শনিবার, ৩ মে ২০১৪
দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ করে মৎস্য প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা
Home Page » সারাদেশ » দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ করে মৎস্য প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনাকাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার দুই শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে সংবর্ধনা দিয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় প্রতিমন্ত্রীকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সাড়ে ছয় ভরি ওজনের রুপার নৌকা উপহার দেয়া হয়।শনিবার বেলা ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রতিমন্ত্রীকে এ সংবর্ধনা দেন শিক্ষকরা।
ডুমুরিয়া উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করতে সব কটি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে শিক্ষকদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বলা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরের মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
শিক্ষকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও প্রতিমন্ত্রীর কয়েকজন আস্থাভাজন শিক্ষকনেতার উদ্যোগে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মিকশিমিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ গাজী বলেন, “বছরে প্রধান শিক্ষকের তিন দিন বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার ক্ষমতা আছে। সেভাবে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠানে এসেছি।”
পূর্ব শোভনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আনিছুর রহমান বলেন, “উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের পরামর্শে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়েছি।”
স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া সদরের মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “সংরক্ষিত ছুটি দেয়া হয়েছে।”
তবে ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, “স্কুলে ছুটি দেয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, “বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর এক ভাতিজার উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রীর এ অনুষ্ঠানে যোগ না দিলে বিপদে পড়তে হতো বলে তারা দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ে ছুটি দেয়া হয়েছে বলে আমার ছেলে জানিয়েছে। এর আগেও গত ২৬ এপ্রিল স্কুল বন্ধ ছিল। ওই সময় পরীক্ষা চলছিল।” ওই অভিভাবক জানান, তার ছেলে সাজিয়াড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, “শনিবার স্কুলের দিন হলেও প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি থেকে বিদ্যালয়ে ছুটি দেয়া হয়েছে। আর শিক্ষক সমিতি থাকলেও কতিপয় প্রভাবশালী নেতার উদ্যোগে সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্দার বলেন, “শিক্ষক নেতারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। যেহেতু শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি পক্ষ রয়েছে, সে কারণে আমাকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক নেতারা।”
অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষকদের হাজিরা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেয়া হয়েছে।” রুপার নৌকা দেয়া প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, “শিক্ষকরা নিজেরা অর্থ দিয়ে সাড়ে ছয় ভরি রুপা দিয়ে এটি তৈরি করেছেন।”
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামছুদ্দৌজা বলেন, “বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে এ ধরনের আয়োজন করা ঠিক হয়নি। তবে আমি জানতে চাইলে, তারা জানান তাদের ঐচ্ছিক ছুটি থেকে এই ছুটি নিয়েছেন। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”
এমপি-মন্ত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে মিডিয়াসহ ইতিমধ্যে সারা দেশে বেশ সমালোচনা হয়েছে। এমনকি স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পর্য।ন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এ প্রবণতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আর একটি প্রবণতা হলো, কয়েক কিলোমিটার সড়কজুড়ে তোরণ নির্মাণ করা ও হাজার হাজার ফেস্টুন টানানো।
২৪ জানুয়ারি রাজশাহীর বাঘায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সংবর্ধনা নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দুই ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, যেসব ছেলেমেয়ে না খেয়ে এসেছে, তারা চলে যেতে পারে। ওই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীকে সোনার নৌকা ও সোনার কোটপিন উপহার দেয়া হয়।
একই দিনে নাটোরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। তাকেও সোনার নৌকা উপহার দেয়া হয়।
৮ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমান সংবর্ধনা নেন। এক ঘণ্টা আগে থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকায় স্কুলের সামনের রাস্তায় রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৫:০৮ ৩৪১ বার পঠিত