শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪

শরতের চারটি কবিতা

Home Page » সাহিত্য » শরতের চারটি কবিতা
শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪



20121111214217-58faf07d.jpgফ র হা দ ম জ হা র

মেঘের কোলে রোদ হেসেছে

মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের রবীন্দ্রনাথ আজ আমাদের ছুটি
আ হা হা হা হা!

কি করি আজ ভাবছি সবাই ণিক রৌদ্র কখন হারাই
কখন মেঘাচ্ছন্ন ঘরে আবার হুটোপুটি
আ হা হা হা হা!

একটি দেয়াল ঘরের মধ্যে একটি দেয়াল মনে
তুলে রাখি মুদ্রাদোষে মেঘের মিথ্যা শুনে।

কি করি আজ ভাবছি একি! গাছগুলো সব ন্যাংটা নাকি
দাঁড়িয়ে আছে পোশাক ছাড়া গাছেই গাছের জুটি
আ হা হা হা হা হা !

ময়দার বস্তা

আচ্ছা চাঁদ, এই শরতে তুই উঠলি তো উঠলি প্রতিদিনই দেখলাম মাথায় শাদা শাদা বস্তা বস্তা মেঘের বোঝা। আমি রবীন্দ্রনাথের মতো শারদীয় পদ্য লিখতে শিখলাম না। আমি যা লিখি তা তৎণাৎ ময়দার বস্তা হয়ে যায়। তাও সেটা আবার কেনা হয় কাওরান বাজার থেকে। অপুষ্টিতে শীর্ণ আমাকে সেটাই মাথায় বহন করে বেড়াতে হয়। কারণ আমি নিজের ওজন অন্যের মাথায় তুলে দেয়া রপ্ত করিনি। আমি কবি।
ময়দা? জ্বী, মেশিনে ভাঙা কুৎসিত শাদা ময়দা, আর ময়দার গুঁড়া এমনই যে তা কাব্যগুণবর্জিত ধুলাবালুতে নষ্ট করতে থাকে পুষ্পরেণুমণ্ডিত রাবিন্দ্রিক জগত। এই এক কাণ্ড!
তো পদ্য থুয়ে প্রতিদিন তোকে অবজার্ভ করছি, এই বস্তা নিয়া যাস্ কই? দেখি তো দেখি, দেখি তো দেখতেই থাকি। শুকাপ ফুরায়। প্রতিদিনই তোর মাথা মেঘে মেঘে ভারী হয় সাদা সাদা কাব্যগুণবর্জিত ময়দার বস্তায়।
তারপর আসে সেই অভূতপূর্ব আর অপরিণামদর্শী পূর্ণিমা। ফর্সা হলুদে ঝকঝক করতে থাকে জগত। আকাশ তখন শূন্য। আকাশ তখন খালি।
আর বস্তাগুলো পড়ে থাকে আমারই ঘরের মধ্যে। আশ্চর্য!
পব্যাপী ুধার্ত আমার এই তো সংগ্রহ।

আধ্যাত্মিকতা

ভাঁড়ার দেখিয়েছিলে ভালোবেসে, ভাণ্ড চুরি করতে পারি নি
মৌমাছি বটে, তবে কবি তার শুঁড়ে আর কতোই বা বহনে সম?
যতোটুকু সাধ্য ঠিক ততোটুকু মধু শুধু লেগে আছে পিপাসার্ত ঠোঁটে
আবার সুযোগ দাও, মধুভাণ্ডে এইবার প্রাণ আমি দেবো বিসর্জন।

সর্বাংশে শরীর আমি, যদি স্পর্শ দিলে তবে হাতখানা লুকায়ে কী লাভ?
হাতটুকু ধরো, মেয়ে, কৃতাঞ্জলী আমি আজ যে মন্দিরে একা পুরোহিত
সে তো তুমি। তোমারই নিত্যপূজা এইখানে। তোমারই প্রসাদ তুমি নিজে
দিচ্ছ আর নিজে নিচ্ছ। তারপর ছায়া রেখে ফের হয়ে উঠছ মৃত মাটির প্রতিমা।

অতএব মাটি মেখে পড়ে থাকি। এছাড়া তোমাকে পাব অন্য কোনো সাধ্য জানা নাই
কাদায় কর্দমাক্ত হই, বীজ বুনি। আবাদে ও অনাবাদে যাকে চাই তাকে যেন পাই
খাদ্যে ও নিঃশাসে। হর্ষে ও শিহরণে তুরীয় আনন্দে আমি মনেপ্রাণে কৃষক হয়েছি
এ যৌবনজ্বালা মেয়ে ভয়ঙ্কর কবি কোন ধর্ম নীতি বেদ শাস্ত্র শাসন মানে না।

এই তার বিদ্যাঘর, এই তার তন্ত্র বিদ্যা। যদি দেবে তবে আমি সর্বাংশে চাই
কবি বড়ো শারিরীক। তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার বিন্দু বিসর্গও অবশিষ্ট নাই।

যদি মরে যাই

যদি মরে যাই, মুহূর্তটুকু না জেনে
কতোটা বাজল কাকে করি জিজ্ঞাসা?
আজ কি তারিখ? আজ কি আবারও হরতাল
আজ কি আবারও পুলিশ আমাকে মারবে?

যদি মরে যাই স্থানটুকু যদি না চিনি!
কি করে খবর পাঠাব তোমার কাছে?
আজনবি তুমি এ শহরে আজো, মেয়ে
কি করে মৃতের সন্ধান পাবে গ্রামে?

যদি মরে যাই মসজিদ যদি না চিনি
কি করে জানব লাশ নিয়ে যাবে কারা?
কার কাঁধে চেপে যাবো সে গোরস্থানে
গোর খাদকেরা খুঁড়েছে যেখানে মাটি?

যদি মরে যাই, কি করে জানব আজ
রাত নাকি দিন সকাল কিম্বা সন্ধ্যা
কি করে জানব যে লোবান পুড়ে গেল
তার ছাইটুকু কিভাবে কোথায় ফেললে?

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৬:০৪   ৫৪৮ বার পঠিত