বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০১৪

শ্রমিকদের ক্ষুধায় রেখে বিলাসী জীবন চলবে না: শ্রমিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

Home Page » জাতীয় » শ্রমিকদের ক্ষুধায় রেখে বিলাসী জীবন চলবে না: শ্রমিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০১৪



may.jpgরাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃ শিল্পকারখানার মালিক এবং শ্রমিকদের জীবন যাপনের বৈষম্য দূর করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসে সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে অনেকটা কমিউনিস্ট নেতাদের ধাঁচে তিনি বলেছেন, “কেউ কেউ বিলাস ব্যসনে জীবন যাপন করবে, আর কেউ ধুঁকে ধুঁকে চলবে- এই বৈষম্য বাংলাদেশে চলতে পারে না।”মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ মানুষের অধিকার নিয়েই বাঁচবে। কাজেই আমি মালিকদের বলব, যে বিলাসিতা আপনারা করবেন- ওই শ্রমিকের ঘাম, রক্ত ঝড়া উপার্জন দিয়েই।”

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার মে দিবসের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য মালিকদের তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

“শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে হবে। তাদের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে।”

শ্রমিক কল্যাণে মনোযোগী হলে কারখানার উৎপাদনশীলতা বেড়ে তাতে লাভ মালিকেরও হবে বলে তাদের মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

“যদি ভালো কাজ চান, সুন্দরভাবে ব্যবহার করে, আদর করে, মাথায় হাত দিয়ে কিন্তু অনেক কাজ করানো যায়। ধমক-ধামক চাপ না দিয়ে, আন্তরিকতার দিয়ে যদি তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, তাহলে অধিক শ্রম পাওয়া যায়।”

সেই সঙ্গে কারখানার চাকা সচল রাখতে শ্রমিকদের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

“যে শিল্প কলকারখানা অন্ন জোগায়। জীবন জীবিকার পথ করে দেয়- সেগুলোর যেন কোনো মতে ক্ষতি না হয়। সেখানে যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয়।”

যৌক্তিক দাবি থাকলে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়ে এক্ষেত্রে কারো প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে গুজব ছড়িয়ে কল কারখানার ক্ষতি করা যেন না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে উভয়পক্ষকে সতর্ক থাকতে বলেন শেখ হাসিনা।

তাজরীন ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের বছরপূর্তির পর এবারের মে দিবসে শ্রমিক সংগঠনগুলোর স্লোগানে কারখানায় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি উঠেছে।

রানা প্লাজা ধসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা যাতে হ্রাস পায় সেজন্য সরকার সচেষ্ট।

রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে সরকার পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

“আমরা চেয়েছি, যে সাহায্য করছি, তা যেন কাজে লাগে। একটি মহিলা শ্রমিক মারা গেলে তার স্বামী, তার বাবা-মাকে সাহায্য করেছি, সন্তানদেরকে টাকা দিয়েছি। নাবালক শিশুর জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছি। নইলে ওই নাবালক শিশুকে পরিবারের কেউ দেখবে না।”

তাজরীন ফ্যাশনসের নিহত নারী শ্রমিকের স্বামীকে সাহায্যের পর সে তার নাবালক শিশুকে রেখে আরেকটি বিয়ে করার কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে পাঁচ বছরে দুদফা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং রাষ্ট্রীয় শ্রমিকদের মজুরি ২ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার ১৫০ টাকায় উন্নীত করার কথা জানান তিনি।

ভবন ও শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘গার্মেন্টস শিল্প বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি’ গঠনের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শিল্প পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জনবল ৩১৪ জন থেকে ৯৯৩ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিল্প পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য আইন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “বাসায় একটি টিভি বা ফ্রিজ কিনলে সেটা রাখার জায়গা ঠিক করা হয়। কিন্তু, বাসায় কাজের লোকের ঘুমানোর জায়গা নাই। কখনো বসবার ঘরে, কখনো রান্না ঘরে বা কখনো বাথরুমে ঘুমায়। এটা চলতে পারে না।”

এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কল্যাণে কী করা যেতে পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অনেক নীতিমালা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুন্নুজান সুফিয়ান মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে ন।

দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের পয়লা মে তিন দিনের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট স্কোয়ারে শ্রমিক সমাবেশে গুলিবর্ষণ করা হয়। বহু শ্রমিক মারা যায়। তারপর থেকে সারাবিশ্বে পয়লা মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি’ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, “দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। তাজরীন, রানা প্লাজার জন্য যাদের গাফিলতি ছিলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

“আমার আবেদন, জিএসপি সুবিধা আমরা চাই।। মানবতা যদি থেকে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আমেরিকার, তাহলে শ্রমিকদের বেকার করার অধিকার আপনাদের নেই।”

সভায় বাংলাদেশ অ্যামপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ সৃষ্টির সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আইএলও’র আবাসিক প্রতিনিধি শ্রীনিবাসন বি রেড্ডি, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:৪৩   ৪৭৪ বার পঠিত