মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৩
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্র সক্রিয় করার উদ্যোগ
Home Page » জাতীয় » জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্র সক্রিয় করার উদ্যোগবঙ্গ-নিউজ ডটকম : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্র সক্রিয় করে তোলার জন্য নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে আঞ্চলিক কেন্দ্রের জন্য বাড়ি ভাড়া ও জনবল পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলো থেকে স্নাতক পরীক্ষার উত্তপত্র বিতরণ হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা সামগ্রী ও সেবা প্রদান কাজ অধিক মাত্রায় শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, “আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় দুই হাজার কলেজের ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর বিড়ম্বনার পাশাপাশি শিক্ষক-অভিভাবকদের হয়রানি ও দুর্ভোগ কমবে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে গতি আসবে।”জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন (১৯৯২) অনুযায়ী, দেশের যে কোনো স্থানে আঞ্চলিক কেন্দ্র বা ক্যাম্পাস স্থাপন করা যাবে। তবে দীর্ঘদিনেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। যদিও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছয় বিভাগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বা শাখা খুলে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনিয়ম, দুর্নীতি, সেশনজটসহ নানা সংকটে জর্জরিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৯ সালে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থেকে কলেজগুলো ছয়টি বিভাগীয় শহরে ছয়টি সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ছেড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তখন যে চারটি বিকল্পের প্রস্তাব দেয় তার মধ্যে একটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি বিকেন্দ্রীকরণ করা। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও বিকেন্দ্রীকরণ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ছয় আঞ্চলিক কেন্দ্রে ভাগ করার কথা বলা হয়। নীতিমালায় প্রতিটিকে ক্ষমতা দেওয়ার কথাও আছে, যেগুলো এক পর্যায়ে হবে ছয়টি পৃথক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই কমিটির সুপারিশে সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়টি বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) তোফায়েল আহমদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ২১ মার্চ উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মে থেকে বাড়ি ভাড়া করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হলেও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে ক্ষমতা দেওয়া হয় সীমিত পর্যায়ে। ফল প্রকাশ, সনদ বা নম্বরপত্র দেওয়া, সংশোধনসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বরাদ্দ থাকে মূল ক্যাম্পাসে। তবে এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো মূলত মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে একজন পরিচালকের অধীন কাজ করবেন ৮৪ জন। প্রত্যেক কেন্দ্রে থাকবেন একজন করে উপ-কলেজ পরিদর্শক, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও শিক্ষা) এবং উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব)। তাদের অধীনে থাকবেন একজন করে সহকারী। এছাড়াও শাখা কর্মকর্তাসহ প্রয়োজনীয় জনবল।ছয়টি কেন্দ্রের জন্য ২০১১ সালে রাজশাহীতে মাসিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে একটি দোতলা বাড়ি ও রংপুরে জিএল রায় রোডে মাসে ৩৯ হাজার টাকায় তিন তলা বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। মাসে ৬০ হাজার টাকায় খুলনা সদরের খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা সোনাডাংগা (দ্বিতীয়) আবাসিক এলাকার চারতলা ভবনে খুলনা কার্যালয়, মাসিক ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে বরিশালে সিঅ্যান্ডবি সড়কের পাশে ছায়াবীথিতে তিনতলা ভবনের দুটি তলায় বরিশাল কেন্দ্র ও সিলেট কেন্দ্র কার্যালয়ের জন্য মাসে ২২ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয় পাঠানটুলার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা। সর্বশেষ, এ মাসের শুরুতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে পাঁচতলা ভবনের চতুর্থতলা ভাড়া নেওয়া হয়েছে মাসিক ৫০ হাজার টাকায়। এছাড়া ১৫ এপ্রিল বরিশালের বাড়িটির চুক্তি নবায়ন করে ২৩ হাজার টাকা করা হয়। খুলনায় নতুন বাড়ি নেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকার স্থলে মাসিক মাত্র ১৬ হাজার টাকায় সোনাডাংগায় (দ্বিতীয় ফেইজ)।এরইমধ্যে রংপুরে ৭, রাজশাহীতে ৯, বরিশালে ৭, খুলনায় ৫ ও সিরেটে ৩ জনকে গাজীপুর থেকে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রামেও দ্রুত নিয়োগ হবে। গত ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্র যথা- রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম হতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষার ১৭টি বিষয়ের ২ লক্ষাধিক উত্তরপত্র এক হাজার পরীক্ষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর আগে উত্তরপত্রের জন্য বিভিন্ন জেলার পরীক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতেন। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রগুলো থেকে পরীক্ষকদের কাছে উত্তরপত্র বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে কলেজ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য মালামাল বিতরণ, প্রবেশপত্র/রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণ, পরীক্ষা এবং ভর্তির যাবতীয় কাগজপত্র এবং ফি গ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া আঞ্চলিক কেন্দ্রের আওতাধীন অধিভুক্ত সকল কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সাময়িক সনদ ও নম্বরপত্র ওই সব কেন্দ্র থেকে বিতরণ করা হবে।এর আগে ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বপ্রথম খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রে স্ব স্ব অঞ্চলের পরীক্ষকদের হাতে ২০১০ সালের ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষার খাতা বিতরণের মধ্য দিয়ে ছয় আঞ্চলিক কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। তবে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন সেলের প্রধান (উপ-রেজিস্ট্রার) আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বঙ্গ-নিউজকে বলেন, “নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করে তোলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে অনুযায়ী এসব কেন্দ্র হতে সংশ্লিষ্ট কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা সামগ্রী ও সেবা প্রদান কাজ অধিক মাত্রায় শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”বঙ্গ-নিউজকে ভাইস-চ্যান্সেলর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বিধান বাস্তবায়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনে বাড়ি ভাড়া ও লোকবল সংযুক্ত করা হচ্ছে। সাতটি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। কেন্দ্রগুলোর আওতাধীন কলেজগুলোকে সংযুক্ত করা হবে।”
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৮:০৫ ৭১৫ বার পঠিত