সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৪
বাংলা নববর্ষ স্বাগত ১৪২১ বঙ্গাব্দ
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » বাংলা নববর্ষ স্বাগত ১৪২১ বঙ্গাব্দতমালঃডেস্করিপোর্টঃপ্রকৃতিতে ধীরে ধীরে এসে পড়ল খরতপনের রুদ্রতাপফাগুন বিদায় নিল তার সব রূপ-রং নিয়ে।এসে গেল আরেক বৈশাখ। মহাকালের রথ তার যাত্রাপথে পেরিয়ে গেল ১৪২০ বঙ্গাব্দের সীমানা। আজ সোমবার, পহেলা বৈশাখ, ১৪২১ বঙ্গাব্দ।আজ থেকে আরেকটি নতুন বছরের পরিক্রমা শুরু হলো বাঙালির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিতে। বাংলা ভাষাভাষীর জীবনে এলো এক উত্সবের রঙিন দিন। ভয়ংকর-সুন্দর কালবৈশাখী ঝড় আসুক বা না আসুক, আজ সকালটা জেগে উঠবে নতুন সূর্যের নতুন আলোয়; দিনভর সারাটা দেশ মেতে রইবে নাচে-গানে, উৎসবে-আমোদে। বাঙালির হূদয়জুড়ে ‘টাকডুম টাকডুম’ তালে বেজে চলবে ‘বাংলাদেশের ঢোল’।
বাঙালি জাতির বর্ষবরণ আহা কী আনন্দের! ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই উৎসবের রঙে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এদিন শুধু আনন্দ-উচ্ছ্বাসই নয়, সব মানুষের জন্য কল্যাণ কামনারও দিন। সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়েই মহাধুমধামের সঙ্গে বাঙালি উদ্যাপন করে নববর্ষ। একে অন্যকে বলি-শুভ নববর্ষ।
বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসবও। প্রতিবছর এ উত্সব বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে বিপুল থেকে বিপুলতর হয়ে উঠছে। পহেলা বৈশাখ ছাড়া এত বড় সর্বজনীন উৎসবের উপলক্ষ বাঙালির আর নেই। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে জাতিসত্তার পরিচয়কে নতুন তাত্পর্যে উপলব্ধি করে গৌরব বোধ করে। এই গেৌরব ও চেতনাই বাঙালিকে প্রেরণা জোগায় আপন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
রাজধানীসহ সারা দেশের সব বয়সী মানুষ সাড়ম্বরে উৎসবে, আনন্দে মেতে উঠবে আজ। পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া, গানবাদ্য-সব কিছুতেই প্রাধান্য পাবে বাঙালিয়ানা। আড্ডা, আমন্ত্রণ, উচ্ছ্বাসে কেটে যাবে দিন-রাত। ঢাকাবাসীর গত্বঁধা জীবনযাত্রায় যোগ হবে ভিন্নতার স্বাদ। খুব সকালেই নগরবাসী ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে সুসজ্জিত হয়ে। মেয়েরা পরবে লাল-সাদা শাড়ি, পুরুষের পরনে নকশা করা পাঞ্জাবি-ফতুয়া। মা-বাবার সঙ্গে উত্সবে যোগ দিয়ে আনন্দে মেতে উঠবে শিশু-কিশোরের দল।
সকাল থেকেই মানুষ দলে দলে যোগ দেবে রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতি গানের আসরে, চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রায়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণে, রবীন্দ্রসরোবরে গানের আসরে, বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী মেলায়। শহরজুড়ে থাকবে আরো নানা আয়োজন। নবীন গ্রীষ্মের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে পথে পথে ঘুরে, কখনো বা রমনা-সোহরাওয়ার্দী-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গাছতলায় জমে উঠবে তুমুল আড্ডা।
নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। দেশবাসীর সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নববর্ষ উপলক্ষে আজ সোমবার সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। নির্বিঘ্নে উত্সব পালনে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সমতলের মানুষের পাশাপাশি দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোও উদ্যাপন করছে তাদের ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য উৎসব ‘বৈসাবি’।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উৎসবের সাজে সেজেছে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর-নগর-বন্দর। জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার হাটবাজারেও আজ হালখাতা উত্সবের আমেজ। বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলাসহ নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রাজধানীতে বর্ষবরণ মানেই যেন রমনার বটমূল। বর্ষবরণ মানেই ছায়ানট। আজ ভোর ৬টায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই বাজবে ভোরের রাগ-আলাপ। এরপর পরিবেশন করা হবে ছায়ানট শিল্পীদের সম্মিলিত গান। