রবিবার, ৫ মে ২০১৩

ধরাছোঁয়ার বাইরে মৌসুমি আগাম ফল

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ধরাছোঁয়ার বাইরে মৌসুমি আগাম ফল
রবিবার, ৫ মে ২০১৩



image_470_65368.jpgবিকালে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছেন একটি বেসরকারি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর সোহেল। রাস্তার পাশে ফলের দোকানে কাঁঠাল দেখে দাঁড়ালেন তিনি। এ বছর স্কুলে ভর্তি হওয়া ছেলে অপুর অনেক পছন্দ কাঁঠাল। আগের দিন বায়না ধরেছিল কাঁঠাল খাবে। পছন্দসই একটি কাঁঠালের দাম জিজ্ঞাসা করেই যেন বিপদে পড়লেন তিনি। দোকানদার মাঝারি আকারের কাঁঠালটির দাম হাঁকলেন ৫৫০ টাকা। জিজ্ঞাসা করলেন কত দেবেন? কি বলবেন সোহেল। একদিকে ছেলের কথা, অপরদিকে পকেটের কথা ভাবলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দাম না বলেই বাড়ির পথ ধরলেন।
একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির মার্কেটিংয়ে কাজ করেন শাহ আলম। বাসায় চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থ বাবার লিচু খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। তাই লিচু কিনতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ফলের দোকানে আসা। প্রতিশ’ লিচুর দাম ৬০০ টাকা শুনে চোখ কপালে উঠলেও কিনলেন ৫০টি লিচু। যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে নিজের জন্য এত বেশি দামে লিচু কেনার কথা কল্পনাও করেন না, কিন্তু বাবা খেতে চেয়েছেন বলে কথা।
মধুমাস না এলেও রাজধানীর বাজারে দেখা মিলছে হরেক রকমের মৌসুমি ও আগাম ফলের। আর ফলের বাজারে দেশি এসব সুস্বাদু ফলকে ঘিরে ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি। আম, লিচু, তরমুজ, কঁাঁঠাল, আতাফল, বেল, আনারস, জামরুল সাজানো ফলের দোকানগুলোতে। তবে এগুলোতে ফলের সরবরাহ ও মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও তা সাধারণ ক্রেতা, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। দামের কারণে ফল কিনতে গিয়ে দামশুনে কিছুটা বেকায়দায় পড়েন তারা। কারণ এসব ফলের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বা তারচেয়েও বেশি। দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় বিত্তবান ছাড়া কেউ কেনার সাহস পাচ্ছেন না।
বাজার ঘুরে জানা যায়, মাত্র সপ্তাহখানেক ধরে রাজধানীর বাজারে এসেছে আগাম জাতের লিচু। তবে দামশুনে বিরমি খাবার জোগাড়। প্রতিশ’ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা।
গুলিস্তানের লিচু বিক্রেতা সুজন জানান, এখনো লিচুর মৌসুম আসেনি। তবে ১ সপ্তাহ ধরে কিছু আগাম জাতের লিচু বাজার এসেছে। বাজারে যে লিচু পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই আসছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে। এছাড়া কিছু লিচু আসে নরসিংদী ও কাপাসিয়া থেকে। নতুন আসা লিচুর মধ্যে আকারে বড় লিচু কদমি লিচু নামে পরিচিত। এগুলো প্রতিশ’ গড়ে ৪৫০-৪৮০ টাকায় কিনেন তারা। আর আকারে ছোট লিচু বেলোয়াড়ি লিচু নামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিশ’ ৩০০-৩৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে সারা বছরই পাওয়া যাচ্ছে নানা জাতের আম। যা ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা। তবে বাজারে ৫-৭ দিন থেকে আসছে আগাম জাতের মৌসুমি আম। গুলিস্তানের আম বিক্রেতা বেলায়েত বলেন, বাজারে আসা প্রায় সব দেশি আজ আসছে সাতক্ষীরা থেকে। দামও তুলনামূলক বেশি। জাত ও আকার ভেদে এসব আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০-২০০ টাকায়। পাওয়া যাচ্ছে খিরসাপাতি, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি প্রভৃতি। প্রায় সব জাতের আমের দাম একই। আকারে ছোটগুলো ১৩০-১৫০ টাকা। এবং বড় সাইজের আম ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই আম ও লিচুর মূল আবাদস্থল রাজশাহীর ফল বাজারে আসতে শুরু করবে তখন দাম নাগালের মধ্যে আসতে পারে।
বাজারে কাঁঠাল পাওয়া গেলেও তা পরিমাণে খুবই কম। আগাম ও বারোমাসি এসব কাঁঠাল আসছে পার্বত্য এলাকা থেকে। দাম বেশ চড়া। প্রতিটি মাঝারি আকারের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায় এবং একটু বড় আকারের কাঁঠাল ৪০০-৬০০ টাকা। ভরা মৌসুমে এর দাম সর্বোচ্চ ১০০-১২০ টাকা। গাজীপুর, কাপাসিয়া ও নরসিংদীর কাঁঠাল বাজারে এলে দাম কমে যাবে মনে করেন বিক্রেতারা।
আরেক রসালো ফল তরমুজের ভরা মৌসুম থাকলেও দাম তুলনামূলক বেশি। ছোট আকারের তরমুজ ৬০-৭০ টাকায় পাওয়া গেলেও বড় আকারের এক-একটি তরমুজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা। তরমুজ আসছে সিলেট ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, ফরিদপুর ও ভোলা থেকে। পতেঙ্গার কালো তরমুজ আকারে ছোট ও মিষ্টি বেশি।
শুধু আম, কাঁঠাল, লিচুই নয়, অন্যান্য ফলের দামে স্বস্তি নেই ক্রেতাদের। বাজারে দেশি ফলের মধ্যে বড় আকারের আনারস প্রতিটি ৪০-৫০ টাকা। বাজারে নতুন আসা দেশি সাদা জামরুলের কেজি ১৪০ টাকা আর বিদেশি হালকা লাল রংয়ের জামরুল কেজি ১৬০, বড় আকারের প্রতিটি বেল ৮০-১২০, সফেদা কেজি ৮০-১২০, মিষ্টি কাঁচা আম কেজি ১২০, বড় আকারের পেয়ারা কেজি ১৫০-১৮০, কামরাঙ্গা ৪০-৫০, পানিফল ৮০-১০০, বাঙ্গি ৮০-১০০, আতাফল ১৫০ টাকা।
এছাড়া আপেলের কেজি ১২০-১৪০, আঙ্গুর ১৫০-১৮০, ভারতীয় লালমনি আম ১৮০-২০০, মাল্টা ১৮০-২০০, আনার ২০০-২০০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৭:০৯   ১৩৬২ বার পঠিত