বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০১৪

সহিংস আন্দোলন মেনে নেয়া হবে না: হাসিনা

Home Page » জাতীয় » সহিংস আন্দোলন মেনে নেয়া হবে না: হাসিনা
বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০১৪



hasina-ttttttttttt.jpgটুয়েল বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা না করতে বিএনপিকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী ভাষণে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, “তাদের আন্দোলন মানেই মানুষ মারা, বোমাবাজি- এই অবস্থা বাংলাদেশে চলুক, তা আমরা চাই না। এদেশ আমাদের। দেশ সংবিধান অনুযায়ী চলবে।”

এক ঘণ্টার বক্তব্যে বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের দুই সামরিক শাসকের সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তাদের একজন এইচ এম এরশাদ এসময় সংসদেই ছিলেন।

সম্প্রতি ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে দেয়া খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া তার লেখায় অনেক কিছু বলেছেন। সব কিছুর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। উনিই নাকি সব কিছু করেছেন।

“বিদেশি পত্রিকায় তিনি (খালেদা জিয়া) বক্তৃতা দেন। কিন্তু, নিজের চেহারা তিনি দেখেন না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের (বিএনপি-জামায়াত) লক্ষ্য ছিল- দেশে যেন নির্বাচন না হয়, দেশ অগণতান্ত্রিক দিকে চলে যায়। আমরা গণতন্ত্র রক্ষা করেছি, সুশাসন নিশ্চিত করেছি।”

খালেদা জিয়া ভারতীয় ওই দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “আমরা কেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিলাম না তা আমরা তাকে বলেছিলাম। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, কোনো গোপন সংগঠন নই। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে তাতে অংশ নেয়ার কোনো মানে নেই।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনে ১৬ জন পুলিশ, দুজন আনসার, দুজন বিজিবি এবং একজন সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংসতায় নিহত এবং আহতদের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষ যেন ভুলে না যায়।

অগ্নিদগ্ধ আইনজীবী খোদেজা নাসরিন, গাজীপুরে পিকআপ ভ্যানে অগ্নিদগ্ধ কিশোর, শিশুপার্কের সামনে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, চট্টগ্রামে আগুন দিয়ে লরি চালক হত্যা, রেলগাড়িতে আগুন, খুলনা ও সাতক্ষীরায় আগুনের ঘটনার স্থিরচিত্র দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংখ্যালঘুদের জন্য বিএনপি নেত্রীর মায়াকান্না!

“আওয়ামী লীগ নাকি এগুলো করেছে- ভারতের একটি পত্রিকায় এগুলো বলেছেন বিএনপি নেত্রী। বিএনপি নেত্রী বা জামাত-শিবির জবাব দেবে এই বীভৎস হত্যার?”

শেখ হাসিনা এই প্রসঙ্গে আরো বলেন, “পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে তারা যে বীভৎস ঘটনা ঘটিয়েছে- মানুষ তা ভুলবে না। ক্ষমতায় থেকে মানুষ মেরেছে। বিরোধী দলে গিয়েও মানুষ মেরেছে।”

“বেশি দিনের ঘটনা নয়। আমাদের স্মৃতি যেন বিস্মৃত হয়ে না যায়,” স্থিরচিত্র উপস্থাপনের পেছনে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে সহিংস আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারকে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।

নির্বাচন বন্ধে পাঁচ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এরমধ্যে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচন করেছে। এজন্য, নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত।”

শেখ হাসিনার আগে বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নারায়াণগঞ্জ ও ফেনীর কথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, “ভোটের আগের ওই অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পুরোপুরি উন্নতি হয়নি। এত বড় দেশে অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরেও ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। যদি জেল, ফাঁসি, শাস্তি হলে এসব বন্ধ হয়ে যাবে।”

প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলেন, “ফেনী, নারায়ণগঞ্জে ঘটনা ঘটেছে। আমরা আমাদের দলের লোক হারিয়েছি।

“আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, অপরাধী অপরাধী। তাদের বিচার হবে। সে কোন দলের লোক তা আমার কাছে না। আমরা যা বলি, তা রাখি।”

