রবিবার, ২৫ মে ২০১৪
গ্রিন টি কি? এবং এর উপকারিতা
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » গ্রিন টি কি? এবং এর উপকারিতাডেস্কঃধোঁয়া ওঠা এক কাপ গাঢ় লিকারের দুধ-চা না হলে অনেকের যেন সকালই হতে চায় না। কিন্তু এ ধারণার পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাদের ভিন্নতার জন্যই এখনকার শহুরে ছেলে-মেয়েদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘গ্রিন টি’। এর স্বাদ ও স্বচ্ছতা চায়ের কাপে ঝড় তুলতে পারে, তবু সর্বজনপ্রিয়তার দৌঁড়ে এখনও ওভাবে এগোতে পারেনি এই চা।এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে অধিকাংশজনেরই উত্তর হবে, গ্রিন টি’র স্বাদ তাদের ভালো লাগে না। এর কারণ নিম্নমানের গ্রিন টি। নিম্নমানের গ্রিন টি-ই এ ধরনের চা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছে।
তবে যাই হোক, সময় বলছে, এ চা সর্বজনপ্রিয়তা লাভ করবে অচিরেই। সেক্ষেত্রে এ ধরনের চা পানে অভ্যস্ত হতে চাইবেন আপনিও। কিন্তু বাজারে তো হরেক রকমের গ্রিন টি’র ব্র্যান্ড, আপনি বেছে নেবেন কোনটি? আপনাকে এ দোলাচল থেকে রেহাই দিতে বিভিন্ন রং-ঢং-স্বাদের গ্রিন টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সেটিই উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রথমেই জানা যাক গ্রিন টি কী?
অনেকে গ্রিন টি বলতে এর সবুজ রংকে বোঝেন। কিন্তু আসলেই কি তা? সাধারণ চায়ের ক্ষেত্রে যেমন অনেক প্রক্রিয়াজাত করে একে দানাদার আকার দেওয়া হয়, তবে গ্রিন টির ক্ষেত্রে বেশিরভাগই তা করা হয় না। এটি প্রক্রিয়াজাতকরণের ধরন সাধারণ চায়ের চেয়ে আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট আস্ত পাতাই থেকে যায়।
জাপান এবং চীনের মতো পৃথিবীর অন্য দেশেও স্বাস্থ্যগত সুবিধার কথা বিবেচনা করে ধীরে ধীরে গ্রিন টি’র জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অন্য চায়ের চেয়ে গ্রিন টি দ্রুত সংরক্ষণ করা যায়। গ্রিন টি’র প্রক্রিয়াজাতকরণের এই পার্থক্যের জন্যই এটি সর্বোচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধরে রাখতে পারে। গ্রিন টি’তে পলিফেনল নামে এক ধরনের উপাদান আছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে উপকারী।
তবে, এ ধরনের চা’তে যে ক্যাফেইন আছে তা অধিকাংশ গ্রিন টি ব্র্যান্ডে উল্লেখ নেই। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখার বিষয়। কেউ যদি অসতর্কতাবশত রাতে গ্রিন টি পান করে ফেলে তবে তার শান্তির ও আরামদায়ক ঘুম উবে যেতে পারে নিমেষেই।
*কেন গ্রিন টি উপকারী?
গ্রিন টি’র উপকারিতা অনেক। এটা ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, গলার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে। এমনকি কেউ যদি ধূমপান ছাড়তে চান, তবে তা ছাড়তেও গ্রিন টি সাহায্য করতে পারে। সব কিছু ছাপিয়ে গ্রিন টি বার্ধক্য এবং কপালের বলিরেখা থেকে রক্ষা করবে।
*কীভাবে গ্রিন টি তৈরি করবেন?
পানির সঠিক তাপমাত্রা এককাপ পারফেক্ট গ্রিন টি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পানি যদি বেশি গরম হয় তবে এর স্বাদ তেতো হয়ে যাবে, সঙ্গে এটি তার সুবাস হারাবে। অর্থাৎ চা তার স্বাদ ও গন্ধ হারাবে।
কাজেই চা তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ৭৫-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি টি ব্যাগ ব্যবহার করেন তবে এটা ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নেবেন। চা পাতার জন্য তা আরেকটু বেশি সময় নেবে, ৩-৪ মিনিট।
*চা নির্বাচনে
আমাদের অনেকেই শুধু ভালো চা নির্বাচনের অভাবে গ্রিন টির স্বাদ সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা পোষণ করি। গ্রিন টি’প্রেমীদের জন্য বহুল প্রচলিত কিছু ভারতীয় ব্র্যান্ডের গ্রিন টি’র পরিচয় এবং স্বাদ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরেছে এনডিটিভি। আশা করা যাচ্ছে আশপাশের দোকানগুলোতেই এ ব্র্যান্ডের চা পাওয়া যাবে।
*ব্র্যান্ড
টেটলি, অর্গানিক ইন্ডিয়ান, ইকো ভ্যালি, গায়া, তাজমহল এবং মিত্তাল এই ব্র্যান্ডের গ্রিন টি আপনি সহজেই আপনার বাড়ির পাশের মেগাশপেই পেয়ে যেতে পারেন। ব্র্যান্ডের ভিন্নতা অনুযায়ী এর গন্ধেরও তারতম্য হতে পারে।
কতগুলো সাধারণ প্রশ্নের উত্তরেই আপনি চায়ের ধরণ বুঝে যেতে পারেন। যেমন-
*গন্ধটা কি মৌলিক এবং মৃদু নাকি মাত্রারিক্ত ছিল?
