বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০১৪

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

Home Page » এক্সক্লুসিভ » কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী
বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০১৪



kaji.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ  ১২ ভাদ্র, ১৪২১ সন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্য ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এ দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’- কবির লেখা এই পঙ্ক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ১৪ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দেওয়া হয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে পিজি হাসপাতালে।

জাতীয় জাগরণের রূপকার নজরুল বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমোজ্জ্বল প্রতিভা। শিল্পী জীবনের সীমিত পরিসরে নজরুলের বহুমুখী প্রতিভার মূল্যায়ন এখনো সময়সাপেক্ষ।

দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনও আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত-বৈভবের কাছে। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত।

যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি জীবনেও। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও অপরটি ‘ভাঙ্গার গান’। ১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই বাংলা কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন, মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

কবি নজরুলের কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল বাঙালির প্রেরণার উৎস। তার কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নজরুলের কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে যাচ্ছে।

তিনি হয়ে উঠেছিলেন গোটা ভারত উপমহাদেশের মানুষের মুক্তি ও চেতনার কবি। বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলে, শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শক্তিমান লেখনীর মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করে জেল খেটেছেন একাধিকার।নজরুল বিদ্রোহ করেছেন সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

নজরুল মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বুধবার সকালে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজেনৈতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে সকালে কবির মাজার প্রাঙ্গণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট নানা কর্মসূচি পালন করবে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও রেডিও সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৮টায় কবির মাজারে স্মরণসভা হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এতে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সেখানে ফাতেহা পাঠ করা হবে।

এদিকে, ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতিজড়িত কুমিল্লায় নজরুল পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৯টায় নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্রে নজরুল প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল, সকাল ১০টায় চেতনায় নজরুল স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কবিতা কুইজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা (নজরুল ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় প্রথম শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ৪টি গ্রুপে অংশগ্রহণ করবে) অনুষ্ঠিত হবে।

সন্ধ্যা ৬টায় টাউন হলে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় নাটক পরিবেশিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:১২   ৩৯৪ বার পঠিত