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের পহেলা বৈশাখের মঞ্চটি দৈর্ঘযে ৫৪ ফুট, পেছনের অংশটি ৪২ ফুট। আর প্রস্থে ২৪ ফুট। অর্থাৎ বরাবরের মতোই বিশাল মঞ্চ। এই মঞ্চেই বসবেন ১৫০ জনের মতো শিল্পী। এবার ছেলেদের পোশাক নির্বাচন করা হয়েছে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। অফ হোয়াইট শাড়ি নির্বাচন করা হয়েছে মেয়েদের জন্য। আয়োজনের এবারের ভাবনা- ‘সম্প্রীতি ও স্বদেশ।’ জানা যায়, অনুষ্ঠানের সূচনা করা হবে রাজরূপা চৌধুরীর সরোদবাদনের মধ্য দিয়ে। পুরো আয়োজনে থাকবে বেশ কয়েকটি সম্মেলক গান। একক গান করবেন মিতা হক, খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, সত্যম দেবনাথ, লাইসা আহমদ লিসা, সৈকত মুখার্জি, মহিউজ্জামান চৌধুরী, সুমা রাণী রায়, শারমিন সাথী ইসলাম প্রমুখ। আবৃত্তি করবেন মাহিদুল ইসলাম ও ফেরদৌস আরা খানম। সব শেষে যথারীতি থাকবে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের বক্তব্য। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতা করবেন সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের এই পুরোধা।
‘জাগ্রত করো উদ্যত করো নির্ভয় করো হে’-স্লোগান বুকে ধারণ করে আজ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। লোকজ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার এসব অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সরকারি উদ্যোগে বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলায় আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও গ্রামীণ লোকজ মেলা। কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানায়) উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে আজ।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা। ‘হাজারও কণ্ঠে কোটি বাঙালির বর্ষবরণ’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের সূচনা হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভোর ৬টায়। একটানা চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আজ সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির মুক্তমঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, কাব্যনাট্য, পটগান, বাউল গান ও বৈশাখী মেলার।
বাংলা একাডেমিতে শুরু হবে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। নজরুল মঞ্চে সকাল সাড়ে ৭টায় বর্ষবরণ সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ আয়োজন। একাডেমি প্রাঙ্গণে কারুশিল্প মেলার আয়োজন করেছে বিসিক। মেলা উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁও, রূপসী বাংলা, র্যাডিসন, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সি, খাজানাসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর উদ্যোগে উদ্যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের উদ্যোগেও উদ্যাপিত হবে পহেলা বৈশাখ।
মোবাইল অপারেটর কম্পানিগুলোর উদ্যোগে নববর্ষের প্রথম দিনে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাংলালিংক ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, যশোর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটে একযোগে উত্সবের আয়োজন করেছে। এয়ারটেল ও রবি সব জেলায় আয়োজন করেছে বৈশাখী উৎসব। দুপুর থেকে রাত অবধি কনসার্টের আয়োজন করেছে ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক। ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে বিকেল ৪টায় লোকসংগীত আসরের আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী বর্ষবরণ উত্সব। জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু একাডেমি, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। শিশু-কিশোরদের সংগঠন সারগাম ললিতকলা একাডেমি সংগীত ও আলোচনার আয়োজন করেছে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগেও উদ্যাপিত হবে নববর্ষ। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকাল ৭টায় বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য সংগঠন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করছে বাংলা নববর্ষকে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৬:৪০ ৬৫০ বার পঠিত