বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০১৪

সবার হ্রদয়ে ২৫ শে বৈশাখ

Home Page » এক্সক্লুসিভ » সবার হ্রদয়ে ২৫ শে বৈশাখ
বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০১৪



rabindranath3.jpgআজি হতে শতর্বষ পরে/কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি/ কৌতূহল ভরে/ আজি হতে শতর্বষ পরে… এখন করিছে গান সে কোন নূতন কবি/তোমাদের ঘরে।চিরজাগরুক, বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের অন্যতম নায়ক, কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ শ্রষ্টা, দ্রষ্টা ও ঋষিতুল্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৩ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

একশ’ বছরেরও বেশি আগে বাঙালি পাঠকদের প্রতি এ জিজ্ঞাসা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। একশ’ বছর পরেও পালিত হয়েছে তার ১৫৩ তম জন্মবার্ষিকী। মাত্র কিছুদিন আগেও লাখো কণ্ঠে গাওয়া হয়েছে তাঁর লেখা- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। শুধু তাই নয়, খেলার মাঠেও বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়েরা খেলা শুরুর আগে মাথা নুইয়েছেন তাঁর সৃষ্টির সামনে। এসব কি প্রমাণ করে না- একশ’ বছর আগে কবি যে আশঙ্কা করেছিলেন, তা এখন ভিন্নমাত্রায় তার সৃষ্টিরই জয়গান।

আমাদের নানা সংকট-আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্র সৃষ্টি আমাদের চেতনায় বরাবর স্পর্শ করছে। আরো শত বছর পরও- বাঙালিকে আন্দোলিত করবে কবির বাণী-তা বলা অত্যুক্তি হবে না।

কবির আশঙ্কার জবাবে বলা যায়, শত বছর পরে এখন অনেক নতুন কবি এসেছেন, নব নব সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত স্ফীত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য এবং সংগীতের ভূবন। তারপরেও আমাদের রবীন্দ্রনাথ মাত্র একজনই। এখনও কবির সৃষ্টিশীলতা নবপ্রজন্মের লেখকদের সাহস জোগায়। এখনো বাঙালির সবকিছুতে রবীন্দ্রনাথই ভরসা হয়ে উঠেন।

তাই কবির বসন্ত গান তার তিরোধানের দেড়শত বছর পরেও ধ্বনিত হয় নবীন কবি আর পাঠকের বসন্ত দিনে। জন্মের দেড় শতাধিক বছর পেরিয়ে এবং মৃত্যুর প্রায় ৭৩ বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ এখনও কেন প্রাসঙ্গিক-এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন “বাঙালির এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত। রবীন্দ্রনাথ একাধারে এই ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালির মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা জোগানোর মধ্য দিয়ে বাঙালি মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়।”

তিনি আরো বলেন, “রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে যে ঐশ্বর্য দান করেছেন, তাতে এই ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সকল ভাব-অনুভূতির প্রকাশ এবং নির্মল হাস্য-কৌতুকের বাহন হতে সমর্থ হয়েছে। দেড়শত বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে চিরজাগরুক হয়ে আছেন।”

এদিকে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। রাজধানীসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর বিশ্বকবি’র জন্মবার্ষিকী উদযাপনের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ও রবীন্দ্রনাথ’।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমীতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

মূল অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর ও খুলনার দক্ষিণডিহিতে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। এছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযোগ্য মার্যাদায় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের নানা আয়োজন করেছে।

শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, পুরো ভারতবাসী এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাভাষী কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করছে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কবির গান-কবিতা, বাণী এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহস জোগায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শুধু নয়, চিরকালই কবির রচনাসমূহ প্রাণের সঞ্চার করে। বাঙালির প্রতিটি সংগ্রামেই কবির চিরায়ত রচনাসমগ্র আজীবন স্মরণের শীর্ষতায় আবিষ্ট হয়ে আছে। তাঁর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা / আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রেরণা জুগিয়েছিল তাঁর অনেক গান। তাঁর লেখা গান ভারতও জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৮:৫২   ২১৮২ বার পঠিত