*চা কি কষটে নাকি তিক্ত স্বাদের?
*চায়ের গন্ধটা কি আমাদের আরও কিছুক্ষণ কাপের সঙ্গে থাকতে উদ্ধুদ্ধ করে নাকি আমাদের মুখ ফিরে আসে!
*পেয় না উপভোগ্য!
*চা কি আপনাকে যথেষ্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো?
যদি এ প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হয় তবে আপনি বুঝবেন আপনি আপনার পছন্দের জিনিসটা ঠিক ঠিক বেছে নিতে পেরেছেন। আর যদি নেতিবাচক হয় তবে বুঝবেন ঠিক এই ফ্লেভারটি আপনার উপযোগী নয়।
ফ্লেভার -১: সাধারণ গ্রিন টি
*টেটলি
এ ব্র্যান্ডের সাধারণ গ্রিন টি পানের ক্ষেত্রে প্রথম চুমুকেই একটা পুরোনো গন্ধ এসে লাগবে আপনার নাকে। এটা বলতে গেলে আসলে তিক্ত কোনো ওষুধ গলাধঃকরণের মতো। এর স্বাদ-গন্ধ মাত্রারিক্ত এবং চা পানের পর একটা টক ভাব আপনার মুখে এঁটে থাকবে। যারা এ ধরনের গ্রিন টি পছন্দ করবেন তারা অবশ্যই ২-৩ মিনিট গরম পানিতে রাখবেন টি ব্যাগ।
*তাজমহল
তাজমহল ব্র্যান্ডের গ্রিন টি সত্যিকারে বলতে গেলে সাধারণ চায়ের মতোই। দ্বিতীয়বারের মতো আপনি এ চা পান করতে চাইবেন না। আমাদের মতো গ্রিন টি পানে উৎসাহীরা এ চা পানে মোটামুটি মানসিকভাবে বিষণ্ণ হয়ে পড়বে।
*গায়া
গায়া’র গ্রিন টি তিক্ত স্বাদের এবং বলতে গেল স্বাদবিহীন। এটা আমাদের আবার গ্রিন টি পানে কোনো উৎসাহ জোগাবে না।
ফ্লেভার-২: লেমন গ্রিন টি
*গায়া
এর স্বাদ আপনাকে নিরানন্দ এবং আর বিরক্তির অনুভূতি ছাড়া কিছুই দেবে না। সেই সঙ্গে এক চুমুক দেওয়ার পর দ্বিতীয় চুমুক দেওয়ার আগ্রহও পাবেন না আপনি।
*টেটলি: লেমন-জিনজার-মিন্ট
আশ্চর্যের বিষয় হলো লেবু, আদা ও মিন্টের সংমিশ্রিত এ চায়ের গন্ধ অনেকটা পুদিনা পাতার মতো। গন্ধটা অনেক চাপা, তবে তা অন্য চায়ের চেয়ে ভালো।
*ইকো ভ্যালি: সানি লেমন
পুরো গ্রীষ্ম জুড়েই এর স্বাদ আপনাকে সতেজ রাখবে। লেবুর মিষ্টি গন্ধই এ চায়ের পরিচয় বহন করে। টি-ব্যাগটি পানিতে ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গেই রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের মতো রং ধারণ করবে। মনোরম গন্ধই আপনাকে এর স্বাদ নিতে উৎসাহিত করবে। সব মিলিয়ে সানি লেমনের সঙ্গে আপনার সময়টা উপভোগ্যই কাটবে।
*তাজমহল: লেমন হানি
প্রথমে মধুর গন্ধট আপনার আশাকে বাড়িয়ে দেবে ঠিকই, কিন্তু চা শেষ করার পর তা আপনাকে মোটামুটি হতাশ করবে বলেই মনে হয়। লেবুর সঙ্গে মধু মিশে কেমন যেনো একটা গন্ধ তৈরি করে এ চা।
অর্গানিক ইন্ডিয়া: লেমন জিনজার
প্রথমত, এর লেবেলিংয়ের জন্য এটাকে প্রাথমিক একটা কৃতিত্ব দেওয়াই যেতে পারে। যেসব চা ক্যাফেইন বহন করে তার মধ্যে অন্যতম হলো এ চা। এর কড়া স্বাদ এবং গন্ধের সুষম মিশ্রণ প্রতি চুমুকে আপনাকে দেবে তুলসি এবং লেবুর সতেজতা। সে সঙ্গে আদার ঝাঁঝালো শক্তি। এক কাপ অগার্নিক ইন্ডিয়ান লেমন জিনজার আপনার বরফাচ্ছন্ন কিংবা মেঘলা দিনটিকে করে তুলতে পারে এক নিমেষেই চাঙ্গা।
ফ্লেভার-৩: মিন্ট গ্রিন টি
*গায়া মিন্ট
