মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৪

ভয়াল ২৯ এপ্রিল

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ভয়াল ২৯ এপ্রিল
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৪



index1.jpgডেস্করিপোর্টঃআজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের উপকূলীয় আঞ্চল। ভয়াবহ সেদিনের ২৩ বছর অতিবাহিত হলেও আজো সে দুর্বিসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলের বাসিন্দাদের।
আজ থেকে ২৩ বছর আগে ১৯৯১ সালের এদিনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা।
এদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এ উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিঝুমদ্বীপের সব মানুষই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিলো। পুরো দ্বীপাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিলো।
একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মহেষখালী, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী এবং কক্সবাজারেও হানা দিয়েছিলো ঘূর্ণিঝড়। এতে বিধ্বস্ত হয় পুরো উপকূলীয় অঞ্চল। যুদ্ধের পর একটা শহর যেমন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ের পর চট্টগ্রাম শহর ছিলো ঠিক তাই। পথের পাশে যেখানে সেখানে পড়েছিল লাশ, রাস্তা জুড়ে ছিল উপড়েপড়া গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, ঘর-বাড়িগুলো দুমড়ানো-মোচড়ানো, আর লাশের পচা গন্ধ থেকে থেকে বাতাসটাকে ভারী করে তুলছিল।মানুষ যত না ঝড়ে মারা গিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি মরেছিল জলোচ্ছ্বাসে। ভেলার মতো ভেসে গিয়েছিলো অগণিত মানুষ। সেদিন প্রিয়জন হারিয়ে আজো কাঁদছেন অনেক স্বজন। ২৫ থেকে ২৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ৪ থেকে ৫ মাইল অভ্যন্তরের প্রায় সব মানুষই প্রাণ হারিয়েছিল। সেখানে সেদিন বাতাসের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ২২০ কিলোমিটার। এতে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়ে দেশের ১৫ জেলার ২৫৭টি ইউনিয়ন। মানুষ তিনতলায় আশ্রয় নিয়েও পানির হাত থেকে বাঁচতে পারেনি।
সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরো বেশি। ওইদিন মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি।

হাতিয়া উপকূলে আঘাত হানান ১৯৯১ ও ১৯৯৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভেড়িবাঁধের অবস্থা নড়বড়ে হলেও সংস্কার নেই দীর্ঘ এক যুগ ধরে। এই এলাকার জনগণ ভেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো কাজে আসেনি, যার ফলে এলাকার জনগণের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ২৩ বছর অতিবহিত হয়ে গেলেও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আজ পর্যন্ত কোনো টেকসই ভেড়িবাধ নির্মাণ না হওয়ার ফলে আতংকে দিন কাটাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০৬:৫১   ৪০৪ বার পঠিত