রবিবার, ৬ জুলাই ২০১৪

শুল্ক ফাঁকির পণ্যে সয়লাব বাজার, তৎপর কাস্টমস

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » শুল্ক ফাঁকির পণ্যে সয়লাব বাজার, তৎপর কাস্টমস
রবিবার, ৬ জুলাই ২০১৪



chittagong_kastom_302504338.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ চট্টগ্রাম: শুল্ক ফাঁকির পণ্যে সয়লাব বাজার। কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা পণ্যের আমদানি। আর এসব পণ্য সোজা চলে যাচ্ছে কালোবাজারিদের হাতে কিংবা খোলাবাজারে। ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।তবে বসে নেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষও। কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযানে একের পর এক ধরা পড়ছে এসব চোরাই পণ্য। আবার গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি দু’টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ডুপ্লেক্স বোর্ডের চালান আটক করে শুল্ক গোয়েন্দারা। আর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে পোর্ট সিটি পলি নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের সাইনবোর্ডই উধাও করে ফেলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিটি গেটের পোর্ট সিটি পলি অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় ১৯১ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে। পরে জালিয়াতির মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কয়েক কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে।

একইভাবে প্যাক-ওয়ান নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৪২ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। অন্যদিকে ঢাকার ২/সি, পুরানা পল্টনের আকরাম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান মতিঝিল এক্সিম ব্যাংক থেকে এলসির (ঋণপত্র) মাধ্যমে এক লাখ ৬২ হাজার ৬৭৬ মার্কিন ডলার বা এক কোটি তিন লাখ ১৪ হাজার ৮০ টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা যায়, পোর্ট সিটির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ একটি মামলা করেছে। প্যাক-ওয়ানের বিষয়টিও তাদের নজরদারিতে রয়েছে।

এছাড়া এ ধরনের অনিয়ম রোধে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ আরো কাজ করছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে চট্টগ্রামের বন্ড কমিশনারেটের কার্যালয় ঠিকমতো বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত কারখানাগুলো পরিদর্শন করতে পারছে না বলে চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, মূলত পুনঃ রপ্তানি শর্তে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার আওতায় উৎপাদনকাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি করতে পারে। শর্ত অনুযায়ী তৈরি পোশাক ও প্লাস্টিকশিল্পসহ বেশ কিছু খাত এ সুবিধার আওতায় পণ্য আমদানি করছে।

তবে আমদানি করা এসব পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি করা নিষিদ্ধ।

সরকার দেশীয় শিল্প-কারখানা সুরক্ষার স্বার্থে আইনে এমন বাধ্যবাধতা রেখেছে।

কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে সরকারের প্রাপ্য কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে দেশের কাগজশিল্পসহ বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্ড লাইসেন্স পাওয়া চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি পলি অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় ১৯১ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে জালিয়াতির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করার অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গত ২৬ জুন মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়।

এর আগে গত ২৪ জুন প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে তদন্ত করে এ অনিয়ম ধরেছেন চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। অনিয়মের মাধ্যমে পোর্ট সিটি পলি অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কাস্টমস আইনের ধারা ৩২, ৯১, ৯৭, ৯৮, ১০৪, ১০৭ এবং বন্ড লাইসেন্স পাওয়ার সব শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক হিসেবে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পণ্য সরবরাহের শর্তে বিভিন্ন প্রকার কাঁচামাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার আওতায় শূন্য শুল্কহারে পণ্য আমদানি করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি করে তা উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার না করে অবৈধভাবে কালোবাজার বা স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রি করছে।

সরেজমিনে এসব অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দারাও।

গত ২৪ জুন শুল্ক গোয়েন্দারা প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়ে ইন-টু-বন্ড গুদামে আমদানি করা ১৯১ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড খুঁজে পায়নি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির কারখানা ম্যানেজার সুধাংশু চাকমা গুদামে ১৯১ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড এবং বিওপিপি না থাকার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। এর ফলে এই পরিমাণে ডুপ্লেক্স বোর্ড বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা হলে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পেত, তা থেকে সরকারকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

এ অবস্থায় শুল্ক গোয়েন্দারা গত ২ জুলাই অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান আমদানিকারক পোর্ট সিটি পলি অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের কারখানার সাইনবোর্ডই সরিয়ে ফেলেছে।

এদিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার প্যাক-ওয়ান নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৪২ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে তাও খোলাবাজারে বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ১৬ জুন বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে প্যাক-ওয়ান নামের প্রতিষ্ঠানটি ১৪২ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে। কিন্তু এর মাত্র ২ দিন পর ১৯ জুন প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় গিয়ে মাত্র দেড় টন ডুপ্লেক্সবোর্ড পাওয়া গেছে। বাকি ১৪০ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

কিন্তু প্যাক-ওয়ান নামের এ প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স নেওয়ার ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের কারখানায় প্রতিদিন আড়াই টন ডুপ্লেক্স বোর্ড ব্যবহারের ক্ষমতা রয়েছে। সে অনুযায়ী উৎপাদনকাজে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ৩০ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড ব্যবহার করতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি। বরং পুরো ১৪২ টন ডুপ্লেক্স বোর্ডই কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০৫:৪৯   ৪৮০ বার পঠিত