রবিবার, ১৩ জুলাই ২০১৪
কাউন্সিলর পারভীন এর বাবার খুনিরাই তাঁকে অপহরণ করেছিল
Home Page » প্রথমপাতা » কাউন্সিলর পারভীন এর বাবার খুনিরাই তাঁকে অপহরণ করেছিলবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ হুমকি-ধমকির পরও বাবার হত্যামামলা তুলে না নেওয়ায় ওই মামলার আসামিরাই তাকে অপহরণ করেছিল বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পারভীন আক্তার।
শনিবার রাতে হবিগঞ্জ থেকে তাকে উদ্ধারের পর রোববার দুপুরে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অপহরণের ঘটনা তুলে ধরেন পারভীন।
তিনি বলেন, জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১১ সালে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা হত্যামামলার আসামিরাই তাকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনের বর্ণনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে এক নারী ফোন করে নিজের দাম্পত্য কলহ মেটাতে পারভীনের সহযোগিতা চান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে পরদিন সকাল ৮টার দিকে জিরানী বাজার এলাকায় রহিম আফরোজ ব্যাটারি কারখানার পাশে যান কাউন্সিলর। সেখানে যাওয়ার পর ওই নারী ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের কাছে থাকা কিছু স্বর্ণালংকার হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়ে পারভীনকে তার সঙ্গে জিরানী বাজার যেতে বলেন।
দুজনে জিরানী বাজার যাওয়ার পর ওই নারী স্বর্ণালংকার দেওয়ার কথা বলে তাকে একটি মাইক্রোবাসে উঠতে বলেন। উঠতে গেলে তার ভেতরে বাবার হত্যামামলার আসামি দুলাল হাজী, জুয়েল ও সোহেলসহ অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে বসা দেখতে পান। তাদের দেখে পারভীন ফিরে যেতে চাইলেও তাকে জোর করে ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে তারা সাভারের দিকে চলে যায়। এসময় দুলাল হাজীসহ অন্যরা তার নাকে মুখে রুমাল চেপে ধরলে তিনি জ্ঞান হারান।
পারভীন বলেন, “শুক্রবার রাত ৯টার দিকে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি একটি ঘরের মধ্যে বন্দি। এসময় ওই নারীসহ অজ্ঞাত আরো ২-৩ জন আমাকে পাহাড়া দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে তারা আমাকে মারধর করে হত্যামামলা তুলে নেওয়ার কথা বলে। এতে সাড়া না পেয়ে তারা একইভাবে আবার আমাকে সংজ্ঞাহীন করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ঢাকা-সিলেট সড়কের দিকে রওনা দেয়।”
পথে পারভীনের জ্ঞান ফিরে আসে। এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা পুলিশের চেক পোস্ট দেখতে পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। পরে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার হাত-পা বেঁধে ঢাকা-হবিগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
কাউন্সিলর বলেন, “এক অটোরিকশা চালক আমাকে স্থানীয় একটি বাজারে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে একজনের মোবাইল ফোন থেকে আমার স্বামী মিনহাজ উদ্দিনকে আমার অবস্থানের কথা জানাই। মিনহাজের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।”
খবর পেয়ে রাতেই গাজীপুর পুলিশের একটি দল হবিগঞ্জ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর নিয়ে আসেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পারভীন বলেন, “আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাকে যে কোনো মুহূর্তে ওরা মেরে ফেলতে পারে।
“জমি-জমার নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১১ সালে দুলাল হাজী, জুয়েল ও সোহেলরা আমার বাবাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি সেই মামলার বাদি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তারা আমাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিল। হুমকির বিষয়ে জয়দেবপুর থানায় একাধিক জিডি রয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, “আল্লাহ যদি তার হায়াত দিয়ে থাকেন তবে তিনি বেঁচে থাকবেন। তার জীবনে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
“আমাদের প্রথম কাজ ছিল ভীকটিমকে উদ্ধার করা। এখন কাজ হচ্ছে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা। তাদের গ্রেপ্তার করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, গোলাম আজাদ খান, জয়দেবপুর থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান ও গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আমির হোসেন ও পরিদর্শক আলম চাঁদ।
কাউন্সিলর পারভীন (২৬) গাজীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ পানিশাইল পলাশ হাউজিং এলাকার মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়ার মেয়ে। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে পানিশাইল ব্যাটারি ফ্যাক্টরির পাশে একটি গ্রাম্য সালিশে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। রাতেও পারভীন বাড়ি না ফেরায় রাত ৯টার দিকে জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্বামী মিনহাজ উদ্দিন।
শনিবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার আউশপাড়া এলাকা থেকে পারভীনকে উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে তাকে গাজীপুরে আনার পর রোববার সকালে তাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে সংবাদ সম্মেলনে আনা হয়।
জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলম চাঁদ জানান, সংবাদ সম্মেলন শেষে পারভীন আক্তার গাজীপুর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
অপহরণের ঘটনায় পারভীনের স্বামী মিনহাজ জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৭:২০ ৫০৮ বার পঠিত