রবিবার, ২৫ মে ২০১৪
মেঘলা বিষন্নতার গল্প- রোকসানা লেইস
Home Page » সাহিত্য » মেঘলা বিষন্নতার গল্প- রোকসানা লেইসঅনেক কিছু করতে চেয়ে ছিলাম অথচ ঘুম ঘুম দিনের ঘুম চোখের কাতরতা আমাকে ঘুম কাতুরে বিষন্ন করে রাখল আজ সারাদিন। ভীমপলশ্রীর সুর শুনে ভাসছিলাম দূরে দূরে। মনে পড়ছিল, এমনি এক মেঘলা দিনে পেরিয়ে যাচ্ছিলাম, ঘুম নামের এক উঁচু শহর। শহরটা যেন ঘুমিয়ে ছিল, ঘুম নামের সার্থকতা বজায় রেখে। সে ভ্রমণের উপর একটা লেখা আছে অন্য কোন সময় বলব।
সারাদিন ওমে বসে কাটালাম, জানালায় চোখ মেলে আর শুধু পাখিদের দানা খেতে দিলাম কয়েকবার। পাখিগুলো তিনবেলা নিয়ম করে খেতে আসে প্রতিদিন। কোথায় খুঁজবে এই শীতঘুম দিনে খাবার তাই ছড়িয়ে দিলাম ওদের খাবার কয়েকবার উঠে । ওদের চলাফেরায় বিষন্নতা, চঞ্চল পায়ে দূরে যায় খানিক।
আজ সারাদিনের অলস সময় এবং উত্তাপের নীচের পারদে নাচা মনে হচ্ছে, গ্রীষ্ম নয় যেন শীতের দিকে ফিরে যাচ্ছে সময়। এত ম্লান বসন্ত অনেক বছর দেখি নাই। পাতাহীন গাছে ফুলের ঢলে ঢলে পরা ছিল যে বসন্তের বৈশিষ্ট; কেমন শীত বাতাসে থমকে গেছে এবার। ফুল না ফুটিয়েই বসন্ত যাই যাই করছে এবার।
প্রতিবছর চেরী উৎসবের জন্য সপ্তাহে তিন চারদিন ছুটে যেতাম পার্কে। এবছর ইচেছ হলো না এমন ম্লান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফোটা ফুল দেখতে। অপেক্ষায় ছিলাম গত বছরের মতন জেগে উঠবে আপেল গাছ এবারও।
এক ভোরে দরজা খুলে অবাক হয়ে কাটিয়ে দিব সারাদিন ফুলে ফুলে সেজে উঠা গাছের নীচে। গত বছরও অবাক হয়ে গিয়েছি এক রাতের পরিবর্তন দেখে। গুনগুন মৌমাছির গুঞ্জরণে আর ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া একটি গাছ কি অদ্ভুত একটা সকাল নিয়ে এসেছিল। বদলে গিয়েছিল, এক সকাল, দিন। সেদিনটা শুরু হয়ে ছিল এক অবাক করা সকাল দিয়ে, সারাদিন অপরূপ রূপের সাথে কাটিয়ে ছিলাম আপন মনে। এক রাত্তিরে এত্ত ফুল ফুটে উঠল। এক রাত্তিরে এত্ত মৌমাছি এসে গান জুড়ে দিল। প্রকৃতি নির্মোহ হয়ে বিলিয়ে ছিল অফূরন্ত আনন্দ আমাকে, গানে ও সৌন্দর্যে ভুলিয়ে ছিল আমাকে। কয়েকদিন মাতিয়ে রেখেছিল আমাকে তার রূপে ভুলিয়ে, বৃষ্টি এসে পাপড়ি না ঝরিয়ে দেয়া পর্যন্ত।
আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে ভীষণ রকম। যার ফল টের পাই বাজারে গেলে। প্রতিটি ফল, সবজীর দাম উপরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। জীবন যাপনে প্রভাব ফেলছে হয়ত বা সুক্ষ ভাবে আমার। কিন্তু অনেকে ধারে কাছে ভীড়তে পারে না ফল, সবজীর বুঝতে পারি। খরা আর শীতে উৎপাদন কমে গেছে ভয়াবহ ভাবে। আর কিছু মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা তো নষ্ট করা হয় প্রতি বছর, অতিরিক্ত কীট নাশক আর পুষ্টি ব্যবহারে। যেমন চিংড়ির আবাদে নষ্ট হয়ে যায় ফসলের মাটি। তাতে কি আমরা চিংড়ি খেতে ভালোবাসি। মাঠের পরে মাঠ না হয় হলো লবনাক্ত।
কি করব আমি এই পরিবর্তনের কথা ভেবে। ইচ্ছে মতন পৃথিবীটাকে ব্যবহার করে তার চেয়ে বেশী, ধ্বংস তো করা হচ্ছে নানা ভাবে।
আজ এই মেঘলা দিনের কথাই ভাবি আমি। আকাশের মেঘ সরে না গেলে ভীষণ রকম উল্কা বৃষ্টি দেখতে পাব না রাতের আঁধারে আজ। যা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম আনেক দিন ধরে। সারাদিনের সময়টাকে নষ্ট করে শেষ মেশ ঝকঝকে একটা তারার আকাশ দেখার অপেক্ষায় থাকলাম তবু। অন্ধকারে বাতি নিভিয়ে বসে থাকব আমি খোলা মাঠে আজ রাতে। তারাগুলো ফুলকি হয়ে ঝরবে ঝরবে অবিরাম। আর আমি অবাক হবো প্রকৃতির লীলা খেলায় নতুন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫১:২০ ৫৪৭ বার পঠিত