রবিবার, ৫ মে ২০১৩

সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম খালেদার

Home Page » বিবিধ » সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম খালেদার
রবিবার, ৫ মে ২০১৩



image_38273.jpgএরপর অনুমতির তোয়াক্কা করব না। যেখানে জায়গা পাব সেখানেই বসে পড়ব  বিদায় নেবেন নতুবা পালাবার পথ পাবেন না  এই সময়ের মধ্যে ঘোষণা না দিলে রাজপথে অবস্থান  প্রধানমন্ত্রীকে বাসায় চায়ের দাওয়াত দিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী  প্রয়োজনে হেফাজতের কর্মসূচিতে সমর্থন দেব  পাগল-ছাগল মন্ত্রীদের বাদ দিন

শামছুদ্দীন আহমেদ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার নিয়ে এজেন্ডাহীন সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান নাকচ করে দিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বরং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে ঘোষণা না দিলে সরকার অনুমতি দিক, আর না দিক, তখন দাবি আদায়ে রাজপথে অবস্থান নেবেন বলে তিনি হুমকি দেন। একইসঙ্গে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাসায় চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, ‘আপনাকে আমি চায়ের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আসুন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা

নিরসন করি, যেন দেশ ও জাতি সংকট থেকে মুক্তি পায়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে আপনাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে আয়োজিত ১৮ দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এই আমন্ত্রণ জানান। এতদিন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার ব্যবস্থার কথা বললেও গতকাল আর কেবল নামকরণে বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখেননি বিরোধী দলীয় নেত্রী। বিকাল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত দেয়া প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি বারবারই বলেছেন ‘নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা’র কথা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ এবং আটক নেতাদের মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এই সমাবেশ হলে শেষ পর্যন্ত তা মহাসমাবেশে পরিণত হয়। সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা জড়ো হন মতিঝিলে।

এর আগে গত বছরের ১২ এপ্রিল ঢাকার নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত ১৮ দলের জনসমাবেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালে সরকারকে ঐ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে প্রথমবারের মতো আল্টিমেটাম দেন খালেদা জিয়া।

গতকালের সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় দেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে, শ্রমিক সমাজ আজ বিক্ষুব্ধ। সেদিক থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই সরকার সংলাপের কথা বলে নাটক শুরু করেছে। ১৮ দলের এই সমাবেশ বানচাল করতে এবং হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি থেকে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই সরকারের এই ডায়ালগ নাকট। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংলাপই যথেষ্ট নয়, পরিষ্কার বলতে হবে যে, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে। এই ঘোষণা দিলে আলোচনারও খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।’

শুক্রবার গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, সেদিন যেভাবে টেলিভিশনের সামনে কথা বলেছেন, একইভাবে টেলিভিশনের সামনে ঘোষণা দিন যে- দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। সাহস থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, দেখুন কী হয়, এখন সেটিই দেখার বিষয়।

বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, বিরোধী দলের বহু নেতা-কর্মী এখনো জেলে। তাদের মুক্তি দিয়ে ও ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার করে আগে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করুন, নির্দলীয় সরকারের ঘোষণা দিন। এরপর নির্দলীয় সরকারের কাঠামো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরাও আলোচনা চাই, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।

তিনি বলেন, বিপদে পড়লে এ সরকারের সুর নরম হয়, তখন তারা একটার পর একটা ইস্যু সৃষ্টি করে। দেশের মানুষ যখন ফুঁসে উঠেছে তখন বিপদে পড়ে সরকার আলোচনার কথা বলছে, সংসদে যাওয়ার জন্য বিরোধী দলকে আহ্বান জানাচ্ছে। কয়দিন পর হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমাদের চায়ের দাওয়াতও জানাবেন। আমিই তাকে বলছি, আপনি আসুন আমার বাসায়, আপনাকে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের কথা ঘোষণার আগে উপস্থিত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, এখন যদি আমি বলি-২৪ ঘণ্টা আমি এখানে অবস্থান করব, আপনারা কি থাকবেন? উপস্থিত সবাই দুই হাত তুলে সায় দেন। তখন তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ রবিবার) হেফাজতে ইসলামে একটি কর্মসূচি (ঢাকা অবরোধ) রয়েছে। এজন্য নির্দলীয় সরকারের ঘোষণা দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম। এই সময়ের মধ্যে ঘোষণা না দিলে এমন কর্মসূচি দেব, হয় সরকার বিদায় নেবে, নইলে পালানোরও পথ পাবে না। ৪৮ ঘণ্টা পর দেশ রক্ষার ডাক দিলে আপনারা সবাই হাজির হবেন। কাজেই সরকারকে বলব-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিন্তা-ভাবনা করুন। এই সময়ের পর সরকার যদি ধানাই-পানাই করে, জায়গার অনুমতি না দেয়, তাহলে যেখানে জায়গা পাই সেখানেই বসে পড়বো।

