সফিউল্লাহ। বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স থেকে বিজ্ঞানে অবদানের জন্য স্বর্ণপদক পান ১৯৮৬ সালে। মাছের সার থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরি, আর্সেনিক মুক্তকরণ ফিল্টার এমনকি কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের প্রক্রিয়া নিয়েও কাজ করছেন তিনি।
পরিবেশের ওপর তিকর প্রভাব কমাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিয়ে সফিউল্লাহ শিার্থীদের সাথে কখনো গবেষণাগারে, কখনো মাঠে, রোদে পুড়ে, কাদা মেখে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। দীর্ঘ গবেষণার পর অধ্যাপক সফিউল্লাহ আবিষ্কার করেছেন দীর্ঘস্থায়ী পলিমারিত সম্পূরক জৈবিক সার। যা অধিক ফলন দিবে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধবও। এ সারের নাম দেন ‘সুষমা’। ১৯৯১ সালে এ সারের প্যাটেন্ট পান তিনি। খৈল চূর্ণ, ডিমের খোসা, পটাশ, টিএসটি, অজৈব যৌগ হিসেবে নাইট্রোজেন পলিমার হিসেবে আণুবীণিক পুষ্টি উপাদানসহ অন্যসব উপাদানের নির্দিষ্ট অনুপাতের সংমিশ্রণে তৈরি করেন এ ‘সুষমা’ সার। সুষমা সারে পলিমারকরণ পদ্ধতিতে গাছের প্রধান পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ এমনভাবে আবদ্ধ করা হয়, যাতে গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী ওইসব উপাদান ধীরে ধীরে মাটিতে মিশতে থাকে। ফলে অপচয় হয় না। ২০০৫ সাল থেকেই কৃষিজমিতে এ সারের সফল প্রয়োগ হয়ে আসছে। বীজতলায় প্রতি শতাংশ জমিতে ৫০০ গ্রাম এবং ফসলের েেত এক থেকে দেড় কেজি প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট। জমি তৈরির শেষে ‘সুষমা’ সার মাটিতে মেশাতে হবে।
কৃষকদের সারসংক্রান্ত সেবার জন্য পরিবেশ বিজ্ঞানী সফিউল্লাহ নিজ উদ্যোগে সাভারের গোকুলনগরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘গ্রিন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল প্রডাক্টস অ্যান্ড মিটিগেশন কনসালটেন্টস লিমিটেড’। এখানে প্রাথমিকভাবে কিছু সার উৎপাদন করে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জের শোভন অর্গানো ফার্টিলাইজার লিমিটেড বছরে ৫০ হাজার টন করে সুষমা সার উৎপাদন করছে।
বিজ্ঞানী অধ্যাপক সফিউল্লাহ্ এ ছাড়াও দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি করেছেন স্বল্প মূল্যমানের সিমেন্ট। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তৈরি করেছেন বিশেষ সস, যা এখন বিএসটিআই অনুমোদিত। আমাদের দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য অঞ্চলের মাটির নিচে পড়ে আছে শত শত টন পিট। এই পিট থেকে তৈরি করেছেন নি¤œমানের জ্বালানি। পিটে কার্বন কণার সাথে পানি থাকে। গবেষণা করে বিজ্ঞানী অধ্যাপক সফিউল্লাহ্ পিট থেকে ২০০৩ সালে উন্নত জ্বালানি প্রস্তুত করেন। যার নাম দেন ‘সাফি ফুয়েল’। পিট থেকে পানি দূর করার জন্য তিনি সোডিয়াম সিলিকেট ব্যবহার করেন। পিটের কার্বন যাতে সহজে দহন হয়, সে জন্য অনুঘটক হিসেবে অল্প পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড যোগ করেন। তৈরি করেন কঠিন গোলাকৃতির ‘ফুয়েল বল’। কম দামের এ জ্বালানি দৈনন্দিন রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এতে ধোঁয়া তৈরি হয় না।
তিনি গবেষণা করছেন কম খরচে কলকারখানার দূষিত তরল বর্জ্য শোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে। এ ছাড়া কারখানার কঠিন বর্জ্য কিভাবে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েও কাজ করছেন তিনি। কৃষি ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই বিজ্ঞানীর পথচলা যদি আরো অগ্রসর হয়। তবে দেশ পাবে আরো নিত্যনতুন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।
এ পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে অধ্যাপক সফিউল্লাহর প্রায় ২৫০টি গবেষণাপত্র এবং ১২৫টি রিভিউ ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। তার ১২টি বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সায়েন্স এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডিজাস্টার, বায়োজিওকেমিক্যাল পারসপেকটিভ অব বাংলাদেশ’, ‘সায়েন্স ইন বাংলাদেশ, পাস্ট প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ ও ‘পরমাণুর ইলেকট্রন সংগঠন এবং কোয়ান্টাম সচেতনতা’।
চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির ৩৬তম বার্ষিক সম্মেলন দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগ ও বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি। কৃষিবিদ এবং রসায়নবিদ এ দুই বিজ্ঞানী একসাথে মিলে কাজ করলে গুণগত মানের শস্য উৎপাদন করা সম্ভব।
আর এ ল্েযই উত্তরবঙ্গের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) প্রথম বারের মতো এ ধরনের জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেছিল। সম্মেলনে মূল বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক প্রফেসর ড. সৈয়দ সফিউল্ল্যাহ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪১:৫৯ ৪৬৬ বার পঠিত