শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪
সেলফি
Home Page » ফিচার » সেলফিবঙ্গনিউজ-মোবাইল ফোনে নিজের ছবি তুলে তা ফেসবুকে আপলোড করছেন অনেকেই। যারা এই কাজটি করছেন তাদের লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। কারণ মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা থেকে শুরু করে পোপ ফ্রান্সিস কিংবা মহাকাশচারী আকাই হোসাদি, হলিউড কিংবদন্তি মেরিল স্ট্রিপেরও সেলফি রয়েছে।
নিজের ছবি তোলা ও তা শেয়ার করার প্রবণতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘সেলফি’। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারের কল্যাণে আমরা অনেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত।
চলতি বছর সেলফি শব্দটি অক্সফোর্ড অভিধানের বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও নিজের ছবি তোলার েেত্র যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহৃত হয় তা থেকেই ‘সেলফি’ শব্দটির উৎপত্তি।
অক্সফোর্ড ডিকশনারিজের সম্পাদনা পরিচালক জুডি পারসাল জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নানাভাবে ‘সেলফি’ শব্দটিকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করেছে। ‘সেলফি’কে অক্সফোর্ড অভিধানে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে, একটি ছবি (আলোকচিত্র) যা নিজেরই তোলা নিজের প্রতিকৃতি, সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েব ক্যামে ধারণ করা এবং তা যেকোনো সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করা। ২০০২ সালে একটি অনলাইন ফোরাম প্রথম সেলফি শব্দটি ব্যবহার করেছিল।
সেলফি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে নিজের মানসিক অবস্থা জানাতে নিজের তোলা বা নিজের সম্পাদনা করা ছবি আপলোড করে ভারচুয়াল বন্ধুদের জানানো। নিজের জীবনের অংশবিশেষ বস্তুনিষ্ঠ করে তুলতে আমরা ভারচুয়াল বন্ধুদের সাথে নিজের তোলা ছবি শেয়ার করি।
সেলফির উৎপত্তি
এক দশক আগে সেলফি শব্দটির উৎপত্তি হলেও গত বছর থেকে এর ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। নিজের তোলা ছবি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের পোস্ট করা বাড়তে শুরু করায় সেলফি ও হ্যাসট্যাগ অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয় শব্দ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শুধু ২০১২ সালেই ইংরেজি ভাষায় এ শব্দের ব্যবহার বেড়েছে ১৭ হাজার শতাংশেরও বেশি। ইংরেজিভাষীদের উদ্ভাবন করা এরকম নানা শব্দ প্রায়ই ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার হিসেবে অক্সফোর্ডের অভিধানে স্থান পায়। আর এসব শব্দ সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নানা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে বের হয়ে আসে। অক্সফোর্ড ডিকশনারিজের সম্পাদনা পরিচালক জুডি পারসাল জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নানাভাবে ‘সেলফি’ শব্দটিকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করেছে।
সেলফি প্রজন্ম
ডিজিটাল ক্যামেরা, স্মার্টফোনে নিজের ছবি তুলে তা ফেসবুক, টুইটারে শেয়ার করে অন্যের মতামত পেতে আগ্রহী বর্তমান প্রজন্ম। গবেষকেরা এ প্রজন্মকে বলছেন ‘সেলফি’ প্রজন্ম। এ প্রজন্ম প্রযুক্তি ও নিজেকে নিয়ে ভাবতেই অভ্যস্ত। ভারচুয়াল জগতে বন্ধু তৈরি করে এই প্রজন্ম নিজেকে একাকী করে তুলছে। এখনকার প্রজন্মের তরুণরা ভারচুয়াল জগতে নিজেদের মনের মতো একটি জগৎ গড়ে তুলছে, আর এই জগতে বেশির ভাগ সময় সেলফি পোস্ট দিচ্ছে। সেলফি দিয়ে তার ছবিটিকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে চাইছে তরুণেরা।
আমরা যে অস্তিত্বশীল, এটা জানান দেয়ার জন্যই অনেকে ছবি শেয়ার করি এবং আমরা যাদের কোনো দিন দেখিনি তাদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়ে মানসিক শান্তি পাই। এভাবে অন্যকে খুশি করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় কাছের বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারছি না। এ ছাড়াও সেলফি পোস্ট করার উদ্দেশ্য থাকে বেশি করে মন্তব্য ও লাইক পাওয়া। কিন্তু ছবি পোস্ট করার পর আশানুরূপ সাড়া না পেলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।