হেফাজতে ইসলামের আজকের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে কর্মসূচি পালনের অধিকার সবার রয়েছে। মহানবীর (সা.) অবমাননার যে প্রতিবাদ নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে সেটির প্রতিবাদ আমিও জানাই। যদি দরকার হয় তাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দেব। সরকার যদি ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তি না দেয় তাহলে হেফাজতে ইসলামের লোকজন ঘরে ফিরবে না। সরকারকে বলব-এই আলেম-ওলামাদের কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করবেন না, করলে ফলাফল ভালো হবে না। মহানবীর (সা.) অবমাননার প্রতিবাদে সারাদেশের আলেম সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা কোনো রাজনীতি করে না; কিন্তু বিদেশিদের কাছে তাদেরকে জঙ্গি, তালেবান ও সন্ত্রাসী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এটা মিথ্যাচার, সরকারই এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের জায়গা নেই। এদেশ সবার, এখানে যে যার ধর্ম পালন করবে। আমরা বলেছি ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। অথচ নানাভাবে অপবাদ দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ আজ মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুর করছে। তারা নিজেরা অন্যায় করে অন্যদের নাম বলছে, আমাদের কাছে সেই প্রমাণ আছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এদেশে যদি কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসী থেকে থাকে তাহলে আপনার দলেই আছে, আপনার দলের লোকজনের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করে তাদের ধরুন। তাহলে সন্ত্রাস থাকবে না। এদেশের আলেম-ওলামারা জঙ্গি নন, জঙ্গি আছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আলেমরা এই দেশ ও ধর্মকে ভালোবাসে।

এই প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আরো বলেন, ক্ষমতায় থাকতে শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের আমরাই ধরে শাস্তি দিয়েছি। ঐ শায়খ রহমান আওয়ামী লীগের মির্জা আজমের ভগ্নিপতি ছিলেন।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সে বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনি যখন সৌদি আরব যান তখন হাতে তসবিহ নেন, মুসলমান হন, আর যখন ভারতে যান তখন মাথায় সিঁদুর নিয়ে অন্যরকম হয়ে যান। এই হলো আপনার বেশভূষা। কাজেই আপনাকে বিশ্বাস করা যায় না। আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিন, সকল ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দিন, যারা ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি করেছে তাদের বিচার করুন।’

তিনি বলেন, এ সরকারের হাতে বাংলাদেশের কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। আলেম সমাজের ওপর নির্যাতন করছে। অথচ শাহবাগে যাদের বসানো হয়েছে তারা তরুণের নামে ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কুত্সা ছড়াচ্ছে। তারপরও ওদের বসিয়ে লালন-পালন করা হচ্ছে, জামাই আদর করা হচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া দেয়া হচ্ছে। এই তরুণরা দেশের কর্মসংস্থান, পদ্মা-শেয়ারবাজার-হলমার্ক-ডেসটিনির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে না। তোতা পাখির মত শিখিয়ে দেয়া একটি কথাই বলে যাচ্ছে তারা। একটি দলের হয়ে তারা কথা বলছে। বাংলাদেশের মানুষ জানে কারা তাদের বসিয়েছে, কারা তাদের লালন-পালন করছে। এটা এখন আর কারো বুঝতে বাকি নেই।

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা রাস্তায় একদিন অনুষ্ঠান করলে সরকার বলে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। অথচ শাহবাগে মাসের পর মাস রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল, গানবাজনা আর হইচইয়ের কারণে রোগীদের ক্ষতি হচ্ছে। এটা কোন ধরনের মানবতা।

