শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪

গণমাধ্যমের ওপর চরম নিয়ন্ত্রণ আনতেই নতুন নীতিমালা

Home Page » জাতীয় » গণমাধ্যমের ওপর চরম নিয়ন্ত্রণ আনতেই নতুন নীতিমালা
শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪



human-rights-watch.jpgবঙ্গ-নিউজঃবাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর চরম নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য করা নতুন গণমাধ্যম নীতি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত সরকারের।
এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এই আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন- যা গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা জানায়, সম্প্রচার নীতমালা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গত ৬ আগস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এই নীতিমালায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
‘যেমন- রাষ্ট্র বিরোধী, জাতীয় আদর্শ সমুন্নত রাখা, বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি আস্থাবান, সহিংসতা, বিদ্রোহ প্রভৃতি। এইসব অস্বচ্ছ শব্দই প্রতিবেদন তৈরি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে’ মনে করে এইচআরডাব্লিউ।

সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘এই অস্বচ্ছ নীতিমালা সরকারকে তার বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে। আর এতে বিচার ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে যাবে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সম্প্রচার নীতিমালার পক্ষ নিয়ে হুমকির সুরে কথা বলেছেন বলে মনে করেন ব্র্যাড অ্যাডামস।

তিনি বলেন, ‘গত ২৮শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সীমা লঙ্ঘন না করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন- যে ডালে বসে আছেন সেই ডাল কাটবেন না, তাহলে নীচে পড়ে যাবেন। আমার মনে হয়, এই ইঙ্গিতই বুদ্ধিমানের জন্য যথেষ্ঠ।’

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘নতুন নীতিমালা স্বাধীন সাংবাদিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অথচ দুর্নীতি প্রতিরোধ, সরকারের কাজের ভারসাম্য রক্ষা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য।’

তিনি বলেন, ‘নতুন নীতি সরকারের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে সরকারকে ক্ষমতাবান করেছে। তাই সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে এই নীতিমালা বাতিল করা, কারণ এই সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এইচআরডাব্লিউ বিবৃতিতে আরো বলে, বাংলাদেশ সরকার গত ৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় চলচ্চিত্রে ইংরেজি ‘সাব টাইটেল’ নিষিদ্ধ করেছ। নীতিমালায় বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ ও মিশ্রণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ব্র্যাড অ্যাডামস মনে করেন, ‘নতুন নীতিমালায় বাংলাদেশি সংস্কৃতি তুলে ধরার যতটা না উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তার মতে, ‘বাংলাদেশের মানুষ যা দেখতে চায়, যা শুনতে চায়, যা পছন্দ করে তার ব্যবস্থা করতে হবে।’

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘সরকার যেন সেই আগের সময়ে ফিরে যাচ্ছে- নাগরিকদের কি দেখতে হবে, বলতে হবে, পছন্দ করতে হবে- তা ঠিক করে দিচ্ছে। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, সেসব দিন পার হয়ে গেছে। এখন ডিজিটাল যুগ।’

এইচআরডাব্লিউ জানায়, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুশীল, নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার কনভেশনে স্বাক্ষর করা একটি দেশ। তাই সরকারকে তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে বিবিসি-র নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিবিসি-র নীতিমালায় যা আছে, তা এখানে অনুপস্থিত।’

তিনি বলেন, ‘বিবিসি তার নীতিমালায় স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং বহুমতের কথা বলেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার নীতিমালার মাধ্যমে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।’

বাংলাদেশ সময়: ০:০৯:৫৫   ৩৩৫ বার পঠিত