বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০১৪
খোঁজ মেলেনি পিনাকের, ৩০ লাশ উদ্ধার
Home Page » প্রথমপাতা » খোঁজ মেলেনি পিনাকের, ৩০ লাশ উদ্ধারমুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় লঞ্চডুবির পর চতুর্থ দিনে নতুন করে ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে।
এদের মধ্যে ১৭ জনের পরিচয় জানার পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল।এদিকে লঞ্চ এমএল পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনেও নদীর তলদেশে এর অবস্থান সনাক্ত করা যায়নি। উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে সার্ভে ভেসেল জরিপ-১০ বৃহস্পতিবার সকালে আবারো মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়েও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঝপথ থেকে ফিরে যায় এ নৌযানটি। তার পরিবর্তে কাণ্ডারি-২ নামে একটি টাগবোটে করে সার্ভে ভেসেলের যন্ত্রপাতি মাওয়ায় পাঠানো হয়।
সেসব যন্ত্রপাতি নিয়ে মাওয়ায় পৌঁছানোর পর টাগবোট ‘কাণ্ডারি-২’ বুধবার গভীর রাতে প্রাথমিক তল্লাশি শুরু করে। চাঁদপুরের ছয় কিলোমিটার ভাটি থেকে কাজ শুরু করে মাওয়ায় পৌঁছালেও লঞ্চের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানান কাণ্ডারি-২ এর চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম মঞ্জুরুল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার সকালে নৌযানটি আবার লঞ্চডুবির ঘটনাস্থল ঘিরে আট কিলোমিটার এলাকায় সোনার দিয়ে স্ক্যান শুরু করে। নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের উদ্ধারকর্মীরাও এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
মঞ্জুরুল করিম বলেন, লঞ্চটির অবস্থানের সম্ভাব্য এলাকা দুই ভাগে ভাগ করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। প্রথম ভাগের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চলছে ‘সাব-বটম প্রোফাইলার’ দিয়ে। আর অন্যভাগে ‘সোনার’ ব্যবহার করে অনুসন্ধান চলছে।
কিন্তু লঞ্চের অবস্থান জানতে না পারায় উদ্ধার অভিযান কার্যত আটকে আছে শুরুর জায়গাতেই। লঞ্চের অবস্থান সনাক্ত করা গেলে তবেই উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীককে কাজে লাগিয়ে সেটি উদ্ধারের কাজ শুরু হবে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে লৌহজং ক্রসিংয়ে লঞ্চ এমএল পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ১১০ জনকে উদ্ধার করা হয় বলে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসন থেকে দাবি করা হয়।
মাওয়ায় জেলা প্রশাসনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে তৈরি করা নিখোঁজদের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী এখনো ১৩৭ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে গত দুদিন ধরে নদীর দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে পদ্মা, মেঘনাসহ কয়েকটি নদীর ভাটিতে বিভিন্ন স্থানে লাশ ভেসে উঠতে শুরু করেছে। তীব্র স্রোতে ভেসে লাশ সমুদ্রে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া লাশগুলো যাতে স্বজনরা সহজে সনাক্ত করতে পারেন সেজন্য মঙ্গলবার রাত থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরুল্লাহ জানান, লাশ সনাক্ত করার জন্য ইউএনও ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। নিহতদের লাশের ছবি, পোশাকের বর্ণনা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের চিহ্ন দেখে সনাক্তের পর ফরম পূরণের মাধ্যমে কমিটি স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করছে।
মুন্সীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মিয়া মো. কুতুবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোলা থেকে ১০ জন, শরীয়তপুর থেকে আটজন, বরিশাল থেকে পাঁচজন, চাঁদপুরে পাঁচজন, লক্ষ্মীপুরে একজন, মাদারীপুরে একজন ও ঘটনাস্থল মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
যে ১৭ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন-
মাদারীপুরের শিবচর থানার গোয়াখোলা গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে নুসরাত জাহান হীরা (২২), একই এলাকার উত্তারাইল গ্রামের আলম শেখের স্ত্রী হাসি বেগম (৩৮), সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের খালাশিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইনা আক্তার (২২), হায়দার চৌকিদারের মেয়ে ইমা (১৮), রহিম মাদবরের মেয়ে ইপা আক্তার (১৪), রহিম মাদবরের দেড় বছরের সন্তান ইব্রাহিম (১ বছর ৭ মাস); শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের আবদুল জব্বারের মেয়ে জান্নাতুল নাইম লাকী (২৫), নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে উদ্ধার হওয়া মাদারীপুরের শিবচরের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৫)।
এছাড়া ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার আব্দুল হাইয়ের মেয়ে রিতা আক্তার (২৫), সদরপুর উপজেলার আজিজ মাদবরের ছেলে আবু ইউসুফ (২২), একই উপজেলার সাতরশি গ্রামের রুবেলের কন্যা ফাইজা (৭), মানিকনগর উপজেলার সালমা নগরকান্দা গ্রামের মনির উদ্দিন ফকিরের ছেলে জামাল হোসেন (২৭), গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে ইশরাত হোসেন মিম (১৩), বরিশালের বাকেরগঞ্জের শহীদুল ইসলাম জমাদ্দারের ছেলে জাহিদ হোসেন (১৫), হানিফ মাস্টারের ছেলে জাকির হোসেন জুলহাস (৪০) ও ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার লুৎফর রহমান আকনের ছেলে ফাহাদ হোসেন আকনের (২৪) লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৯:৫১ ৩৭১ বার পঠিত