বর্তমান সরকারকে খুনি, অত্যাচারী, দুর্নীতিবাজ, মামলাবাজ, হামলাবাজ, ব্যর্থ ও অযোগ্য আখ্যায়িত করে ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, এ সরকারের আমলে বহু লোক খুন ও গুম হয়েছে। দুই বছরেও চৌধুরী আলমকে পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলীকে এক বছরে ফিরে পাইনি আমরা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে খুন করেছে সরকারের লোকজন। গ্যাসের বিষয়ে সরকারের একটি বড় দুর্নীতির বিষয় তারা জেনে যাওয়ায় খুন করা হয়, সব তথ্য ছিল তাদের ল্যাপটপে। এজন্য সরকার ঐ ল্যাপটপ নিয়ে গেছে।

সরকারের তৈরি করা বিশেষ বাহিনীই মানুষকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলছে। মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে খালে-বিলে, জঙ্গলে মানুষের লাশ মিলছে। আওয়ামী লীগ ভেবেছে এভাবে মানুষ হত্যা ও গুম করে ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা যাবে। আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। ‘৭১ থেকে ‘৭৫, ‘৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা সন্ত্রাস করেছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। এই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন পাগল, উন্মাদ, তার মাথা খারাপ। উচ্চ আদালত এই প্রধানমন্ত্রীকেও রংহেডেড বলেছিল। মাথা খারাপ এই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নয়। সরকারকে বলবো, বাকি যে কয়টা দিন আছেন, পাগণ-ছাগল মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনায় বসুন, দেশকে বাঁচান।

তিনি বলেন, এ সরকার অনেক সময় পেয়েছে। আমরা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে, অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। কাজেই তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। এবার ক্ষমতায় আসার পর তাদের যাত্রা শুরু হয়েছে হাতে রক্ত দিয়ে। বিডিআরের ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে খুন করা হয়েছে। সেদিন সেনাবাহিনীকে যথাসময়ে দায়িত্ব দেয়া হলে এত প্রাণ যেত না। এ সরকার দলীয়করণের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকেও দুর্বল করে ফেলেছে। তারা কোনো প্রতিষ্ঠানই ঠিক রাখতে চায় না। বাগেরহাটে ভারতের সঙ্গে কয়লা বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এটা করা হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে করা চুক্তি তারা জনগণকে জানায় না, সংসদেও উপস্থাপন করে না। এসব গোপন চুক্তি জনগণ মানবে না। পুলিশ, র্যাব ও বিচার বিভাগকেও সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে।

সাভার ট্যাজেডির বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার শোক দিবস ঘোষণা করে নিজেরাই পালন করেনি। এ সরকার বিশেষ কোনো নেতা বা ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে ছুটি পালন করে। অথচ সাভারে এত লোক মারা গেল, ছুটি দেয়া হয় না। সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। সরকার আমাদের বলে সমাবেশ না করে ঐ টাকা সাভারের জন্য দিতে। আমরা ভাড়া করে লোক আনি না। বরং সরকারকে বলব—হলমার্ক, শেয়ারবাজার, পদ্মা, ডেসটিনি দুর্নীতির টাকা বের করুন, সেসব টাকা সাভারে দিন। পদ্মায় কে কত পার্সেন্ট খেয়েছে সব জানা গেছে। দুই পার্সেন্ট লন্ডনের কার জন্য রাখা ছিল তাও সবাই জানে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন থাকে। প্রধানমন্ত্রী এখন বড় বড় কথা বলেন। ২০০৬ সালে জ্বালাও-পোড়াওয়ের আন্দোলনের সময় আপনার এই মানবতা বোধ কোথায় ছিল? আপনার মুখে মানবতার কথা শোভা পায় না।

খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে অবিলম্বে দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, তাদের প্রেস খুলে দিন, তার মায়ের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করুন, গ্রেফতারকৃত সকল কর্মচারীকে মুক্তি দিন।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরকত উল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিস সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মে. জে. (অব) ইব্রাহীম বীরপ্রতীক, জামায়াতে ইসলামী নেতা হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি, অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল জাব্বার, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু, জাগপা’র শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা, বাংলাদেশ ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গাণি, ইসলামিক পার্টির এমএ মবিন, ন্যাপ ভাসানির শেখ আনোয়ারুল হক, মুসলিম লীগের কামরুজ্জামান খসরু, জমিয়তে ওলামা ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস প্রমুখ।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। মাননীয় নেত্রী আপনি গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিন। জনগণ আপনার সঙ্গে আছে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আলোচনার কথা বললে হয় না, আলোচনার জন্য পরিবেশ দরকার। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দিয়ে এক কদম এগিয়েছেন। এটির সফলতা পেতে হলে তাকে আরো দুই কদম এগোতে হবে।

