বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৪

স্নায়ু-যুদ্ধটাই গুরুত্বপূর্ণ-সৌরভ

Home Page » ক্রিকেট » স্নায়ু-যুদ্ধটাই গুরুত্বপূর্ণ-সৌরভ
বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৪



image.jpgবঙ্গ-নিউজ :শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দু’টো দলই অসাধারণ ক্রিকেট খেলে শেষ চারে জায়গা করে নিল। যেটা দেখে সবচেয়ে ভাল লাগছে, টুর্নামেন্টে যে চারটে দল ফর্মের বিচারে সেরা জায়গায়, সেই চারটে দলই যোগ্যতার জোরে শেষ চারে খেলবে।

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ১১৯ রানে ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা নিশ্চয়ই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু প্রবল চাপের মুখে ওদের স্পিনাররা যে ভাবে দলকে জেতাল তার কোনও তারিফই যথেষ্ট নয়। এটা ঠিক যে ওরা উইকেটের সাহায্য পেয়েছে। এটাও ঠিক টুর্নামেন্টের ধরনটা এমন যে একই কেন্দ্রে পরপর খেলা হচ্ছে এবং যত সময় যাচ্ছে উইকেট তত শুকিয়ে খটখটে হচ্ছে এবং প্রত্যেক ম্যাচে স্পিনারদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবু বলব, চার ওভারে পাঁচ উইকেট নেওয়াটা বিশাল কৃতিত্বের। রঙ্গনা হেরাথ যে বোলিংটা সে দিন করল, সেটা এক কথায় অসাধারণ। এ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এসপার-ওসপার লড়াইটা জেতার জন্যও ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে চান্দিমলরা।

অন্য দিকে, দুরন্ত ছন্দে আছে ক্যারিবিয়ানরা। বিশেষ করে ওদের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। অস্ট্রেলিয়ার পর পাকিস্তান ম্যাচে আরও একটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দিল স্যামি। এই মুহূর্তে ওর দারুণ ব্যাটে-বলে হচ্ছে। দু’টো ইনিংসেই যে ভাবে বোলারদের নির্মম পেটাল, দেখে তাজ্জব হয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে প্রশংসনীয় হল, দু’টো পুরোপুরি আলাদা পিচ, আলাদা পরিবেশে একই রকম আক্রমণাত্মক থেকে পেস এবং স্পিন, দু’ধরনের বোলিংই সমান দক্ষতায় সামলাল স্যামি। ব্যাটসম্যান হিসাবে ওর প্রতিভা হয়তো তাক লাগানো নয় কিন্তু ক্রিকেটটা অসম্ভব আবেগ দিয়ে খেলে। সঙ্গে খুব জেদি আর একাগ্র। চাপের মুখে এই জেদ আর আবেগটা ওর ব্যাটিংয়ে ফুটে ওঠে। শেষ দু’টো ম্যাচে স্যামি বলতে গেলে প্রায় একার চেষ্টায় দলকে জিতিয়েছে। আজ মিরপুরে শ্রীলঙ্কার সামনে সবচেয়ে বড় বিপদের নামটা স্য্যমিই হবে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলঙ্কা শেষ মুখোমুখি হয়েছিল দু’বছর আগের ফাইনালে। সে বার কলম্বোর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার মাথা হেঁট করে দিয়ে ট্রফি জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা। গত দু’বছরে দু’পক্ষের টিম কম্বিনেশনে পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই। তাই প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তাটা তাতিয়ে রাখবে শ্রীলঙ্কাকে। আরও একটা ব্যাপার রয়েছে। দুই মহাতারকা মাহেলা জয়বর্ধনে আর কুমার সঙ্গকারার এটাই শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জিতে বিদায় নেওয়ার জন্য নিজেদের সবটুকু নিংড়ে দেবে এই দুই চ্যাম্পিয়ন।

এর বাইরে দু’টো টিমেই মিরপুরের মন্থর, ঘূর্ণি উইকেটের ফায়দা তোলার মতো জাত স্পিনার রয়েছে। ব্যাটিংয়েও লড়াইটা সমানে সমানে। তাই আমার ধারণা, ডেথ ওভারগুলোয় মালিঙ্গা আর সান্তোকির ভূমিকা আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সান্তোকিকে দলে রাখা নিয়ে অনেক কথা উঠেছিল। ছেলেটা কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করে দিল।

দু’টো দলেই খুব একটা পরিবর্তন দেখছি না। এক ম্যাচের নির্বাসন কাটিয়ে ফিরবে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চান্দিমল। তবে কুশল পেরেরাকেও টপ অর্ডারে রাখার চেষ্টা করা উচিত শ্রীলঙ্কার। প্রতিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে ওর মতো বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানকে আজ দরকার।

খুব সামান্য হলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে থাকছে ছোট একটা তথ্য। টুর্নামেন্টে এই প্রথম মিরপুরের পিচে খেলবে ওরা। তবে আমার মনে হয় সেটা সমস্যা হবে না। গত মাসেই এখানে খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নদের উইকেটের মন্থর গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া শ্রীলঙ্কায় বেশির ভাগ পিচই এই ধরনের, মন্থর এবং বল পড়ে ঘোরে। আজ তাই ক্রিকেটীয় দক্ষতার পাশাপাশি স্নায়ু-যুদ্ধটাও গুরুত্বপূর্ণ। ফাইনালের দরজা খোলার জন্য কিন্তু এই দু’টো লড়াই-ই জিততে হবে!

যায়েদ হাসান সম্রাট, বঙ্গ-নিউজ।

বাংলাদেশ সময়: ১১:০৪:৩৩   ৪৩৮ বার পঠিত