এ চায়ের ক্ষেত্রে আবার পুরনো কথাই পুনরাবৃত্তি করতে হয়। এর আলাদা কোনো বিশেষত্ব নেই। উপরন্তু এর স্বাদ ও গন্ধে কোনো বিশেষত্ব নেই এবং এটা আপনার মুখে লেগে থাকার মতো কোনো স্বাদ দেবে না।
*মিত্তাল মিন্ট
এ চায়ের স্বাদে আপনি আহ (!) না বলে থাকতেই পারবেন না। এর হালকা স্নিগ্ধ সুবাস আপনাকে মোহিত করে রাখবে। তবে তা মাত্রাতিরিক্ত নয়। ঠিক তেমনি আপনি যদি কোনো হুইস্কি পানকারীকে জিজ্ঞেস করেন এর স্বাদ কেমন, তবে তিনি আপনাকে বলবেন, এটা শুধু একটি স্নিগ্ধ ও মসৃণ আবেশ। এর মিষ্টি গন্ধে চা শেষ হলেও চায়ের কাপ নাকের কাছ থেকে সরাতেই চাইবেন না। বলতে গেলে যতটা না আপনি খাবেন তার চেয়ে বেশি নাকের কাছে ধরে এর সুবাস নেবেন।
*ইকো ভেলি: মিন্ট ও ডেন্ডারিওন
আমরা স্বীকার করছি এর ভেতরে লেবুর জোরালো গন্ধ আমাদের আকৃষ্ট করে, কিন্তু আদতে এটা আমাদের সে অর্থে বিমোহিত করতে পারে না। মোট কথা এটা শুধু পানযোগ্য কিন্তু উপভোগ্য নয়।
ফ্লেভার ৪: জেসমিন গ্রিন টি
*অর্গানিক ইনডিয়া: তুলসি-জেসমিন টি
কাঠালি রঙের সঙ্গে তুলসির একটা প্রাকৃতিক নির্যাস পাবেন এ চায়ে। শীতল পরশের সঙ্গে এর মিশ্রণ আপনার খারাপ লাগবে না আশা করা যায়।
*মিত্তাল: জেসমিন টি
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না চায়ের একটি সুন্দর গন্ধ থাকতে পারে। এর সুঘ্রাণ এতো চমৎকার যে আপনার মনে হতেই পারে এটা যেন চা নয়, পারফিউম! এর গাঢ় স্বাদ এবং ফুলেল সৌরভ আপনার মন ভরিয়ে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম চুমক থেকেই নিঃসন্দেহে এটা আপনার প্রিয় পানীয়ের তালিকায় চলে আসবে।
ফ্লেভার-৫: তুলসি গ্রিন টি
*গায়া: তুলসি
গায়া আপনার আশায় গুড়েবালি দেবে বলা যেতে পারে। এর তুলসির গন্ধ এবং তিক্ত স্বাদ আপনাকে অন্য কোনো স্বাদ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে না।
*ইকো ভ্যালি: তুলসি এবং লেবু
ইকো ভ্যালির লেমন ফ্লেভারের পর হয়তো আপনি ভেবে নিতে পারেন এই তুলসি-লেমনও আপনাকে ভিন্ন এবং মজার একটা স্বাদ দেবে। কিন্তু এটা আসলে আপনাকে একটা টক স্বাদ দেবে। এর হালকা আমেজ আর গন্ধ আপনাকে তেমনভাবে কাছে টানবে না।
*মিত্তাল: তুলসি
এ চায়ের একটা আলাদা গন্ধ সত্যি আপনি খুব পছন্দ করবেন। এটা অবশ্য মিত্তালের সর্বশ্রেষ্ঠ চা নয়, কিন্তু এক কাপের পর যদি আপনাকে আরও এক কাপ পান করতে বলা হয় তাহলে আপনি তা ফিরিয়ে দেবেন না কিংবা অখুশি হবেন না।
অর্গানিক ইনডিয়া: তুলসি-ডালিম
এ চা তুলসির স্নিগ্ধ সুবাসের সঙ্গে সঙ্গে ডালিমের মিষ্টি স্বাদ উপহার দেয়। ডালিমের কারণে এর রঙটা একটু লালচে ধরনের হয়। ফলের মিষ্টি গন্ধ এবং স্বাদ আপনাকে তৃপ্ত এবং উৎফুল্ল করবে।
তবে বলে রাখা ভালো, একজনের কাছে যা ভালো, অন্যজনের কাছে তা ভালো নাও লাগতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। পণ্য পছন্দের আগে অবশ্যই এর ওপর পরীক্ষা বা গবেষণা করে নেওয়া ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৬:৪৩ ৬৮৬ বার পঠিত