এমকে আনোয়ার বলেন, যারা দেশপ্রেমিক মানুষকে সরকারের নির্দেশে গুলি করে মেরেছে তাদের বিচার বাংলার মাটিতে একদিন হবেই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সমাবেশ স্থগিত করার কথা বলেছেন। বিএনপির জনসমর্থন দেখার ভয়ে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানিয়েছেন। আমি উনাকে বলব, জনগণ আপনাকে মাইনাস করে দিয়েছে।

আসম হান্নান শাহ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি আলোচনার কথা বলেছেন। আলোচনার জন্য পরিবেশ প্রয়োজন। নেতাদের জেলে রেখে কোনো আলোচনা হবে না। নির্দলীয় সরকারের নির্বাচনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, রাশিয়া থেকে দশ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনেছে সরকার। কিন্তু সাভারের দুর্গতদের জন্য একটি হ্যাক্সো ব্লেড কেনার জন্য টাকা বের হয় না। শেখ হাসিনাকে বিবিসি আর সিএনএন-এ সাক্ষাত্কার না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে পার্থ বলেন, আপনার মিথ্যাচারের কারণে বাংলাদেশের সম্মান থাকে না। দয়া করে আপনি আর সাক্ষাত্কার দেবেন না। আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষের ইসলাম শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন নেই।

শাপলা চত্বর ঘিরে জনসমুদ্র

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, সরকারের পদত্যাগ, সাভার ট্র্যাজেডিতে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ বিশাল এলাকাকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছিল। ইতিপূর্বে ১৮ দলের কোন সমাবেশে এতো মানুষ লক্ষ্য করা যায়নি। বেলা ২টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ঘণ্ট সূচিত হলেও তার আগে সকাল ৮টা থেকে মানুষ মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে মিছিলের স্রোত। এক সময় ঢাকার সড়কমালা যেন মিশতে থাকে মতিঝিল অভিমুখী হয়ে। কেবল ঢাকার মানুষ নয়, প্রায় সব জেলা থেকে, থানা থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এসেছেন।

শাপলা চত্বরে পশ্চিমমুখী করে মঞ্চ হলেও পশ্চিমে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে তোপখানা-এদিকে রাজউক এভিনিউ, ওদিকে ফকিরেরপুল, আরামবাগ, ইত্তেফাক মোড় হাটখোলা অবধি লোকসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা তিনটা ৫০ মিনিটে অফহোয়াইট শাড়ি পরা বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে উঠলে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা করতালি-শ্লোগান দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানায়। হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দেন খালেদা জিয়া।

বরাবরের মতো এই সমাবেশে সকাল থেকেই দখলে নেয় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চের পশ্চিম দিক দৈনিক বাংলা মোড় ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেন। তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন নেতাদের মুক্তির দাবি ও ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন হাতে অনবরত শ্লোগান দিতে থাকেন। শিবির সকাল আটটায় একের পর এক মিছিল নিয়ে প্রথমে শাপলা চত্বরে আসে। তার অনেক পরে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল করে আসতে থাকে।

মঞ্চের সম্মুখে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এরপর ছাত্রদলের নেতারা ছিলেন। মঞ্চের উত্তর পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রঙিন হলুদ-সবুজের গেঞ্জি ও লাল টুপি পরে অবস্থান নেন। দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, রাজউক এভিনিউ মোড়ে বড় পর্দা বসানো হয়, যেখান থেকে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেখা ও শোনা যায়। সভাস্থলের আশেপাশের উঁচু ভবনে পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির কর্মীরাও অবস্থান নেয়। মঞ্চের চারপাশে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসায় পুলিশ। সমাবেশে জাসাস ও সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠি সংগীত পরিবেশন করে। বেগম জিয়া ৫টা ১৮ মিনিট থেকে সোয়া এক ঘণ্টা বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৬:৩৮   ৫০১ বার পঠিত