শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০১৪

সংসদে বিরোধী দলের প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী

Home Page » জাতীয় » সংসদে বিরোধী দলের প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০১৪



pmjs-10042014.jpgরাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃ বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কার্যক্রমের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলটি ‘যথাযথ’ ভূমিকা পালন করছে।বৃহস্পতিবার দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি আগের বিরোধী দল বিএনপির ভূমিকার সমালোচনাও করেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পর বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে প্রথমেই তাকে ধন্যবাদ জানান সংসদ নেতা হাসিনা।

রওশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সরকারের কিছু হলে সমালোচনা করবেন। আর, সরকারকে সহায়তা করা বিরোধী দলের দায়িত্ব।

“আমাদের বিরোধী দল যথাযথভাবে তা করে যাচ্ছে এবং তারা সংসদে আছে।”
“আমি বলি, কারা বিরোধী দল? যারা সংসদে তারাই বিরোধী দল। যারা পার্লামেন্টে নেই, তারা শুধুই একটি রাজনৈতিক দল,” বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

বিএনপির বয়কটের মধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দশম সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি।

একইসঙ্গে তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দেয়ায় বিরোধী দল হিসেবে তাদের সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সমাপনী ভাষণে রওশন বলেন, তারা বিরোধী দল হিসেবে সরকারের শুধু বিরোধিতা করতে চান না, দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চান।

প্রধানমন্ত্রীও সরকারের নেতিবাচক কাজের সমালোচনার পাশাপাশি সরকারকে সহায়তার জন্য জাতীয় পার্টির প্রতি আহ্বান জানান।

“আমরা চাই, বিরোধী দল জনগণের মনের কথা তুলে ধরবে। সরকারের সমস্যা থাকলে তা তুলে ধরবে।”

৪১৮ দিনের নবম জাতীয় সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ১০ দিন উপস্থিত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে হাসিনা বলেন, “সদস্য পদ রক্ষা করতে আসত। সেই বিরোধীদল থাক আর না থাক, কী আসে যায়?

“বরং আমি বর্তমান বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানাই।”
খাদ্য ভেজালমুক্ত করতে দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

‘রিভার ক্রুজে’ গিয়ে নদী দূষণের কারণে প্রধানমন্ত্রীকে নাকে রুমাল চাপতে হয়েছিল বলে রওশন বলেছিলেন।

হাসিনা বলেন, “”এটা রিভারক্রুজ না, আমি স্টিমার সার্ভিস উদ্বোধন করতে যাই। আমি জোর করেই যাই, দেখতে। আগে যারা ছিল, তারা শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিলে এটা (দূষণ) হত না।”

বঙ্গবন্ধুকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলায় সংসদে সরকারদলীয় সব সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমানের তীব্র সমালোচনা করলেও শেখ হাসিনা এবিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি।

তিনি শুধু বলেন, “যারা স্বাধীনতা চায় না, যারা পরাজিত শক্তির পদলেহন করে, তারাই নানা রকম কথা বলছে। তারা বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন কথা বলবেই। এদের কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যে দেশবাসীকে আহ্বান জানাই।”

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে যখন সব কিছু জানা যায়, তখন ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চালিয়েও ফল হবে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক সম্প্রতি লন্ডনে দুটি সভায় স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে বিতর্কিত দুটি বক্তব্য দেন।

একটিতে তিনি জিয়াকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে দাবি করেন; দ্বিতীয়টিতে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’।

এপ্রিলের এই দিনে সংসদে বক্তব্যে একাত্তরের এই মাসের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।

স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “৭০ এর নির্বাচনের জনপ্রতিনিধিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার গঠন করেন ১০ এপ্রিল। ১৭ এপ্রিল শপথ হয় মুজিবনগরে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। ১১ এপ্রিল ওসমানীকে সেনাপ্রধান করা হয়।”

হাসিনা বলেন, ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে লন্ডনে যান এবং ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

“১১ তারিখে হেয়ার রোডে তাজউদ্দীন সাহেবের বাসায় ক্যাবিনেটের মিটিং হয়। তখন মন্ত্রিসভাশাসিত সরকারের সিদ্ধান্ত হয়।”

সংসদীয় গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনে বঙ্গবন্ধুর আদেশটি সংসদে পড়েও শোনান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার ব্যবস্থা চালুর প্রতিটি গেজেট পড়ে শুনিয়ে এগুলো সংরক্ষণের জন্য স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সেনা কর্মকর্তা জিয়ার ক্ষমতারোহনের ইতিহাস তুলে ধরে হাসিনা বলেন, “বেইমান, মোনাফেক, খুনি খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানান।

“আর জিয়াউর রহমান অস্ত্রের মুখে সায়েম সাহেবকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করে। এভাবেই জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর শত শত মুক্তিযোদ্ধা সদস্যকে হত্যার অভিযোগ তুলে হাসিনা বলেন, “নাস্তার টেবিলেও জিয়াউর রহমান মৃত্যুদণ্ডাদেশে সই করত।”

বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৭:২৭   ৩৬৯ বার পঠিত