তারুণ্যের অটোগ্রাফ সেলফি
প্রযুক্তির এই যুগে অটোগ্রাফ নেয়ার রেওয়াজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। দিন দিন এর জায়গা দখল করে নিচ্ছে সেলফি প্রযুক্তি। একটা সময় ছিল, যখন বিখ্যাত কারো অটোগ্রাফ নিয়ে সেটা সংগ্রহে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো। এখন অটোগ্রাফের বদলে সেলফিই হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়। আর এর মাধ্যমে খুব সহজে প্রিয় ব্যক্তির সাথে নিজের ছবি তোলাও বেশি অর্থবহ মনে করছেন অনেকে। সেলফি অনেকটা আত্মতৃপ্তির বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধরুন কোনো অনুষ্ঠান কিংবা পার্টিতে দেখা হয়ে গেল নামী কোনো তারকার সাথে। মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে ওই তারকার কাছ থেকে অটোগ্রাফ না নিয়ে তার সাথে দাঁড়িয়ে একটা সেলফি তুলতেই বেশি আগ্রহী তরুণেরা।
সেলফি পোস্ট করা
বর্তমান প্রজন্ম যতই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন না কেন, অনেকেই আবার মনে করেন সেলফি পোস্ট করা খারাপ কিছু নয়। সেলফির মাধ্যমে নিজের প্রতি ভালোবাসা বোঝা যায়। এটি নিজের মানসিক শক্তির একটি উপায় হতে পারে। নিজের আত্মবিশ্বাসকে এবং নিজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্তকে স্মরণ করতে সেলফি তুলে থাকে তরুণেরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, সেলফি পোস্ট করার পেছনে মানুষের যতখানি না লোক দেখানোর বিষয় থাকে, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ ও নিজের সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে। ছুটির দিন ও সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ড উপলে মানুষ বেশি নিজের ছবি তুলে রাখে। নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পেতে সেলফি পোস্ট করেন। আমি কে বা আমি কী করি তা জানাতেই অনেকে পোস্ট করেন নিজের ছবি।
সেলফি শিষ্টাচার
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছবি পোস্ট করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু শিষ্টাচার মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর তাতে যে মন্তব্য বা লাইক আসে তা নিয়ে নিজের সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা মোটেও ঠিক নয়।
নিজের আত্মবিশ্বাস ও অতি-আত্মবিশ্বাসের মধ্যে অবশ্যই সীমারেখা থাকতে হবে।
ছবি পোস্ট করার সময় সচেতন হয়ে বুঝেশুনে ছবি নির্বাচন করে পোস্ট করা উচিত।
খেয়াল রাখুন ছবি পোস্ট করার পর বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আশায় দিনে একাধিকবার ছবি পোস্ট করার অভ্যাস দাঁড়িয়ে না যায়।
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এসব সাইটে ছবি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কাও থাকে। সামাজিক যোগাযোগের সাইটে প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
দুর্ঘটনারোধে গাড়ি চালানোর সময় সেলফি নিষিদ্ধ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহর পুলিশ। বাড়িতে একা বসে সেলফি তুললে কেউ তিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলে এমন হাইওয়েতে গাড়িতে বসে সেলফি তোলা নেহায়েত পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। গাড়ি চালানোর সময় সেলফি তুলবেন না। কারণ আপনার ধারণকৃত ছবি বা ভিডিওই সামান্য ভুলের কারণে শেষ স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে।
বিশ্বজোড়া সেলফি
এ যুগের জনপ্রিয় এক ধারা সেলফি। ফেসবুক ভেসে যায় এই সেলফিতেই। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তৈরি করেছে ‘গ্লোবাল সেলফি’। ১৩১টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষের তোলা সেলফি দিয়ে নাসা তৈরি করেছে মহাকাশ থেকে দেখা পৃথিবীর মানচিত্র। পৃথিবীর এই মানচিত্রে মোজাইক পদ্ধতিতে বসানো হয়েছে মানুষের ছবিগুলো। জুম করে প্রতিটি সেলফিই স্পষ্ট করে দেখা যায়।
চলতি বছরের ধরিত্রী দিবস উপলে নাসা এ আয়োজন করেছিল। নাসার প্রোপালসন ল্যাবরেটরিতে নিজের প্রতিকৃতি তুলে পাঠিয়েছিলেন অংশগ্রহণকারীরা। আর সেগুলো দিয়েই তৈরি করা হয়েছে গ্লোবাল সেলফি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:০২ ৪০৫ বার পঠিত