রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৪

বরেণ্য সংগীতশিল্পী বশির আহমেদ আর নেই

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » বরেণ্য সংগীতশিল্পী বশির আহমেদ আর নেই
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৪



ppp.jpgডেস্কঃজ্বালো/ ঢালো আরও ব্যথা ঢালো, আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভাল, কাঁকন কার বাজে রুমঝুম, সজনী গো ভালবেসে এত জ্বালা কেন বল না, অনেক সাধের ময়না আমার, আমার খাতার প্রতি পাতায়, পিঞ্জর খুলে দিয়েছি, যা কিছু কথা ছিল ভুলে গিয়েছি’র প্রিয় শিল্পী বশীর আহমেদ ভালবাসার বাঁধন কেটে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন। বরেণ্য এ সংগীতশিল্পী শনিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৪। বশির আহমেদের ছেলে রাজা বশির জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার ও হৃদরাগে ভুগছিলেন।রোববার সকাল ১০টায় মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লা জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাজমহল রোডের গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। দিল্লির সওদাগর পরিবারের সন্তান বশির আহমেদ ১৯৩৯ সালের ১৯শে নভেম্বর কলকাতার খিদিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নাসির আহমেদ। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি সংগীত পাগল ছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ওস্তাদ বেলায়েত হোসেনের কাছে সংগীত চর্চা শুরু তার । এরপর তিনি বোম্বে (বর্তমান মুম্বই) চলে যান, সেখানে উপমহাদেশের প্র্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁর কাছে তালিম নেন। তার কাছ থেকে বশির আহমেদ প্রচুর অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন কবি এবং গীতিকার। চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তাফিজ তার ‘সাগর’ ছবির জন্য গান লিখতে বশির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বশির আহমেদ সেই ছবির গান লেখেন এবং চমৎকারভাবে গেয়েছিলেন ‘জো দেখা প্যায়ার তেরা’ শীর্ষক গানটি। একইভাবে রবিন ঘোষও তার ছবির গান লেখার জন্য বশির আহমেদকে অনুরোধ করেন। ১৯৬৪ সালে ‘কারোয়ান’ ছবির জন্য বশির আহমেদ গান লিখেছিলেন এবং অসাধারণ গেয়েছিলেন। ‘যব তোম একেলে হোগে হাম ইয়াদ আয়েঙ্গে’ শিরোনামের এ গানটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। রেডিও পাকিস্তানে ষাটের দশকে সবচেয়ে বেশি বাজতো গানটি। তার গাওয়া গানসমৃদ্ধ ছবিগুলোর মধ্যে ‘সাগর’, ‘কারোয়ান’, ‘ইন্ধন’, ‘কঙ্গন’, ‘দর্শন’ এবং ‘মিলন’ উল্লেখযোগ্য।

শবনম ও রহমান অভিনীত ‘দর্শন’ ছবিতে বশির আহমেদ গেয়েছেন গান ‘তুমহারে লিয়ে ইস দিলমে যিতনি মোহাব্বত হ্যায়’। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশের বিখ্যাত এ গায়ক বাঙালি ছিলেন না, এমনকি তিনি বাংলা ভাষাও জানতেন না। তিনি ছিলেন দিল্লীর সওদাগর পরিবারের সন্তান। ১৯৬০ সালে তিনি কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। বশির আহমেদ ভারতের অধিবাসী হয়েও বাংলাদেশে এসে গানের সুর ছড়িয়ে ভক্তদের মুগ্ধ করেন।

এ দেশের সব সেরা নারী শিল্পীর সঙ্গে গান গেয়েছেন তিনি। ‘মনের মতো বউ’ (১৯৬৯) ছবিতে খান আতার কথা এবং সুর সংযোজনায় বশির আহমেদ এবং সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে চমৎকার একটি গান হচ্ছে ‘আহা কী যে সুন্দর হারিয়েছে অন্তর, ভাষা নেই, নেই ভাষা নেই’। ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ ছবিতে গানের জন্য ২০০৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গায়ক) পান বশির আহমেদ। ষাটের দশকের শুরুতে তিনি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার আগেই উর্দু চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। ওই সময়ই শিল্পী হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তার কণ্ঠ ছিল মাধুর্যে ভরা। রাগসংগীতেও দখল ছিল তার। ‘তালাশ’ চলচ্চিত্রে বিখ্যাত শিল্পী তালাত মাহমুদের সঙ্গে কাজ করেন। রেডিও পাকিস্তানেও গান গেয়েছেন তিনি। একাধারে সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক বশির আহমেদ একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভাল’, ‘পিঞ্জর খুলে দিয়েছি’, ‘ডেকো না আমাকে তুমি কাছে ডেকো না’, ‘সবাই আমায় প্রেমিক বলে’, ‘ওগো প্রিয়তমা’, ‘খুঁজে খুঁজে জনম গেল’, ‘ঘুম শুধু ছিল দুটি নয়নে’, ‘কাঁকন কার বাজে রুমঝুম’, ‘আমাকে যদি গো তুমি’ ইত্যাদি। বিটিভির প্রারম্ভিক সময়কাল থেকেই সংগীত বিভাগের অন্যতম কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একাধিক গানের অনুষ্ঠানের রূপকার ও পরিচালক ছিলেন বশির আহমেদ।

একপর্যায়ে কিছু অভিমানে দীর্ঘকাল বিটিভি থেকে দূরে ছিলেন বরেণ্য এই শিল্পী। বশির আহমেদ নিজস্ব শিল্পীসত্তা ছাড়া একজন বিশিষ্ট সংগীত গুরু হিসেবেও অমর থাকবেন যুগ যুগ। তার প্রত্যক্ষ শিষ্য এ দেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা, শাকিলা জাফরসহ অনেকেই। বশির আহমেদের স্ত্রী মীনা বশির, ছেলে রাজা বশির ও মেয়ে হুমায়রা বশির সংগীতের সঙ্গে যুক্ত। বশির আহমেদের মৃত্যুতে সংগীত ও চলচ্চিত্রজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৭:৫৮   ৩৯৮ বার পঠিত