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “ভারত, নেপাল, ভুটান- আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক চাই।”

মিয়ানমারকে বাংলাদেশ থেকে তাদের শরণার্থী ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধও জানান প্রধানমন্ত্রী।

ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলার রায় চলতি সপ্তাহেই হবে জানিয়ে রায় যেন বাংলাদেশের পক্ষে আসে, সেজন্য দেশবাসীর দোয়া চান তিনি।

সামরিক সরকারের সমালোচনা

জিয়াউর রহমানের সময়ে সামরিক অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত ১৯বার ক্যু হয়েছে। প্রতিবার শত শত সেনাসদস্য হত্যা করা হয়েছে। একবার বিমান বাহিনীরই ৫৬২ জনকে হত্যা করা হয়েছিল।”

এরশাদ ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানকে অনুসরণ করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অস্ত্র, টাকা, মাদক, ঋণ খেলাপী সৃষ্টি মিলিটারি ডিকটেটররাই করেছে। জিয়াউর রহমান সৃষ্টি করে গেছেন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে একটি ধনীক শ্রেণী তৈরি করেন।

“ঠিক সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতা দখল করেছেন এখন যিনি ক্ষমতায় বসে আছেন- সেই হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।”

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে উপ-রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে বৈঠকের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গভবনে গিয়ে সাত্তার সাহেবকে বললাম, আপনি কারো প্রার্থী হয়েন না। জণগণের প্রার্থী হোন। আপনি পলাশী প্রান্তর থেকে শিক্ষা নেন। মীরজাফর হয়েন না। তিন মাসও টিকতে পারবেন না।

“এরশাদ সাহেব ঘোষণা দিলেন, সাত্তার সাহেব ওনার প্রার্থী। বেগম জিয়া এরশাদ সাহেবকে সমর্থন দিলেন, সাত্তার সাহেবের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেন। যা হওয়ার তাই হল। এরশাদ সাহেবের হয়ত মনে আছে, যা হওয়ার তাই হল।”

পরবর্তীতে এরশাদের সামরিক আইন জারি করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “তারপর, সাংসদ সদ্যদের বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী পাওয়া গেল। গাল কাটা কামাল, ইমদু- তাদের পাওয়া গেল। সাত্তার সাহেবকে সরিয়ে আহসান উল্লাহ সাহেবকে আনা হল। এরপর, ৮২ সালে মার্শাল ল ঘোষণা করলেন।”

পতনের পর নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে সমান সুযোগ দিলে বিএনপি জামায়াতের সৃষ্টি হত না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেছিলেন, “এ বিষবৃক্ষ আপনারাই সৃষ্টি করেছেন। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলে বিএনপির সৃষ্টি হত না। আমরা আপনারা মিলে সরকার গঠন করতাম। এটা আমার দোষ নয়, আমাদের দোষ।”

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগকে প্রস্তাব দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামাত এক হলে আমরা ক্ষমতা দখল করতে পারতাম। জাস্টিস শাহাবুদ্দিন সাহেব আমাদের সাথে বৈঠকও করেন। কিন্তু, আমরা নীতিগত কারণে রাজি হইনি।”

পদত্যাগের পর এরশাদকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওনার ভাবী (খালেদা জিয়া) সাহেব, যাকে উনি বাড়ি নিলেন, গাড়ি দিলেন- তারপরও কেন তাকেসহ সকলকে গ্রেপ্তার করলেন।

“এত কবিতা লিখলেন। ওনার ভাবীর জন্য একটা কবিতা লিখে কী মন অর্জন করতে পারেন নাই। খালেদা জিয়া ওনাকে অ্যারেস্ট করলেন।”

এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মিছিলে গুলিবর্ষণের নির্দেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তা রকিবুল হুদাকে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পদোন্নতি দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন হাসিনা।

“দু’জনের মধ্যে কী যেন একটা আছে। কখনো রাগ, কখনো বিরাগ, কখনো অনুরাগ চলে। থাক আমি আর সেদিকে গেলাম না।”
রাজনীতির আরো খবর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১২:২৯   ৪৫১ বার পঠিত