মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০১৪
লেবু রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » লেবু রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপেবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ নরসিংদীর চার উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকাপড় ও সবজির কারণে নরসিংদীর খ্যাতি দেশজুড়ে। কিন্তু দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এবার বিদেশেও নরসিংদীকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৬০ হাজার ১৮০ কেজি লেবু রপ্তানি হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই পরিমাণ আরও বেশি। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পাঁচ হাজার ৩০ কেজি ও মে মাসে চার হাজার ২৯০ কেজি লেবু রপ্তানি হয়েছে।
বিদেশে একেক কেজি লেবু গড়ে দুই পাউন্ড (২০০ টাকারও বেশি) দামে রপ্তানি হয়। আর স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় প্রতি হালি ১৫০-২০০ টাকা দরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুকসেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, কলম্বো লেবুর ব্যাপক খ্যাতি ও কদর ইউরোপে। এটি শুধু নরসিংদীতে উৎপাদিত হয়। আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সারা বছর এ লেবুর প্রচুর আবাদ হয়। অন্যান্য লেবুর চেয়ে এটি আকারে বড়, রসাল ও সুগন্ধিযুক্ত।
মুকসেদ আলী আরও জানান, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশেই নরসিংদীর কলম্বো লেবু রপ্তানি হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইইউর ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট ফুড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের একটি দল নরসিংদীর শিবপুরের দত্তেরগাঁও ভিটিপাড়া এলাকায় এসেছিলেন এই লেবুর বাগান দেখতে।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে শিবপুর, রায়পুরা, মনোহরদী ও বেলাবতে বাণিজ্যিকভাবে কলম্বো লেবুর চাষ হয়। এসব উপজেলার ১৪৪ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় প্রায় এক হাজার ১০০টি লেবুর বাগান রয়েছে। আরও ৩৩০টি নতুন বাগান হচ্ছে। বর্তমানে ৯০০ চাষি পরিবারসহ ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক মিলিয়ে হাজার দশেক লোক লেবু চাষ ও ব্যবসায়ে জড়িত।
চাষিদের কথা: শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও ভিটিপাড়া এলাকার লেবুচাষি খন্দকার মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৩ সালে আমি যখন লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পাচ্ছিলাম না, তখন এলাকার এক আত্মীয়ের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে লেবুর বাগান করি। মাস ছয়েক পরেই ঢাকা থেকে এক পাইকার এসে আমার বাগান থেকে প্রায় তিন হাজার ৩০০ পণ (২০ হালিতে এক পণ) লেবু কিনে নেন। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা পাই। এরপর এলাকার অনেকেই বাগান করার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে আমার পাঁচ বিঘা জমিতে চারটি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ছয়-সাত লাখ টাকা লাভ হচ্ছে।’
রায়পুরা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাবুল চৌধুরী বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর আগে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রথমে এক বিঘা জমিতে লেবুর বাগান করি। তুলনামূলক কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে লেবু বিক্রির টাকা দিয়ে পর্যায়ক্রমে ১৩ বিঘা জমি কিনে লেবু চাষ করছি। এতে খরচ পড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো, আর লাভ হয় ১৫ লাখ টাকা।
দেশ থেকে মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান ইউরোপে এই লেবু রপ্তানি করে। এগুলো হলো: ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল, ফারদিন এন্টারপ্রাইজ, রহিম ট্রেড, আজিজ অ্যান্ড সন্স, ফিরোজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মরিসন এন্টারপ্রাইজ ও ইশতিয়ার ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল।
ফারদিন এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. আরিফ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নরসিংদীর কলম্বো জাতের এই লেবু রপ্তানি করে ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারব বলে আমার মনে হয়।’
রপ্তানি নিষিদ্ধ: রমজান উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশে লেবু রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। এতে ক্ষোভ জানিয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট এমপ্লয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মহাব্যবস্থাপক মাসুম মিয়া বলেন, নরসিংদী আর ইউরোপ ছাড়া অন্য কোথাও এই লেবুর তেমন চাহিদা নেই। তাই রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা এই লেবুটি কোথাও বিক্রি করতে পারছি না। বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করে দেখা উচিত।’
গুণাগুণ: নরসিংদী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আবদুল কাফি জানান, লেবু সাধারণত কয়েক জাতের হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে: জারা লেবু, কারনা লেবু, বড় লেবু, এলাচি লেবু, আসাম লেবু, কলম্বো লেবু, কাটা লেবু ইত্যাদি। লেবুর রসে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অল্প পরিমাণে কোলস্টেরল সোডিয়াম, পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। লেবু মানুষের শরীর বৃদ্ধিতে ও গঠনে বেশ কার্যকর। এটি খনিজ লবণের চাহিদা মিটিয়ে থাকে এবং ঠান্ডা ও সর্দিতে বেশ উপকারী। পাশাপাশি এই লেবুর বাকল হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
আবদুল কাফি আরও বলেন, লেবুর ছাল প্রক্রিয়াজাত করে গন্ধযুক্ত তরল উদ্বায়ী তেল তৈরি করা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইতালি, স্পেন, সিসিলি, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিকভাবে এই তেল উৎপন্ন হয়। এ তেল ওষুধে সুগন্ধি উপাদান হিসেবে এবং সুগন্ধি প্রসাধনী তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০১:২৮ ৫১৬ বার পঠিত